বর্তমান পৃথিবীকে বলা হয় বিজ্ঞানের যুগ। ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিংবা ডিজিটাল প্রকাশনা—সবকিছু মিলেই মানুষ আজ এক নতুন জগতে প্রবেশ করেছে। এই পরিবর্তন সাহিত্যচর্চাকেও নতুন মাত্রা দিয়েছে। একদিকে যেমন প্রযুক্তি লেখকদের জন্য উন্মুক্ত করেছে অগণিত সম্ভাবনার দ্বার, অন্যদিকে তৈরি করেছে কিছু চ্যালেঞ্জও।
প্রথমত, তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে সাহিত্য আজ ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করেছে। আগে যেখানে একটি রচনা প্রকাশের জন্য পত্রিকা, সাময়িকী কিংবা বইয়ের প্রকাশকের দ্বারস্থ হতে হতো, এখন লেখক চাইলে মুহূর্তের মধ্যেই তার লেখা ব্লগ, ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন। এর ফলে পাঠকের কাছে পৌঁছানো সহজ হয়েছে এবং সাহিত্যচর্চা পেয়েছে গণতান্ত্রিক রূপ।
দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল প্রযুক্তি লেখার ধরন ও ভাষাশৈলীতেও প্রভাব ফেলছে। সংক্ষিপ্ত বার্তা, ইমোজি কিংবা ভিজ্যুয়াল কনটেন্টের ব্যবহার সাহিত্যকে দিয়েছে ভিন্ন ধারা। অনলাইন সাহিত্য, ই-বুক, অডিওবুক, এমনকি ভিডিও কবিতা এখন তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তৃতীয়ত, প্রযুক্তি লেখালেখির জন্যও সুবিধা এনে দিয়েছে। লেখকরা এখন অনলাইনে তথ্য সংগ্রহ, অভিধান ব্যবহার, কিংবা সম্পাদনা সফটওয়্যার দিয়ে সহজে লেখা গুছিয়ে নিতে পারছেন। আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর লেখালেখির সরঞ্জামও লেখককে সহায়তা করছে।
বিজ্ঞানের এই যুগে সাহিত্যচর্চার কিছু সংকটও রয়েছে। দ্রুতগতির জীবনে মানুষ দীর্ঘ সাহিত্যকর্ম পড়ার ধৈর্য হারাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে সাহিত্য অনেক সময় ক্ষণস্থায়ী হয়ে পড়ছে। এছাড়া, কপিরাইট লঙ্ঘন ও অরিজিনালিটির সংকটও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সবশেষে বলা যায়, তথ্য প্রযুক্তির যুগ সাহিত্যের জন্য একদিকে যেমন সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, অন্যদিকে কিছু চ্যালেঞ্জও হাজির করেছে। তাই দরকার প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে সাহিত্যচর্চাকে সমৃদ্ধ করা, যাতে আগামী প্রজন্ম প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়েই সাহিত্যিক সৌন্দর্য ও গভীরতাকে ধরে রাখতে পারে।