০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মস্তিষ্কের সুরক্ষায় অসচেতনতা  বা অযত্ন চরম বিপর্যয় ডেকে আনে

  • প্রকাশিত ০১:২৯:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
  • ২১ বার দেখা হয়েছে

সুমি খান

বিশ্বব্যাংক WHO এর তথ্য অনুযায়ী মস্তিষ্কের সুরক্ষায় অসচেতনতা  বা অযত্নে স্ট্রোক, মাইগ্রেন, ডিমেনশিয়া, মেনিনজাইটিস, এপিলেপসি সহ নিউরোলজিকাল কারণে সারা বিশ্বে বছরে ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

যার ৭০% নিম্ন  ও মধ্য আয়ের দেশের। বলা বাহুল্য,  আমরা ও তার তালিকাভুক্ত।
একটু সচেতন হলে, এ ধরণের বিপন্নতা থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি, স্বজনদের সুরক্ষা দিতে পারি। সতর্ক হতে হবে মস্তিষ্কের সুরক্ষায়।
২২ জুলাই বিশ্ব মস্তিষ্ক দিবস। তবে,  দিবস গুণে বসে না থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে  সচেতনতার বার্তা ছড়াতে হবে প্রত্যেককে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার্স অ্যান্ড স্ট্রোকসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন সূত্রে প্রকাশিত বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যসমূহ তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO সতর্ক করে মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে জানায়, মানুষের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য  সুরক্ষা মস্তিষ্কের ব্যাধি হ্রাস করে।মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য হল জ্ঞানীয়, সংবেদনশীল, সামাজিক-সংবেদনশীল, আচরণগত এবং মোটরডোমেন জুড়ে মস্তিষ্কের কার্যকারিতার সুরক্ষা- যা একজন ব্যক্তিকে তার  মানসিক, শারীরিক নিরাপত্তা উপলব্ধি করতে শিক্ষা দেয়। কিন্তু ,কীভাবে আপনার মস্তিষ্কের সুরক্ষা এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখবেন?আপনার মস্তিষ্কের বিকাশ, স্ট্রেস ও প্রতিকূলতা ঠেকিয়ে  মস্তিষ্কের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শারীরিক স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিরাপত্তা আজীবন শিক্ষা এবং সামাজিক সংযোগ মানসম্পন্ন পরিসেবা নিশ্চিত করা জরুরি।মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি নিশ্চিত করলে সমাজের নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা, ইতিবাচক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব তৈরি  তথা বৃহত্তর কল্যাণে অবদান রাখে এবং সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়।সাধারণভাবে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের  যে ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়- *মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা*মস্তিষ্কের গঠনের ক্ষতি*মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ব্যাহততবে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার গবেষণায় প্রকাশ, মস্তিষ্কের সুরক্ষায় অবহেলাজনিত কারণে  মানুষ সবচেসবচেয়ে বেশি হয় – স্ট্রোক, মাইগ্রেন, ডিমেনশিয়া, মেনিনজাইটিস, মৃগী রোগ।
নিজেদের নিরাপদ সুস্থ জীবনের স্বার্থে  মস্তিষ্ক সুরক্ষা বিধি অনুসরণ করুন দৈনন্দিন জীবনে।
 অনেকেই ঘরবন্দী থাকেন নানা কারণে, বাইরে বেরুতে তারা অনাগ্রহী।
অন্ধকার ঘরে শুয়ে বা বসে হেডফোনে চড়া ভলিউমে গান শুনে নিজের হতাশা বা মানসিক চাপ ভুলে থাকবার চেষ্টা করেন। অথবা অবসর সময় কাটান। তারা নিজেই নিজেদের মস্তিষ্কের সমূহ ক্ষতি করে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তারা চরম সংকটে।
মস্তিষ্কের ক্ষতিকারক ১১টি বদভ্যাস এবং সেই ক্ষতি থেকে বেরিয়ে আসবার পরামর্শ ব্যাখ্যা সহ তুলে ধরা হলো এই নিবন্ধে।
১. অপর্যাপ্ত ঘুম মস্তিষ্কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকরে-
যুক্তরাষ্ট্রের প্রিমিয়ার নিউরোলজি অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারের গবেষণা মতে,মানুষের মস্তিষ্কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে। পর্যাপ্ত ঘুম বলতে ২৪ ঘণ্টায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমকে বোঝানো হয়-ছবিপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ঘুম বলতে ২৪ ঘণ্টায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। রাতে নিরবচ্ছিন্ন ঘুম সবচেয়ে বেশি কার্যকর।ঘুমানোর সময় মস্তিষ্ক বিশ্রাম নেয়। সে সময়ে বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার করে নতুন কোষ তৈরি করে মস্তিষ্ক।৭ ঘণ্টার কম ঘুম হলে নতুন কোষ গঠন সম্ভব হয় না। এ কারণে মানুষের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়,কিছু মনে থাকে না, কাজে মনঃসংযোগ ঘটানো কঠিন হয়,উগ্র,খিটখিটে মেজাজ হয়ে যায়, যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়।ঘুমের অভাবে ডিমেনশিয়া এবং অ্যালঝেইমার্সের ঝুঁকি বেড়ে যায়।সুতরাং নিজের শরীর এবং মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে আপনার মস্তিষ্ককে রক্ষা করতে হবে। আর তার জন্যে রাত জাগা পরিহার করে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে এবং ভোরে জাগতে হবে।  কমপক্ষে সাত ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তবে, আট ঘণ্টা ঘুমাতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে বিছানায় যেতে হবে। মোবাইল বা টেলিভিশন বা কোন ডিভাইস ব্যবহার পরিহার করতে হবে।
ঘুমের জন্য শান্ত, কম আলোর  পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রতি রাতে শোবার ঘর, পোশাক, বিছানা, বালিশ,মশারি সবই পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। দাঁত ব্রাশ করে, মাথা আঁচড়ে,ঘরের আলো কমিয়ে শুয়ে পড়বেন। বিছানা, পোশাক, ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক হতে হবে। বিশেষ ভাবে মনে রাখবেন, কখনও মাথা ঢেকে ঘুমানো যাবে না। কারণ মাথা ঢাকলে মাথার চারপাশে অক্সিজেনের পাশাপাশি প্রশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসা কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস জমে যায়।
কার্বন ডাই অক্সাইডের মিশ্রণ নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। এতে জীবন সংশয় দেখা দেয়। ছবি-অনেকেই সকালে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নাস্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ এড়িয়ে যান, যা অনুচিত।
২. সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাওয়া চরম ক্ষতিকর
রাতের খাবারের পর লম্বা সময় মানুষ না খেয়ে থাকে। দিনে কাজ করার শক্তি আসে সকালের নাস্তা থেকে।অনেকেই সকালে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নাস্তা খেতে চান না। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়। এর প্রভাব গিয়ে পড়ে মস্তিষ্কে।দিনের পর দিন নাস্তা না খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের ক্ষয় হতে থাকে; মস্তিষ্কের কোষগুলো কার্যকারিতা হারায়।এতে পুষ্টির অভাবে স্বাভাবিক কাজ করা মানুষের জন্য দুরূহ হয়ে পড়ে।৩. পর্যাপ্ত পানি পান না করা- মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে এবং  যথাযথ কাজ করার জন্য মস্তিষ্ককে আর্দ্র রাখা জরুরি।পানির অভাবে মস্তিষ্কের টিস্যু সঙ্কুচিত হয়ে যায় ও কোষগুলো কার্যক্ষমতা হারায়। অনেকেই জানেন না বা মনে রাখেন না,মানুষের মস্তিষ্কের ৭৫% পানি। এ কারণে মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে হলে মস্তিষ্ককে আর্দ্র রাখা জরুরি।পানির অভাবে মস্তিষ্কের টিস্যু সঙ্কুচিত হয়ে গেলে মস্তিষ্কের কোষগুলো কার্যক্ষমতা হারায়।
এতে বাস্তবতাবোধ, যৌক্তিক চিন্তা বা সময়োযযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দিনে কমপক্ষে দুই লিটার পানি পান জরুরি। তবে যে কোন মানুষের ওজন, স্বাস্থ্য, বয়স, জীবনযাত্রা এবং আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে পানির পরিমাণ  কম বেশি  হতে পারে।
৪. অতিরিক্ত কাজের চাপ
মানসিক চাপ-শুয়ে বসে থাকাদীর্ঘসময় প্রচন্ড মানসিক,শারীরিক বা নানান চাপের মধ্যে কাজ করলে মস্তিষ্কের কোষ মৃত হয়ে মস্তিষ্কের সামনে থাকা ফ্রন্টাল কর্টেক্স সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে।এতে মানুষের স্মৃতি ও চিন্তাশক্তি চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। গবেষকদের মতে, যারা কাজের ব্যাপারে ভীষণ খুঁতখুঁতে, অন্যের সাহায্য নিতে ভরসা পান না-অথবা যারা কাউকে ‘না’ বলতে পারেন না, তারা সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপে ভোগেন। তাই মস্তিষ্কের সুরক্ষায় অযথা অতিরিক্ত চাপ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবু যারা অসুস্থ অবস্থাতেও মস্তিষ্কে জোর দিয়ে কাজ করেন, তারা মনে রাখবেন, মানুষের শারীরিক অসুস্থতার সময়ে মস্তিষ্ক তার রোগ প্রতিরোধে ব্যস্ত থাকে।তাই শারীরিক অসুস্থতার সময়ে মস্তিষ্ককে কোন বাড়তি চাপ না দিয়ে বিশ্রাম দিতে হবে। যাতে অন্তত রোগ প্রতিরোধ করে নিরাময়ের পথ সুপ্রসস্ত থাকে। না হলে মস্তিষ্কে এর দীর্ঘমেয়াদী বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং ব্রেন ষ্ট্রোক বা বড়ো রকমের ক্ষতি হবার আশঙ্কা থাকে। অতিরিক্ত চাপ নেয়া যেমন খারাপ, তেমনি দীর্ঘ সময় শুয়ে বসে থাকাও অনেক ক্ষতিকর।অনেক কাজের ধরণ এমন,সারাদিন বসে কাজ করতে হয়। ছুটির সময়ে তারা শুয়ে বসে দিন কাটান একটু আরাম করবার জন্যে। দুটোই ক্ষতিকর। এতে স্থূলতা, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে,যার প্রভাবে ডিমেনশিয়া হতে পারে। পর্যাপ্ত নড়াচড়া, চলাফেরা বা কায়িক শ্রম অত্যন্ত জরুরি। মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে নিয়মিত  হাল্কা ব্যায়াম,প্রতি আধাঘণ্টা পর পর চেয়ার থেকে উঠে হাঁটুন।  প্রয়োজনে টাইমার সেট করে রাখতে হবে। ন্যুনতম আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘন্টা প্রতিদিন হাঁটতে হবে। চেষ্টা করুন সপ্তাহে অন্তত তিন দিন যেন নিয়মিত আধা ঘন্টা থেকে ৪০ মিনিট হাঁটা হয়।
৫. গুগল সার্চ
অনেকেই ক্যালকুলেটর ছাড়াই ছোটখাটো হিসাব কষে ফেলেন এখনো।অনেকের অনেক ফোন নম্বর মুখস্থ । প্রচুর ভালো বই, জ্ঞানী ব্যক্তিত্বদের জীবনী পড়বার অভ্যাস যাদের ছোটকাল থেকে তৈরি হয়,তাদের সাধারণ জ্ঞানও বেশ সমৃদ্ধ। এই চর্চাগুলো মস্তিষ্কের ব্যায়াম, চিন্তাশক্তি ও স্মরণশক্তিকে দীর্ঘসময় শানিত রাখতে প্রচন্ড সহায়ক। বর্তমান বাস্তবতা ভিন্ন। গুগল সার্চ দিয়ে সহজে কাঙ্খিত প্রশ্বের জবাব পাবার আরামে গুগল বা প্রযুক্তির উপর এই অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা মানুষের মগজের  সৃষ্টিশীলতা বা ধারণক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। মানুষের স্মৃতি ও চিন্তাশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে, বিবেচনাবোধ কমে যায়। মস্তিষ্ক সুস্থ রাখবার জন্যে শান দিতে হয় মস্তিষ্কে। মস্তিষ্ক শাণিত করতে সবকিছু গুগল সার্চ না করে মনে রাখতে চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। সেইসাথে শব্দ-জট খেলা বিভিন্ন ধরনের পাজল মেলানো, সুডোকু সহ নানান ধরণের বুদ্ধিবৃত্তিক খেলায় ব্রেন  ঝালাই করে সক্রিয় রাখতে পারেন।
৬. হেডফোন ব্যবহার, উচ্চ শব্দে গান শোনাহেডফোন বা এয়ারপড ৩০ মিনিটেরও কম সময়ে শ্রবণশক্তির অনেক ক্ষতি করে ফেলে। জোরে জোরে গান শুনলে কিংবা উচ্চ শব্দের মধ্যে থাকলে শ্রবণের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়।  সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হল শ্রবণশক্তির যে ক্ষতি হয়ে যায়, সেটা পুনরুদ্ধারের কোন সুযোগ থাকে না। শ্রবণশক্তি কমে গেলে এর সরাসরি প্রভাব মস্তিষ্কে গিয়ে পড়ে। মার্কিন গবেষকদের মতে, শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এতে তাদের আলঝেইমার্স হবার আশঙ্কা বেড়ে যায়। ফলে পড়ালেখা এবং কাজে মনোযোগ দেয়া কষ্টকর হয়ে যায় যে কারো জন্যে। তাই জরুরি না হলে  হেডফোন ব্যবহার বা জোরে ভলিউমে শোনা থেকে নিজে বিরত থাকুন ,স্বজন প্রিয়জনদের বিরত রাখুন।  তবে হেডঢোন জরুরি হয় অনেক সময়ে। তবে ভলিউম ৬০ শতাংশের চেয়ে বেশি কখনো যেন না হয়। তা ছাড়া হেডফোন এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে ব্যবহার করতে হয়, একটানা ব্যবহারে  শ্রবণশক্তি, চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায়। অনেকেই গান শুনে জোরে জোরে মাথা ঝাঁকান বা হেড ব্যাঙ করেন। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল বলেছে এতে মস্তিষ্কের কোষ মরে যায়। মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়। মাইকেল জ্যাকসন বা পপ শিল্পাীদের ক্ষতির কথা স্মর্তব্য।
৭. একাকীত্ব-সামাজিকতায় অনাসক্তি- নানান  মানুষের সাথে  মেশা, কথা বলা, আড্ডা দেয়া-এক কথায় সামাজিকতা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ জরুরি।খুব বেশি সময় একা সময় কাটানো মস্তিষ্কে চরম খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে ,পর্যাপ্ত ঘুম না হলে যতটা ক্ষতি হয়।সামাজিকীকরণের ফলে আমাদের মস্তিষ্ক উদ্দীপ্ত থাকে। যা একা থাকলে হয় না, মস্তিষ্কে শূণ্যতার সৃষ্টি হয়।একাকীত্ব থেকে বিষণ্নতা, উদ্বেগ ভর করে এবং ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমার্স রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়।যদি মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে চান তাহলে নিয়মিত স্বজন,প্রিয় জন, কাছের বন্ধু এবং পরিবারের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করেন। তবে তারা প্রত্যেকে যেন অবশ্যই ইতিবাচক মানসিকতার হন;নেতিবাচকতা সব দিক দিয়ে মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষতি করে-যার প্রভাব পড়ে পরিবারে, সমাজে। কারণ, নেগেটিভ চিন্তার ক্ষতিকর প্রভাব মস্তিষ্কে গিয়ে পড়ে।
৮. নেতিবাচক চিন্তা ও মানুষপ্রতিনিয়ত নেতিবাচক চিন্তার অভ্যাস মানুষকে সকল ইতিবাচকতা থেকে দূরে ঠেলে দেয়ঢ।  কাউকে দিয়ে কিছুই হবে না, বিশ্বের অবস্থা খুব খারাপ, ভবিষ্যৎ অন্ধকার, নিজেকে অভাগা মনে করা নেগেটিভ চিন্তার ক্ষতিকর প্রভাব মস্তিষ্কে গিয়ে পড়ে। কারণ, নেতিবাচক চিন্তা মানসিক চাপ, হতাশা এবং উদ্বিগ্নতা বাড়ায়।মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইলয়েড এবং টাউ জমে যায় এতে। যা ডিমেনশিয়া ও আলেঝেইমার্সের কারণ। এজন্য নেতিবাচক চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে প্রত্যেকের।
নেতিবাচক সঙ্গ এড়িয়ে চলা জরুরি।চেষ্টা করুন অতিরিক্ত নেতিবাচক খবর দেখা থেকে বিরত থাকতে।নেতিবাচকতায় প্রতিনিয়ত বিরাজ করলে ,সেটাই একসময় বদভ্যাস হয়ে যায়, যা চরম ক্ষতিকর। এ বিষয়ে প্রয়োজনে মনোরোগবিদের সাহায্য নিয়ে নিজেকে ইতিবাচকতায় ফেরান। এতে সার্বিকভাবে সুস্থ থাকবে নিজের পরিবার ও পরবর্তী প্রজন্ম।
৯. অন্ধকারে সময় কাটানোমার্কিন এক গবেষণায় প্রকাশ,যারা অন্ধকারে বেশি সময় কাটান, বা দীর্ঘসময় কোন আবদ্ধ স্থানে থাকেন, যেখানে তেমন আলো বাতাস চলাচল করে না- এমন পরিবেশ মস্তিষ্কের ওপর ভীষণ চাপ তৈরি করে।
মস্তিষ্কের জন্য সূর্যের আলোর সংস্পর্শ অত্যন্ত জরুরি।নাহলে ডিপ্রেশনের মতো সংকট তৈরি হতে পারে। তাই মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে প্রতিদিন সূর্যের আলোয় বেরিয়ে পড়ুন বা দরজা জানালা খুলে ঘরের ভেতর সূর্যের আলো আসতে দিন।
১০. খাদ্যাভ্যাস অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস, স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও মস্তিষ্কের ক্ষতি করে।
গবেষণায় প্রকাশ,অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের ধমনীগুলোতে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ কমে যায়।এতে স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাশক্তি লোপ পায়।যার প্রভাবে ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার্স হতে পারে।
জাঙ্ক ফুড, ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, কোমল পানীয়র কারণে মস্তিষ্ক চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়।
পরিমিত ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস জরুরি।
ক্যালরির হিসাব রাখতে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার না করে পুষ্টিবিদের পরামর্শে নিজের বয়স, ওজন অনুযায়ী  ডায়েট তৈরি করে তা মেনে চলা মঙ্গল।
তবে, ডায়েট বলতে চর্বি বাদ দেয়া নয়;মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশই ফ্যাট বা চর্বি। সব ধরণের খাবারই খেতে হবে, তবে পরিমিত।
মদপান ও ধূমপানের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে।
এতে মস্তিষ্কের স্নায়ু সঙ্কুচিত হয়ে যায়, কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস- যেখানে স্মৃতি জমা হয়, সেটা বিকশিত হতে পারে না আর।
যে কারণে আলঝেইমার্স ও ডিমেনশিয়া হবার আশঙ্কা তৈরি হয়। ক্রমান্বয়ে মস্তিষ্কের হাইপোক্সিয়াও হতে পারে
মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে সুষম ডায়েট, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ভাল ঘুম প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর ও সক্রিয় মস্তিষ্ক বজায় রাখার চাবিকাঠি যেসব খাবার রোজকার ডায়েটে রাখা উচিত,  সে সম্পর্কে অনেকে অসচেতন।শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো, মস্তিষ্কের সর্বোত্তমভাবে কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট পুষ্টির প্রয়োজন।সুষম খাদ্য আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ধরনের খাদ্য মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে সহায়ক।
তার কিছু তালিকা তুলে ধরা হলো- 
চর্বিযুক্ত মাছ-
চর্বিযুক্ত মাছ-যেমন স্যামন, ট্রাউট এবং সার্ডিনে উচ্চ মাত্রার ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে।
মানুষের মস্তিষ্কের প্রায় ৬০% সমন্বিত চর্বি আমাদের জ্ঞানীয় সিস্টেমের সঠিক কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সুস্থ মস্তিষ্ক এবং স্নায়ু কোষের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যা অত্যাবশ্যক।
ওমেগা -৩  কোন কিছু শেখার প্রক্রিয়া এবং স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য সর্বোত্তম। চর্বিযুক্ত মাছ নিয়মিত খেলে, মস্তিষ্কে ধূসর পদার্থের বর্ধিত পরিমাণের সঙ্গে যুক্ত হয়। যা আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত। ডায়েটে চর্বিযুক্ত মাছ রাখলে, এটি ব্রেনের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা হিসাবে কাজ করতে পারে।
হলুদ-
হলুদে রয়েছে কারকিউমিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগ। যা, মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
এই সক্রিয় উপাদানটি রক্ত-মস্তিষ্কের বাধা অতিক্রম করে কোষের উপকার করতে সরাসরি মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায়, কারকিউমিন স্মৃতিশক্তির উন্নতি, বিষণ্ণতার উপসর্গ উপশম এবং নতুন মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত। মানসিক স্বাস্থ্যের বহুমুখী গুণের জন্য হলুদ ডায়েটে একটি উপযুক্ত সংযোজন।ব্রকলিব্রকলি পুষ্টির পাওয়ার হাউস। এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন কে রয়েছে। যা, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করে। ভিটামিন কে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেপারে। ব্রকলিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মস্তিষ্কের ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষামূলক প্রভাব ফেলে। এই সবজিতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগও রয়েছে। যা, মস্তিষ্ককে ক্ষতির বিরুদ্ধে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
কুমডার বীজ- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর; ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক এবং কপার সহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজের একটি সমৃদ্ধ উৎস। উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সামগ্রী মস্তিষ্ককে ফ্রি- র‌্যাডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এই প্রয়োজনীয় খনিজগুলি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে। নিয়মিত মস্তিষ্ক এবং শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে পারে।
ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেট এবং কোকো পাউডার ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যাফেইন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো মস্তিষ্ক-উদ্দীপক যৌগ দিয়ে পূর্ণ। ফ্ল্যাভোনয়েড স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং বয়সজনিত মানসিক চাপ ধীরে করতে বেশ জনপ্রিয়। ডার্ক চকোলেটের ক্যাফেইন সামগ্রী স্বল্পমেয়াদী জ্ঞানীয় বৃদ্ধিও প্রদান করে। পরিমিত মাত্রায়, ডার্ক চকোলেট মস্তিষ্ক-স্বাস্থ্যকর খাদ্যের একটি সুস্বাদু এবং উপকারী সংযোজন হতে পারে।
কমলালেবু-
কমলালেবু হল ভিটামিন সি- এর একটি বড় উৎস, যা মানসিক অবক্ষয় রোধ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। কমলালেবুতে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড, জ্ঞানীয় সুবিধা এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উন্নতির সঙ্গে যুক্ত। ডায়েটে কমলালেবু অন্তর্ভুক্ত করলে, আপনি সতেজ, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার উপভোগ করতে পারেন। যা, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে সমর্থন করে।
ডিম-
ডিম হল ভিটামিন বি৬, বি১২, ফোলেট এবং কোলিন সহ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত পুষ্টির চমৎকার উৎস। কোলিন, বিশেষ করে, শরীরের দ্বারা অ্যাসিটাইলকোলিন তৈরি করতে ব্যবহৃত একটি অত্যাবশ্যক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। যা, মেজাজ এবং স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডিম মানসিক সুস্থতা ও স্থিতিশীলতায় উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে পারে।
গ্রীন টি-
গ্রিন টি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যাফেইন  সামগ্রীর জন্য বিখ্যাত। উভয়ই মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে। গ্রিন টি-তে থাকা ক্যাফেইন মেজাজ, সতর্কতা, প্রতিক্রিয়ার সময় এবং স্মৃতি সহ মস্তিষ্কের কার্যকারিতার বিভিন্ন দিক উন্নত করে।
গবেষণায় বলা হয়, প্রতিদিন এক কাপ গ্রীন টি খেলে  উল্লেখযোগ্য জ্ঞানীয় উন্নতি আনতে পারে।
বাদাম
বাদাম-বিশেষ করে আখরোট এবং আমন্ড, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং ভিটামিন ই দ্বারা পরিপূর্ণ। যা, মস্তিষ্ক এবং কোষের ঝিল্লিকে মুক্ত  র‍্যাডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বাদাম খেলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। কারণ এতে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। কিছু বাদামে স্বাস্থ্যকর চর্বি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই রয়েছে। যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ থেকে রক্ষা করতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে বলে প্রমাণিত।
ব্লুবেরি
ব্লুবেরি শক্তিশালী স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিকারী খাবার। ব্লুবেরিতে থাকা উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মস্তিষ্কের বার্ধক্যকে বিলম্বিত করে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাশাপাশি, এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে, যা মস্তিষ্কের কোষগুলির মধ্যে যোগাযোগকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং সামগ্রিক মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে।
জীবন বিপন্নকারী প্রতিটি বদভ্যাস থেকে মুক্ত করুন নিজেকে, স্বজনকে; প্রিয়জন সকলকে।
বাঁচুন মুক্ত হাওয়ায় ইতিবাচকতায়।
০৪ জানুয়ারী ২০২৪

Tag :
জনপ্রিয়

টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ টেজাব এর ৫ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বিজয় নগর হোটেল অরনেটে আলোচনা সভা

মস্তিষ্কের সুরক্ষায় অসচেতনতা  বা অযত্ন চরম বিপর্যয় ডেকে আনে

প্রকাশিত ০১:২৯:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫

সুমি খান

বিশ্বব্যাংক WHO এর তথ্য অনুযায়ী মস্তিষ্কের সুরক্ষায় অসচেতনতা  বা অযত্নে স্ট্রোক, মাইগ্রেন, ডিমেনশিয়া, মেনিনজাইটিস, এপিলেপসি সহ নিউরোলজিকাল কারণে সারা বিশ্বে বছরে ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

যার ৭০% নিম্ন  ও মধ্য আয়ের দেশের। বলা বাহুল্য,  আমরা ও তার তালিকাভুক্ত।
একটু সচেতন হলে, এ ধরণের বিপন্নতা থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি, স্বজনদের সুরক্ষা দিতে পারি। সতর্ক হতে হবে মস্তিষ্কের সুরক্ষায়।
২২ জুলাই বিশ্ব মস্তিষ্ক দিবস। তবে,  দিবস গুণে বসে না থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে  সচেতনতার বার্তা ছড়াতে হবে প্রত্যেককে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার্স অ্যান্ড স্ট্রোকসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন সূত্রে প্রকাশিত বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যসমূহ তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO সতর্ক করে মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে জানায়, মানুষের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য  সুরক্ষা মস্তিষ্কের ব্যাধি হ্রাস করে।মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য হল জ্ঞানীয়, সংবেদনশীল, সামাজিক-সংবেদনশীল, আচরণগত এবং মোটরডোমেন জুড়ে মস্তিষ্কের কার্যকারিতার সুরক্ষা- যা একজন ব্যক্তিকে তার  মানসিক, শারীরিক নিরাপত্তা উপলব্ধি করতে শিক্ষা দেয়। কিন্তু ,কীভাবে আপনার মস্তিষ্কের সুরক্ষা এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখবেন?আপনার মস্তিষ্কের বিকাশ, স্ট্রেস ও প্রতিকূলতা ঠেকিয়ে  মস্তিষ্কের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শারীরিক স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিরাপত্তা আজীবন শিক্ষা এবং সামাজিক সংযোগ মানসম্পন্ন পরিসেবা নিশ্চিত করা জরুরি।মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি নিশ্চিত করলে সমাজের নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা, ইতিবাচক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব তৈরি  তথা বৃহত্তর কল্যাণে অবদান রাখে এবং সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়।সাধারণভাবে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের  যে ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়- *মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা*মস্তিষ্কের গঠনের ক্ষতি*মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ব্যাহততবে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার গবেষণায় প্রকাশ, মস্তিষ্কের সুরক্ষায় অবহেলাজনিত কারণে  মানুষ সবচেসবচেয়ে বেশি হয় – স্ট্রোক, মাইগ্রেন, ডিমেনশিয়া, মেনিনজাইটিস, মৃগী রোগ।
নিজেদের নিরাপদ সুস্থ জীবনের স্বার্থে  মস্তিষ্ক সুরক্ষা বিধি অনুসরণ করুন দৈনন্দিন জীবনে।
 অনেকেই ঘরবন্দী থাকেন নানা কারণে, বাইরে বেরুতে তারা অনাগ্রহী।
অন্ধকার ঘরে শুয়ে বা বসে হেডফোনে চড়া ভলিউমে গান শুনে নিজের হতাশা বা মানসিক চাপ ভুলে থাকবার চেষ্টা করেন। অথবা অবসর সময় কাটান। তারা নিজেই নিজেদের মস্তিষ্কের সমূহ ক্ষতি করে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তারা চরম সংকটে।
মস্তিষ্কের ক্ষতিকারক ১১টি বদভ্যাস এবং সেই ক্ষতি থেকে বেরিয়ে আসবার পরামর্শ ব্যাখ্যা সহ তুলে ধরা হলো এই নিবন্ধে।
১. অপর্যাপ্ত ঘুম মস্তিষ্কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকরে-
যুক্তরাষ্ট্রের প্রিমিয়ার নিউরোলজি অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারের গবেষণা মতে,মানুষের মস্তিষ্কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে। পর্যাপ্ত ঘুম বলতে ২৪ ঘণ্টায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমকে বোঝানো হয়-ছবিপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ঘুম বলতে ২৪ ঘণ্টায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। রাতে নিরবচ্ছিন্ন ঘুম সবচেয়ে বেশি কার্যকর।ঘুমানোর সময় মস্তিষ্ক বিশ্রাম নেয়। সে সময়ে বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার করে নতুন কোষ তৈরি করে মস্তিষ্ক।৭ ঘণ্টার কম ঘুম হলে নতুন কোষ গঠন সম্ভব হয় না। এ কারণে মানুষের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়,কিছু মনে থাকে না, কাজে মনঃসংযোগ ঘটানো কঠিন হয়,উগ্র,খিটখিটে মেজাজ হয়ে যায়, যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়।ঘুমের অভাবে ডিমেনশিয়া এবং অ্যালঝেইমার্সের ঝুঁকি বেড়ে যায়।সুতরাং নিজের শরীর এবং মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে আপনার মস্তিষ্ককে রক্ষা করতে হবে। আর তার জন্যে রাত জাগা পরিহার করে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে এবং ভোরে জাগতে হবে।  কমপক্ষে সাত ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তবে, আট ঘণ্টা ঘুমাতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে বিছানায় যেতে হবে। মোবাইল বা টেলিভিশন বা কোন ডিভাইস ব্যবহার পরিহার করতে হবে।
ঘুমের জন্য শান্ত, কম আলোর  পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রতি রাতে শোবার ঘর, পোশাক, বিছানা, বালিশ,মশারি সবই পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। দাঁত ব্রাশ করে, মাথা আঁচড়ে,ঘরের আলো কমিয়ে শুয়ে পড়বেন। বিছানা, পোশাক, ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক হতে হবে। বিশেষ ভাবে মনে রাখবেন, কখনও মাথা ঢেকে ঘুমানো যাবে না। কারণ মাথা ঢাকলে মাথার চারপাশে অক্সিজেনের পাশাপাশি প্রশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসা কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস জমে যায়।
কার্বন ডাই অক্সাইডের মিশ্রণ নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। এতে জীবন সংশয় দেখা দেয়। ছবি-অনেকেই সকালে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নাস্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ এড়িয়ে যান, যা অনুচিত।
২. সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাওয়া চরম ক্ষতিকর
রাতের খাবারের পর লম্বা সময় মানুষ না খেয়ে থাকে। দিনে কাজ করার শক্তি আসে সকালের নাস্তা থেকে।অনেকেই সকালে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নাস্তা খেতে চান না। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়। এর প্রভাব গিয়ে পড়ে মস্তিষ্কে।দিনের পর দিন নাস্তা না খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের ক্ষয় হতে থাকে; মস্তিষ্কের কোষগুলো কার্যকারিতা হারায়।এতে পুষ্টির অভাবে স্বাভাবিক কাজ করা মানুষের জন্য দুরূহ হয়ে পড়ে।৩. পর্যাপ্ত পানি পান না করা- মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে এবং  যথাযথ কাজ করার জন্য মস্তিষ্ককে আর্দ্র রাখা জরুরি।পানির অভাবে মস্তিষ্কের টিস্যু সঙ্কুচিত হয়ে যায় ও কোষগুলো কার্যক্ষমতা হারায়। অনেকেই জানেন না বা মনে রাখেন না,মানুষের মস্তিষ্কের ৭৫% পানি। এ কারণে মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে হলে মস্তিষ্ককে আর্দ্র রাখা জরুরি।পানির অভাবে মস্তিষ্কের টিস্যু সঙ্কুচিত হয়ে গেলে মস্তিষ্কের কোষগুলো কার্যক্ষমতা হারায়।
এতে বাস্তবতাবোধ, যৌক্তিক চিন্তা বা সময়োযযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দিনে কমপক্ষে দুই লিটার পানি পান জরুরি। তবে যে কোন মানুষের ওজন, স্বাস্থ্য, বয়স, জীবনযাত্রা এবং আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে পানির পরিমাণ  কম বেশি  হতে পারে।
৪. অতিরিক্ত কাজের চাপ
মানসিক চাপ-শুয়ে বসে থাকাদীর্ঘসময় প্রচন্ড মানসিক,শারীরিক বা নানান চাপের মধ্যে কাজ করলে মস্তিষ্কের কোষ মৃত হয়ে মস্তিষ্কের সামনে থাকা ফ্রন্টাল কর্টেক্স সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে।এতে মানুষের স্মৃতি ও চিন্তাশক্তি চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। গবেষকদের মতে, যারা কাজের ব্যাপারে ভীষণ খুঁতখুঁতে, অন্যের সাহায্য নিতে ভরসা পান না-অথবা যারা কাউকে ‘না’ বলতে পারেন না, তারা সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপে ভোগেন। তাই মস্তিষ্কের সুরক্ষায় অযথা অতিরিক্ত চাপ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবু যারা অসুস্থ অবস্থাতেও মস্তিষ্কে জোর দিয়ে কাজ করেন, তারা মনে রাখবেন, মানুষের শারীরিক অসুস্থতার সময়ে মস্তিষ্ক তার রোগ প্রতিরোধে ব্যস্ত থাকে।তাই শারীরিক অসুস্থতার সময়ে মস্তিষ্ককে কোন বাড়তি চাপ না দিয়ে বিশ্রাম দিতে হবে। যাতে অন্তত রোগ প্রতিরোধ করে নিরাময়ের পথ সুপ্রসস্ত থাকে। না হলে মস্তিষ্কে এর দীর্ঘমেয়াদী বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং ব্রেন ষ্ট্রোক বা বড়ো রকমের ক্ষতি হবার আশঙ্কা থাকে। অতিরিক্ত চাপ নেয়া যেমন খারাপ, তেমনি দীর্ঘ সময় শুয়ে বসে থাকাও অনেক ক্ষতিকর।অনেক কাজের ধরণ এমন,সারাদিন বসে কাজ করতে হয়। ছুটির সময়ে তারা শুয়ে বসে দিন কাটান একটু আরাম করবার জন্যে। দুটোই ক্ষতিকর। এতে স্থূলতা, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে,যার প্রভাবে ডিমেনশিয়া হতে পারে। পর্যাপ্ত নড়াচড়া, চলাফেরা বা কায়িক শ্রম অত্যন্ত জরুরি। মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে নিয়মিত  হাল্কা ব্যায়াম,প্রতি আধাঘণ্টা পর পর চেয়ার থেকে উঠে হাঁটুন।  প্রয়োজনে টাইমার সেট করে রাখতে হবে। ন্যুনতম আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘন্টা প্রতিদিন হাঁটতে হবে। চেষ্টা করুন সপ্তাহে অন্তত তিন দিন যেন নিয়মিত আধা ঘন্টা থেকে ৪০ মিনিট হাঁটা হয়।
৫. গুগল সার্চ
অনেকেই ক্যালকুলেটর ছাড়াই ছোটখাটো হিসাব কষে ফেলেন এখনো।অনেকের অনেক ফোন নম্বর মুখস্থ । প্রচুর ভালো বই, জ্ঞানী ব্যক্তিত্বদের জীবনী পড়বার অভ্যাস যাদের ছোটকাল থেকে তৈরি হয়,তাদের সাধারণ জ্ঞানও বেশ সমৃদ্ধ। এই চর্চাগুলো মস্তিষ্কের ব্যায়াম, চিন্তাশক্তি ও স্মরণশক্তিকে দীর্ঘসময় শানিত রাখতে প্রচন্ড সহায়ক। বর্তমান বাস্তবতা ভিন্ন। গুগল সার্চ দিয়ে সহজে কাঙ্খিত প্রশ্বের জবাব পাবার আরামে গুগল বা প্রযুক্তির উপর এই অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা মানুষের মগজের  সৃষ্টিশীলতা বা ধারণক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। মানুষের স্মৃতি ও চিন্তাশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে, বিবেচনাবোধ কমে যায়। মস্তিষ্ক সুস্থ রাখবার জন্যে শান দিতে হয় মস্তিষ্কে। মস্তিষ্ক শাণিত করতে সবকিছু গুগল সার্চ না করে মনে রাখতে চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। সেইসাথে শব্দ-জট খেলা বিভিন্ন ধরনের পাজল মেলানো, সুডোকু সহ নানান ধরণের বুদ্ধিবৃত্তিক খেলায় ব্রেন  ঝালাই করে সক্রিয় রাখতে পারেন।
৬. হেডফোন ব্যবহার, উচ্চ শব্দে গান শোনাহেডফোন বা এয়ারপড ৩০ মিনিটেরও কম সময়ে শ্রবণশক্তির অনেক ক্ষতি করে ফেলে। জোরে জোরে গান শুনলে কিংবা উচ্চ শব্দের মধ্যে থাকলে শ্রবণের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়।  সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হল শ্রবণশক্তির যে ক্ষতি হয়ে যায়, সেটা পুনরুদ্ধারের কোন সুযোগ থাকে না। শ্রবণশক্তি কমে গেলে এর সরাসরি প্রভাব মস্তিষ্কে গিয়ে পড়ে। মার্কিন গবেষকদের মতে, শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এতে তাদের আলঝেইমার্স হবার আশঙ্কা বেড়ে যায়। ফলে পড়ালেখা এবং কাজে মনোযোগ দেয়া কষ্টকর হয়ে যায় যে কারো জন্যে। তাই জরুরি না হলে  হেডফোন ব্যবহার বা জোরে ভলিউমে শোনা থেকে নিজে বিরত থাকুন ,স্বজন প্রিয়জনদের বিরত রাখুন।  তবে হেডঢোন জরুরি হয় অনেক সময়ে। তবে ভলিউম ৬০ শতাংশের চেয়ে বেশি কখনো যেন না হয়। তা ছাড়া হেডফোন এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে ব্যবহার করতে হয়, একটানা ব্যবহারে  শ্রবণশক্তি, চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায়। অনেকেই গান শুনে জোরে জোরে মাথা ঝাঁকান বা হেড ব্যাঙ করেন। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল বলেছে এতে মস্তিষ্কের কোষ মরে যায়। মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়। মাইকেল জ্যাকসন বা পপ শিল্পাীদের ক্ষতির কথা স্মর্তব্য।
৭. একাকীত্ব-সামাজিকতায় অনাসক্তি- নানান  মানুষের সাথে  মেশা, কথা বলা, আড্ডা দেয়া-এক কথায় সামাজিকতা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ জরুরি।খুব বেশি সময় একা সময় কাটানো মস্তিষ্কে চরম খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে ,পর্যাপ্ত ঘুম না হলে যতটা ক্ষতি হয়।সামাজিকীকরণের ফলে আমাদের মস্তিষ্ক উদ্দীপ্ত থাকে। যা একা থাকলে হয় না, মস্তিষ্কে শূণ্যতার সৃষ্টি হয়।একাকীত্ব থেকে বিষণ্নতা, উদ্বেগ ভর করে এবং ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমার্স রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়।যদি মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে চান তাহলে নিয়মিত স্বজন,প্রিয় জন, কাছের বন্ধু এবং পরিবারের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করেন। তবে তারা প্রত্যেকে যেন অবশ্যই ইতিবাচক মানসিকতার হন;নেতিবাচকতা সব দিক দিয়ে মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষতি করে-যার প্রভাব পড়ে পরিবারে, সমাজে। কারণ, নেগেটিভ চিন্তার ক্ষতিকর প্রভাব মস্তিষ্কে গিয়ে পড়ে।
৮. নেতিবাচক চিন্তা ও মানুষপ্রতিনিয়ত নেতিবাচক চিন্তার অভ্যাস মানুষকে সকল ইতিবাচকতা থেকে দূরে ঠেলে দেয়ঢ।  কাউকে দিয়ে কিছুই হবে না, বিশ্বের অবস্থা খুব খারাপ, ভবিষ্যৎ অন্ধকার, নিজেকে অভাগা মনে করা নেগেটিভ চিন্তার ক্ষতিকর প্রভাব মস্তিষ্কে গিয়ে পড়ে। কারণ, নেতিবাচক চিন্তা মানসিক চাপ, হতাশা এবং উদ্বিগ্নতা বাড়ায়।মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইলয়েড এবং টাউ জমে যায় এতে। যা ডিমেনশিয়া ও আলেঝেইমার্সের কারণ। এজন্য নেতিবাচক চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে প্রত্যেকের।
নেতিবাচক সঙ্গ এড়িয়ে চলা জরুরি।চেষ্টা করুন অতিরিক্ত নেতিবাচক খবর দেখা থেকে বিরত থাকতে।নেতিবাচকতায় প্রতিনিয়ত বিরাজ করলে ,সেটাই একসময় বদভ্যাস হয়ে যায়, যা চরম ক্ষতিকর। এ বিষয়ে প্রয়োজনে মনোরোগবিদের সাহায্য নিয়ে নিজেকে ইতিবাচকতায় ফেরান। এতে সার্বিকভাবে সুস্থ থাকবে নিজের পরিবার ও পরবর্তী প্রজন্ম।
৯. অন্ধকারে সময় কাটানোমার্কিন এক গবেষণায় প্রকাশ,যারা অন্ধকারে বেশি সময় কাটান, বা দীর্ঘসময় কোন আবদ্ধ স্থানে থাকেন, যেখানে তেমন আলো বাতাস চলাচল করে না- এমন পরিবেশ মস্তিষ্কের ওপর ভীষণ চাপ তৈরি করে।
মস্তিষ্কের জন্য সূর্যের আলোর সংস্পর্শ অত্যন্ত জরুরি।নাহলে ডিপ্রেশনের মতো সংকট তৈরি হতে পারে। তাই মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে প্রতিদিন সূর্যের আলোয় বেরিয়ে পড়ুন বা দরজা জানালা খুলে ঘরের ভেতর সূর্যের আলো আসতে দিন।
১০. খাদ্যাভ্যাস অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস, স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও মস্তিষ্কের ক্ষতি করে।
গবেষণায় প্রকাশ,অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের ধমনীগুলোতে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ কমে যায়।এতে স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাশক্তি লোপ পায়।যার প্রভাবে ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার্স হতে পারে।
জাঙ্ক ফুড, ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, কোমল পানীয়র কারণে মস্তিষ্ক চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়।
পরিমিত ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস জরুরি।
ক্যালরির হিসাব রাখতে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার না করে পুষ্টিবিদের পরামর্শে নিজের বয়স, ওজন অনুযায়ী  ডায়েট তৈরি করে তা মেনে চলা মঙ্গল।
তবে, ডায়েট বলতে চর্বি বাদ দেয়া নয়;মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশই ফ্যাট বা চর্বি। সব ধরণের খাবারই খেতে হবে, তবে পরিমিত।
মদপান ও ধূমপানের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে।
এতে মস্তিষ্কের স্নায়ু সঙ্কুচিত হয়ে যায়, কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস- যেখানে স্মৃতি জমা হয়, সেটা বিকশিত হতে পারে না আর।
যে কারণে আলঝেইমার্স ও ডিমেনশিয়া হবার আশঙ্কা তৈরি হয়। ক্রমান্বয়ে মস্তিষ্কের হাইপোক্সিয়াও হতে পারে
মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে সুষম ডায়েট, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ভাল ঘুম প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর ও সক্রিয় মস্তিষ্ক বজায় রাখার চাবিকাঠি যেসব খাবার রোজকার ডায়েটে রাখা উচিত,  সে সম্পর্কে অনেকে অসচেতন।শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো, মস্তিষ্কের সর্বোত্তমভাবে কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট পুষ্টির প্রয়োজন।সুষম খাদ্য আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ধরনের খাদ্য মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে সহায়ক।
তার কিছু তালিকা তুলে ধরা হলো- 
চর্বিযুক্ত মাছ-
চর্বিযুক্ত মাছ-যেমন স্যামন, ট্রাউট এবং সার্ডিনে উচ্চ মাত্রার ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে।
মানুষের মস্তিষ্কের প্রায় ৬০% সমন্বিত চর্বি আমাদের জ্ঞানীয় সিস্টেমের সঠিক কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সুস্থ মস্তিষ্ক এবং স্নায়ু কোষের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যা অত্যাবশ্যক।
ওমেগা -৩  কোন কিছু শেখার প্রক্রিয়া এবং স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য সর্বোত্তম। চর্বিযুক্ত মাছ নিয়মিত খেলে, মস্তিষ্কে ধূসর পদার্থের বর্ধিত পরিমাণের সঙ্গে যুক্ত হয়। যা আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত। ডায়েটে চর্বিযুক্ত মাছ রাখলে, এটি ব্রেনের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা হিসাবে কাজ করতে পারে।
হলুদ-
হলুদে রয়েছে কারকিউমিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগ। যা, মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
এই সক্রিয় উপাদানটি রক্ত-মস্তিষ্কের বাধা অতিক্রম করে কোষের উপকার করতে সরাসরি মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায়, কারকিউমিন স্মৃতিশক্তির উন্নতি, বিষণ্ণতার উপসর্গ উপশম এবং নতুন মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত। মানসিক স্বাস্থ্যের বহুমুখী গুণের জন্য হলুদ ডায়েটে একটি উপযুক্ত সংযোজন।ব্রকলিব্রকলি পুষ্টির পাওয়ার হাউস। এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন কে রয়েছে। যা, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করে। ভিটামিন কে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেপারে। ব্রকলিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মস্তিষ্কের ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষামূলক প্রভাব ফেলে। এই সবজিতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগও রয়েছে। যা, মস্তিষ্ককে ক্ষতির বিরুদ্ধে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
কুমডার বীজ- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর; ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক এবং কপার সহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজের একটি সমৃদ্ধ উৎস। উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সামগ্রী মস্তিষ্ককে ফ্রি- র‌্যাডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এই প্রয়োজনীয় খনিজগুলি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে। নিয়মিত মস্তিষ্ক এবং শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে পারে।
ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেট এবং কোকো পাউডার ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যাফেইন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো মস্তিষ্ক-উদ্দীপক যৌগ দিয়ে পূর্ণ। ফ্ল্যাভোনয়েড স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং বয়সজনিত মানসিক চাপ ধীরে করতে বেশ জনপ্রিয়। ডার্ক চকোলেটের ক্যাফেইন সামগ্রী স্বল্পমেয়াদী জ্ঞানীয় বৃদ্ধিও প্রদান করে। পরিমিত মাত্রায়, ডার্ক চকোলেট মস্তিষ্ক-স্বাস্থ্যকর খাদ্যের একটি সুস্বাদু এবং উপকারী সংযোজন হতে পারে।
কমলালেবু-
কমলালেবু হল ভিটামিন সি- এর একটি বড় উৎস, যা মানসিক অবক্ষয় রোধ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। কমলালেবুতে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড, জ্ঞানীয় সুবিধা এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উন্নতির সঙ্গে যুক্ত। ডায়েটে কমলালেবু অন্তর্ভুক্ত করলে, আপনি সতেজ, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার উপভোগ করতে পারেন। যা, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে সমর্থন করে।
ডিম-
ডিম হল ভিটামিন বি৬, বি১২, ফোলেট এবং কোলিন সহ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত পুষ্টির চমৎকার উৎস। কোলিন, বিশেষ করে, শরীরের দ্বারা অ্যাসিটাইলকোলিন তৈরি করতে ব্যবহৃত একটি অত্যাবশ্যক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। যা, মেজাজ এবং স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডিম মানসিক সুস্থতা ও স্থিতিশীলতায় উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে পারে।
গ্রীন টি-
গ্রিন টি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যাফেইন  সামগ্রীর জন্য বিখ্যাত। উভয়ই মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে। গ্রিন টি-তে থাকা ক্যাফেইন মেজাজ, সতর্কতা, প্রতিক্রিয়ার সময় এবং স্মৃতি সহ মস্তিষ্কের কার্যকারিতার বিভিন্ন দিক উন্নত করে।
গবেষণায় বলা হয়, প্রতিদিন এক কাপ গ্রীন টি খেলে  উল্লেখযোগ্য জ্ঞানীয় উন্নতি আনতে পারে।
বাদাম
বাদাম-বিশেষ করে আখরোট এবং আমন্ড, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং ভিটামিন ই দ্বারা পরিপূর্ণ। যা, মস্তিষ্ক এবং কোষের ঝিল্লিকে মুক্ত  র‍্যাডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বাদাম খেলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। কারণ এতে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। কিছু বাদামে স্বাস্থ্যকর চর্বি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই রয়েছে। যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ থেকে রক্ষা করতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে বলে প্রমাণিত।
ব্লুবেরি
ব্লুবেরি শক্তিশালী স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিকারী খাবার। ব্লুবেরিতে থাকা উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মস্তিষ্কের বার্ধক্যকে বিলম্বিত করে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাশাপাশি, এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে, যা মস্তিষ্কের কোষগুলির মধ্যে যোগাযোগকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং সামগ্রিক মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে।
জীবন বিপন্নকারী প্রতিটি বদভ্যাস থেকে মুক্ত করুন নিজেকে, স্বজনকে; প্রিয়জন সকলকে।
বাঁচুন মুক্ত হাওয়ায় ইতিবাচকতায়।
০৪ জানুয়ারী ২০২৪