যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিশিষ্ট চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মাসুদ রানাকে খ ম আজাদ নামে এক ব্যক্তি, গত ১৫ই আগষ্ট ২০২৫ইং মেসেঞ্জারে কল দিয়ে হত্যার হুমকি প্রদান করে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হুমকি দাতা খ ম আজাদ হুমকি দিয়ে ক্ষ্যান্ত হননি, তিনি পরের দিন অর্থাৎ ১৬ই আগষ্ট ২০২৫ বরিশাল সদর উপজেলাধীন চরমোনাই গ্রামে মাসুদ রানার পৈত্রিক বাড়িতে হামলা চালায়। খ ম আজাদ বরিশাল মহানগর শিবির কর্মী বলে জানা গেছে।
উক্ত ঘটনায় মাসুদ রানার খালাতো ভাই আলহাজ্ব মো: সেলিম (৫৮) প্রতিবাদ করেন এবং থানায় মামলায় দায়ের করতে যাওয়ার পথে, খ ম আজাদ ও তার ৫ সহযোগী মিলে আক্রমণ করেন। নাজমুল হাসান (৩৯) নামে আরেক ব্যক্তি আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে বরিশাল শেরে বাংলা হাসপাতালে নিয়ে যান।
উক্ত ঘটনায় মাসুদ রানার খালাতো ভাই আলহাজ্ব মো: সেলিম ২০দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ রাত ৮টায় মৃত্যুবরণ করেন। নিহতের পরিবার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে গেলে, মামলা না নিয়ে তাদেরকে থানা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী নাজমুল হাসান (৩৯) পিতা – জাহিদ হোসেন জাহাংগীর এই প্রতিবেদককে জানান, গত ১৮ই আগষ্ট ২০২৫ সোমবার সকাল ১১টার সময় বরিশাল নগরীর ভাটিখানা জোড় মসজিদের সামনে শিবির নেতা খ ম আজাদসহ ৫/৬জন মিলে লোহার রড, পাইপ, হকিষ্টিক দিয়ে আলহাজ্ব মো: সেলিমকে মাটিতে ফেলে নির্মমভাবে পিটাচ্ছে। আলহাজ্ব মো: সেলিম মাটিতে লুটিয়ে বাচার আকুতি জানিয়ে আর্তচিৎকার করছেন।
আমি দূর থেকে দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে গেলে, খ ম আজাদ ও তার সহযোগীরা আমার উপরেও হামলা করে। একপর্যায়ে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। স্থানীয় কয়েকজন মিলে আমাদের ২জনকে আহত অবস্থায় বরিশাল সদর শেরে বাংলা হাসপাতালে ভর্তি করে। আমি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় আসি, কিন্তু আলহাজ্ব মো: সেলিম এর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তিনি হাসপাতালেই থেকে যান। পরবর্তীতে জানতে পারি তিনি গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রাতে মারা যান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে ব্যবসায়ী মাসুদ রানার হোয়াটস্যাপ এ কল দিলে তিনি জানান, গত ১৩ই আগষ্ট ২০২৫ চিত্রনায়ক ও ঢাকা ১০ আসনের সাবেক এমপি ফেরদৌস যুক্তরাষ্ট্রে ঘুরতে এসে, চলচ্চিত্র নায়িকা মৌসুমী ও কলকার চিত্রনায়িকা ঋতুপর্ণা সহ আমার সাথে দেখা করেন। আমি তাদের সাথে একটি ছবি আমার ফেসবুকে আপলোড করি।
ফেসবুকে আপলোডকৃত ছবি শিবির নেতা খ ম আজাদ দেখতে পেয়ে, আমাকে মেসেঞ্জারে কল দিয়ে ফ্যাসিষ্ট সরকারের প্রশ্রয় দাতা, ইন্ডিয়ার দালাল বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেয়। এরপরই জানতে পারি, খ ম আজাদ আমার গ্রামের বাড়িতে হামলা করে এবং আমার খালাতো ভাইকে মারধোর করলে তিনি পরবর্তীতে হাসপাতালে মারা যান।
উল্লেখ্য যে, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মাসুদ রানা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার অপরাধে, পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে পুলিশ ও ডিবি কর্তৃত একাধিকবার মামলা-হামলা, জুলুম, নির্যাতনের শিকার হন।
ঘটনার সূত্রপাত: চলচ্চিত্র প্রযোজক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাসুদ রানা ও তার ঘনিষ্টজনদের মারফত জানা যায়, ২০১২ সালের ১৫ই অক্টোবর বিকালে, রাজধানীর মতিঝিল ওয়াপদা মিলনায়তনে দলীয় মিটিংয়ে অংশ নিয়ে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি,গুম-খুন এর বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য প্রদান করেন মাসুদ রানা। মিটিং শেষে মগবাজার রেলগেটের কাছে পৌঁছলে, পল্টন থানার ততকালীন ওসি গোলাম সরোয়ার মাসুদ রানাকে চোখ বেধে, হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে গাড়িতে তুলে। তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে, এবং মগবাজার পিয়াসা বারের নীচে দুই ঘন্টা রেখে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে।
মুক্তিপণ না দেয়ায় তাকে থানায় নিয়ে, হ্যান্ডকাফ পড়া অবস্থায় চোখ বেধে রাতভর ভয়াবহ নির্যাতন করে। যার কারণে তার বাম হাত ও বাম পা ফ্র্যাকচার হয়ে যায়। চিকিৎসা না দিয়ে ২ দিন পরে তাকে আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়, আদালত তার শারীরিক অবস্থা অনুমান করে ২দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
পল্টন থানার রিমান্ড শেষে আদালত প্রাংগন হতে এসি আহাদ এর নেতৃত্বে, ডিবি পুলিশ আরেকটি মিথ্যা মামলায় মাসুদ রানাকে ২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে, মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বোরোচিত নির্যাতন করে। অত:পর ২০দিন জেল খেটে ৫ই নভেম্বর ২০১২ইং জামিনে মুক্ত হয়ে, গুম হওয়ার ভয়ে, বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের বাসায় আত্ম গোপনে থেকে মামলায় হাজিরা দেয়ার চেষ্টা করেন।
মাসুদ রানা বলেন, ২৩ নভেম্বর ২০১২ইং সকাল ১০টায়, একটি মামলায় হাজিরা দেয়ার জন্য আদালতে গেলে, লোক মারফত জানতে পারি ছদ্মবেশী একদল লোক আমাকে তুলে নেয়ার জন্য আদালতের নীচে, কালো একটি মাইক্রো বাসে অপেক্ষা করতেছে। অবস্থার বেগতিক বুঝতে পেরে হাজিরা না দিয়ে আমি কৌশলে আদালত ত্যাগ করে সরাসরি বেনাপোল সীমান্ত অতিক্রম স্বপরিবারে ভারতে চলে যাই।
ভারতের কলকাতায় অবস্থিত কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালের ৫ দিন চিকিৎসা শেষে নিজের ও স্ত্রী সন্তানদের জীবন রক্ষার্থে ২৯ নভেম্বর ২০১২ইং আমেরিকায় চলে আসি।আমেরিকায় আসার পর বরিশাল সদর উপজেলাধীন, চরমোনাই ইউনিয়নে আমার নিজ বাড়িতে আওয়ামী দুর্বৃত্তরা ২ রাউন্ড গুলি চালায় ও ভাংচুর করে।
জনাব মাসুদ রানা আরও জানান, আমি বিরোধী দলের রাজনীতি করায়, আওয়ামীলীগের কিছু দুর্বৃত্ত আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের টার্গেট করে। তারা হালিমা বেগম, দেলোয়ার হোসেন, রহিমা আকতার টুলু, মাহমুদুল হাসান, একরামুল হক সবুজ প্রমুখ নামে ব্যক্তিদের দিয়ে অসংখ্য মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে, আমার রাজধানীর ৫১ পুরানা পল্টনস্থ অফিসের দুইটি ফ্লোর দখল করে নেয়। মাওয়ার ষোলোঘর এ অবস্থিত, আমার এইমওয়ে কসমেটিকস ফ্যাক্টরি দখল করে নেয় শ্রীনগর থানা যুবলীগের সহ সভাপতি সোহেব হোসেন চৌধুরী সখা।
২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা দক্ষিনের সাবেক যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ আমার ৫১ পুরানা পল্টনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার দুইটি ফ্লোর সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধকৃত (আনরেজিষ্টার্ড) অফিস বিল্ডার রফিকুল ইসলাম এর কাছে থেকে জোরপূর্বক লিখে নিয়ে, বিক্রি করে দেয়।
এছাড়াও ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি আমাকে না পেয়ে আমার ভাই গোলাম মোর্শেদ রাহাত কে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে নির্মভাবে নির্যাতন করে, এবং ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়। এখনও নিয়মিত পুলিশ এবং ডিবি আমার বাড়িতে আমাকে খুঁজতে যায়। এই মুহুর্তে আমি দেশে ফিরতে খুবই ভীতসন্ত্রস্ত।