৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে বিশিষ্ট অভিনেতা, সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিসচা প্রতিষ্ঠাতা ও জনত্ পআর্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। লন্ডন থেকে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তিনি ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন, “গভীর শ্রদ্ধা জানাই সেই সকল সাহসী মানুষদের, যাঁরা বুক চিতিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, সত্যের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন। ৫ আগস্ট শুধুমাত্র একটি দিন নয়, এটি একটি চেতনা, একটি জাগরণ, একটি অঙ্গীকার। এটি সেই প্রতিশ্রæতি যে, আমরা আর নীরব থাকব না। যারা এক বছর আগে রাস্তায় নেমেছিলেন, যারা জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা।”
তিনি আরও বলেন, একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে আমি সেই দিন ফ্যাসিস্ট সরকারের নারকীয় তান্ডব, হত্যা-গুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিলাম। আমি আমার অবস্থান থেকে জুলাই আন্দোলনের সময় মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছি এবং জাতির উদ্দেশ্যে আমার ফেসবুক পেজে লাইভে এসে বক্তব্য দিয়েছি। সরকারের কাছে যুক্তিসঙ্গত দাবি মেনে নেওয়ার আহŸান জানিয়েছি বারবার। কিন্তু সরকার তখনো পেশীশক্তি দিয়ে শিশু, ছাত্র ও সাধারণ মানুষের উপর বর্বর হামলা চালিয়েছে।
“আমি শহীদ আবু সাইদ, মুগ্ধ এবং আরও যারা এই আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছিলাম এই সব হত্যাকান্ডের তদন্তে জাতিসংঘের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন হোক। এই হত্যার নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক মানের বিচার হওয়া জরুরি। আজ এক বছর পরও বিচার প্রক্রিয়া চলছে, তবে এই বিচারকে দ্রæত ও নির্ভুলভাবে স¤পন্ন করতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমি এই দাবি জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার যত মায়ের বুক খালি করেছে, যতজন মানুষকে হত্যা করেছে, সেই হত্যাকারীরা যদি শাস্তি না পায়, তবে ভবিষ্যতে আরও ভয়ঙ্কর ফ্যাসিস্টের জন্ম হবে। এর চ‚ড়ান্ত অবসান জরুরি।
সামগ্রিক বিষয়ে তিনি বলেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের
পক্ষ থেকে যেসব সংস্কারের প্রস্তাব এসেছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন তা সকল পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে স¤পূর্ণ করে। সেইসাথে গত এক বছরে নানান প্রতিক‚লতা ও আন্দোলনের মধ্যেও যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
“আমি আগেও বলেছি, অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। যারা দেশকে বাঁচাতে এই সরকারকে সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতিও আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আমি আগামীকাল ৫ আগস্ট, জুলাই আন্দোলনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে জুলাই সনদ ঘোষণার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।”
ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, আমি রাজনীতির মাঠে নেমেছি দায়িত্ববোধ থেকে। বর্তমানে আমি বিদেশে থাকায় হয়তো সক্রিয়ভাবে সময় দিতে পারছি না, তবে আমার রাজনৈতিক দল জনতা পার্টি বাংলাদেশ সবসময়ই ইনসাফভিত্তিক শাসনব্যবস্থার কথা বলে আসছে।
“আমি চাই দেশে ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হোক, ঘুষ-দুর্নীতি দূর হোক, অপকর্ম ও অবিচার চিরতরে নিঃশেষ হোক। সব নাগরিকের জীবন হোক নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি এইসব সংস্কারের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হবে এবং সঠিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে একটি নতুন বাংলাদেশ। আমি দেশবাসীকে বলবো, ধৈর্য্য ধরুন। ইনশাআল্লাহ, ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিল, সেই স্বপ্ন একদিন বাস্তবায়িত হবেই।