ভোলা সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারি প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সীমাহীন অফিসিয়াল জাল জালিয়াতি, নানা দুর্নীতি, অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতা, ভূয়া স্বাক্ষর দিয়ে এমপির ডিও লেটার পরিবর্তন করা, উর্ধতন কর্মকর্তাদের আদেশ অমান্য করা, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা সহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে ওই ডিপার্টমেন্টের ঠিকাদাররা।
বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব হল রুমে এ সংবাদ সম্মেলন করে তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ পত্র পাঠ করেন ঠিকাদার মোঃ ফিরোজ। এসময় তারা বলেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লা নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী পরিচয় দিয়ে ভোলা সদর উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদারদের সহিত কাজের কমিশন, ও অনিয়মের সর্তে ভাগাভাগি ইত্যাদি নিয়ে প্রায়ই বাগবিতণ্ডা ও নানা ধরনের অপকর্মের মাধ্যমে অফিসের পরিবেশ নষ্ট করে আসছে। তার রাজনৈতিক প্রভাব, ঘৃণ্য আচার-আচরণ ও কমিশন বানিজ্য বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও ঠিকাদারগন অতিষ্ট।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটলেও অবসান ঘটেনি বিভিন্ন অফিসে ঘাপটি মেরে থাকা দূর্নীতিবাজদের। তাই ভোলা সদর জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাছুম বিল্লা নিজের দূর্নীতি আর অপকর্ম ঢাকতে ৫ আগস্টের পর রাতারাতি আওয়ামী খোলস বদলিয়ে ভূয়া সমন্বয়ক সেজে উদুর পিন্ডি বুদুর ঘারে চাপাতে সংবাদ কর্মীদেরকে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য পরিবেশন করে ভোলাবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
গত ১ ডিসেম্বর ভোলা তুলাতলী একটি রিসোর্টে সংবাদ সম্মেলনে দূর্নীতিবাজ মাছুম বিল্লা নিজেকে জুলাই – আগস্টের গনঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া একজন বৈষম্য বিরোধী সমন্বয়ক দাবী করেছেন। যাহা সম্পূর্ন ভূয়া, মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
মূলতঃ তিনি আওয়ামী লীগ দলীয় লেবাস পরিবর্তন করে, বৈষম্য বিরোধী সমন্বয়কের তকমা লাগিয়ে পূনরায় অফিসিয়ালি প্রভাব দেখাতে সে উঠে পরে লেগেছে। কিন্তু আমরা সচেতন ঠিকাদারগন তার আন্দোলনে অংশ নেয়ার মিথ্যা তথ্য ও অভিযোগকে কোনো দিনও মেনে নেবোনা।
এই উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাছুম বিল্লা ২০২১ সালে লালমোহন উপজেলায় কর্মরত থাকাকালীন নলকূপের গ্রাহকদের কাছ থেকে পরিমানের অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন, নলকূপ বিক্রি করা, নলকূপের পাটাতন করা, ভূয়া বিল ভাউচার করে জলবায়ু প্রকল্পের টিউবওয়েল অন্যত্র বিক্রি করে সরকারের অর্থ লুটপাটসহ সীমাহীন দূর্নীতি করেছেন। তার বিরুদ্ধে সংবাদ সন্মেলন করেছিলেন ওই অফিসের অফিস সহকারী সাগর চন্দ্র দে। যার প্রেক্ষিতে প্রকৌশলী মাছুম বিল্লাকে লালমোহন থেকে সরিয়ে ভোলা সদর উপজেলায় বদলি করা হয়।
তিনি ভোলায় যোগদানের পর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, সদর উপজেলা কর্তৃক বাস্তবায়িত “সমগ্রদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের” আওতায় ২০২২ – ২০২৩ ইং অর্থবছরে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের বানিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, ভোলা -১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ এর বরাদ্দকৃত গভীর নলকূপ স্থাপনের স্থানের নাম উল্লেখ করা ডিও লেটারে জাল স্বাক্ষর দিয়ে আরেকটি ডিও লেটার বানিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহন করে অর্থ আত্মসাৎ করেছিলেন।
এছাড়াও তাহা জন্মস্থান ও কর্মস্থল একই স্থানে হওয়ায় ঠিকাদারগনকে পেশিশক্তির হুমকী ধামকী এবং অফিস স্টাফদের সাথে প্রভাব খাটায়। এই উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাছুম বিল্লা একক আধিপত্য বিস্তার, ঠিকাদারগনের কাছ থেকে ” সমগ্রদেশ নিরপদ পানি সরবরাহ” প্রকল্পের সাইট লিস্ট, রেজুলেশন, সাইট হ্যান্ডওভারসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উসিলায় ঠিকাদারগনকে চাপ দিয়ে টাকা আদায় করেন। কোনো ঠিকাদার টাকা দিতে গড়িমসি করলে তার সাথে আমানবিক আচরন করেন। সাইট লিস্ট ও চুড়ান্ত বিলের জন্য তার পিছনে মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। এতে আমরা ঠিকাদারগন আত্মসন্মান ও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই।
ভোলার দুই আওয়ামীলীগ নেতা তার নিকট আত্মীয় হওয়ায় তাদের প্রভাবে সিমাহীন দূর্নীতি ও নানা অপকর্ম করেছেন এই প্রকৌশলী। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকার কারনে কেউ টু শব্দ করার সাহস পায়নি।
সর্বপরি “সমগ্র বাংলাদেশ নিরাপদ পানি সরবরাহ” প্রকল্প ৪র্থ ও ৫ম পর্বের টিউবওয়েল নির্ধারিত ব্যক্তির হওয়া সত্বেও টাকার বিনিময়ে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। পৌরসভায় টিউবওয়েল বসানোর কোনো নির্দেশনা না থাকলেও টাকার বিনিময়ে তিনি বরাদ্দকৃত টিউবওয়েল পৌরসভার এরিয়ায় বসানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
পরিশেষে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতনের পর একটি নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ায় কথা বলার পরিবেশ ফিরে পাওয়ার পর ভোলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদাররা গত ২৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লার অফিসিয়াল কৃতকর্ম, দূর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা সহ বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রধান প্রকৌশলীর বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিলে গত ১৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে তাকে সাতক্ষীরা জেলার আসাশুনি উপজেলায় ৭ দিনের সময় দিয়ে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হলেও তিনি অদ্যাবধি নানা অজুহাতে উক্ত কর্মস্থলে যোগদান করেননি। উপরন্তু তিনি তার দূর্নীতি ও অনিয়ম ঢাকতে ভোলা সদর উপজেলা প্রকৌশলীসহ অফিস স্টাফদের বিরুদ্ধে সংবাদ সন্মেলন করে মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন।
সন্মেলনে উপস্থিত ঠিকাদাররা তার অপসারন দাবী করে সত্য উদঘাটন করে রাস্ট্র ও জাতির কাছে সমাজে থাকা ঘাপটিমারা এসব দূর্নীতিবাজদের মূখোষ উন্মোচন করে দেশকে দূর্নীতিমূক্ত করতে সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ করেন।