২০২৫ সালের জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নতুন করে আলোড়ন ও উত্তেজনা। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সামনে থাকা বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ এবং তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীর অস্তিত্ব সংকট। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষণ এবং মাঠের পর্যবেক্ষণ বলছে, বিএনপির জন্য নির্বাচন শুধু একটি রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে একটি টিকে থাকার লড়াই। তাদের সামনে এখন অন্তত পাঁচটি বৃহৎ চ্যালেঞ্জ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রথমত, জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক বৈধতা নেই, কারণ দলটি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারিয়েছে, ফলে এই জোট অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির কাঠামোতে একটি গুরুতর সমস্যায় পড়েছে। দ্বিতীয়ত, বিএনপি-জামায়াত জোটের ভেতরে কৌশলগত মতপার্থক্য, আদর্শিক দূরত্ব এবং নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব জোটের দৃঢ়তা নষ্ট করছে। তৃতীয়ত, বিএনপির বিপুল সংখ্যক সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার কারণে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হয়েছে, যা মাঠপর্যায়ে তাদের সক্রিয়তা কমিয়ে দিয়েছে। চতুর্থত, তরুণ প্রজন্ম, যারা এক সময় বিএনপির ভোট ব্যাংক ছিল, এখন আরও নতুন, উদার, আধুনিক এবং বিকল্প রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, ফলে বিএনপির প্রচার ও সংগঠনের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পঞ্চমত, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলোর কড়া নজরদারি থাকায় বিএনপির প্রতিটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিকভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে, যেখানে ভুল সিদ্ধান্ত দলের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এসবের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর ওপর সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক চাপ রয়েছে। অতীতের কর্মকাণ্ড, মৌলবাদী ভাবমূর্তি, যুদ্ধাপরাধের বিচার, এবং আধুনিক রাজনৈতিক ধারা থেকে পিছিয়ে পড়া দলটিকে বর্তমানে এক গভীর অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিয়েছে। এমন বাস্তবতায় জামায়াত দল হিসেবে কীভাবে নির্বাচনের রাজনীতিতে ফিরে আসবে, সেই প্রশ্নে বিশ্লেষকরা সন্দিহান। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে একাধিক বিষয় যেমন :নতুন নেতৃত্বের আবির্ভাব, কৌশলগত পুনর্গঠন, জনসম্পৃক্ততা, তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নেওয়া এবং একটি গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক রূপরেখা তৈরি করা। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কৌশল, বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থান (যেমন এনডিসি বা নতুন জোট), এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা। এই সবই মিলে আগামী নির্বাচনের চিত্র নির্ধারণ করবে। তাই বলা যায়, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে একটি ভুল কৌশল তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বকেই চিরতরে দুর্বল করে দিতে পারে।
০৬:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম