০৭:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এম. এইচ আকাশ মাহমুদ মোল্লা :

মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা চেকআপ সিন্ডিকেটের ফাঁদে শ্রমিকরা

  • প্রকাশিত ০৮:২৩:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
  • ২৩ বার দেখা হয়েছে

বিদেশগামী শ্রমিকদের মেডিকেল চেকআপ প্রক্রিয়ায় ভয়াবহ দুর্নীতি ও শোষণের চিত্র ধরা পড়েছে, যেখানে একটি মাত্র শক্তিশালী সিন্ডিকেট—যার নেতৃত্বে রয়েছে ১০ জন মালিক জিসিসি (GCC) অনুমোদিত প্রায় ৩০টি মেডিকেল সেন্টারকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে এবং এর মাধ্যমে তারা লাখো প্রবাসীকে জিম্মি করে ফেলেছে। এই চক্র নির্ধারিত ৮,৫০০ টাকার জায়গায় ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত চেকআপ বাবদ আদায় করছে, যা কোনোভাবে যুক্তিসঙ্গত নয় এবং সরাসরি শ্রমিকদের উপর একধরনের ‘অফিশিয়াল চাঁদাবাজি’। ‘চয়েস স্লিপ’ নামের একটি কারসাজির মাধ্যমে এই সিন্ডিকেট শ্রমিকদের নির্দিষ্ট সেন্টারে পাঠায় এবং সার্ভার নিয়ন্ত্রণ করে বাকি সেন্টারগুলোকে নিষ্ক্রিয় বা ‘ভয়েড’ করে রাখে, যেন কেউ তাদের বাইরে অন্য কোথাও চেকআপ না করাতে পারে। এভাবে শ্রমবাজারে একটি কৃত্রিম একচেটিয়া বাজার তৈরি করে তারা লক্ষাধিক টাকা আয় করছে, অথচ স্বাস্থ্যসেবার মান নিম্নমানের এবং অনেক ক্ষেত্রে চেকআপ না করেই ‘ফিট’ রিপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে, যা সরাসরি শ্রমিক ও নিয়োগকারী উভয়ের জন্য বিপজ্জনক। এর ফলে বহু শ্রমিক বিদেশে গিয়ে পুনরায় মেডিকেল পরীক্ষায় ‘আনফিট’ শনাক্ত হয়ে চাকরি হারাচ্ছেন, অনেকে কর্মসংস্থানের আগেই দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন, আর এদিকে ব্যাংকঋণ ও দালালদের দেওয়া টাকা শোধ করতে না পেরে মানসিক ও আর্থিকভাবে ধ্বংস হচ্ছেন তারা। ভুয়া রিপোর্ট ইস্যু ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার বাইরের সেন্টারের নাম ব্যবহার করে রিপোর্ট আপলোড করা হয়, অথচ পরীক্ষা হয়ই না এমনকি কিছু রিপোর্টে অন্য ব্যক্তির ছবি, বয়স ও তথ্য পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যা ভয়ংকর জালিয়াতির দৃষ্টান্ত। এই সিন্ডিকেট শুধু প্রবাসী শ্রমিকদের নয়, বরং বৈধভাবে বিনিয়োগ করা অনেক নতুন সেন্টার মালিককেও বিপদে ফেলছে, যারা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও রোগী পাচ্ছেন না এবং কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এদের অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো এই সিন্ডিকেটের কার্যক্রম সম্পর্কে বারবার অভিযোগ জানানো হলেও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এবং জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যত নীরব ভূমিকা পালন করছে। অনেকে বলছেন, উচ্চপর্যায়ে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণেই এই চক্র এতটা বেপরোয়া। অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা আজও নেওয়া হয়নি। পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য অনতিবিলম্বে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, লাইসেন্স বাতিল, সার্ভার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা, চয়েস স্লিপ ব্যবস্থা বাতিল বা পরিবর্তন করা এবং ‘এক মালিক, এক সেন্টার’ নীতি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের দাবি উঠেছে। তা না হলে এই অবস্থা চলতে থাকলে লাখো শ্রমিক আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়বে এবং দেশের বৈদেশিক রেমিট্যান্স নির্ভর অর্থনীতি গভীর সংকটে পড়বে, যার দায় সরকার এড়াতে পারবে না।

Tag :
জনপ্রিয়

মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা চেকআপ সিন্ডিকেটের ফাঁদে শ্রমিকরা

এম. এইচ আকাশ মাহমুদ মোল্লা :

মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা চেকআপ সিন্ডিকেটের ফাঁদে শ্রমিকরা

প্রকাশিত ০৮:২৩:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

বিদেশগামী শ্রমিকদের মেডিকেল চেকআপ প্রক্রিয়ায় ভয়াবহ দুর্নীতি ও শোষণের চিত্র ধরা পড়েছে, যেখানে একটি মাত্র শক্তিশালী সিন্ডিকেট—যার নেতৃত্বে রয়েছে ১০ জন মালিক জিসিসি (GCC) অনুমোদিত প্রায় ৩০টি মেডিকেল সেন্টারকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে এবং এর মাধ্যমে তারা লাখো প্রবাসীকে জিম্মি করে ফেলেছে। এই চক্র নির্ধারিত ৮,৫০০ টাকার জায়গায় ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত চেকআপ বাবদ আদায় করছে, যা কোনোভাবে যুক্তিসঙ্গত নয় এবং সরাসরি শ্রমিকদের উপর একধরনের ‘অফিশিয়াল চাঁদাবাজি’। ‘চয়েস স্লিপ’ নামের একটি কারসাজির মাধ্যমে এই সিন্ডিকেট শ্রমিকদের নির্দিষ্ট সেন্টারে পাঠায় এবং সার্ভার নিয়ন্ত্রণ করে বাকি সেন্টারগুলোকে নিষ্ক্রিয় বা ‘ভয়েড’ করে রাখে, যেন কেউ তাদের বাইরে অন্য কোথাও চেকআপ না করাতে পারে। এভাবে শ্রমবাজারে একটি কৃত্রিম একচেটিয়া বাজার তৈরি করে তারা লক্ষাধিক টাকা আয় করছে, অথচ স্বাস্থ্যসেবার মান নিম্নমানের এবং অনেক ক্ষেত্রে চেকআপ না করেই ‘ফিট’ রিপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে, যা সরাসরি শ্রমিক ও নিয়োগকারী উভয়ের জন্য বিপজ্জনক। এর ফলে বহু শ্রমিক বিদেশে গিয়ে পুনরায় মেডিকেল পরীক্ষায় ‘আনফিট’ শনাক্ত হয়ে চাকরি হারাচ্ছেন, অনেকে কর্মসংস্থানের আগেই দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন, আর এদিকে ব্যাংকঋণ ও দালালদের দেওয়া টাকা শোধ করতে না পেরে মানসিক ও আর্থিকভাবে ধ্বংস হচ্ছেন তারা। ভুয়া রিপোর্ট ইস্যু ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার বাইরের সেন্টারের নাম ব্যবহার করে রিপোর্ট আপলোড করা হয়, অথচ পরীক্ষা হয়ই না এমনকি কিছু রিপোর্টে অন্য ব্যক্তির ছবি, বয়স ও তথ্য পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যা ভয়ংকর জালিয়াতির দৃষ্টান্ত। এই সিন্ডিকেট শুধু প্রবাসী শ্রমিকদের নয়, বরং বৈধভাবে বিনিয়োগ করা অনেক নতুন সেন্টার মালিককেও বিপদে ফেলছে, যারা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও রোগী পাচ্ছেন না এবং কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এদের অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো এই সিন্ডিকেটের কার্যক্রম সম্পর্কে বারবার অভিযোগ জানানো হলেও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এবং জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যত নীরব ভূমিকা পালন করছে। অনেকে বলছেন, উচ্চপর্যায়ে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণেই এই চক্র এতটা বেপরোয়া। অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা আজও নেওয়া হয়নি। পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য অনতিবিলম্বে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, লাইসেন্স বাতিল, সার্ভার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা, চয়েস স্লিপ ব্যবস্থা বাতিল বা পরিবর্তন করা এবং ‘এক মালিক, এক সেন্টার’ নীতি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের দাবি উঠেছে। তা না হলে এই অবস্থা চলতে থাকলে লাখো শ্রমিক আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়বে এবং দেশের বৈদেশিক রেমিট্যান্স নির্ভর অর্থনীতি গভীর সংকটে পড়বে, যার দায় সরকার এড়াতে পারবে না।