০২:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নিজস্ব প্রতিবেদক :

বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি’র ৬ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

  • প্রকাশিত ০৫:৫৬:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
  • ৭ বার দেখা হয়েছে

গতকাল ৯ আগষ্ট ২০২৫ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব “আব্দুস সালাম হল” অডিটোরিয়াম, ৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর বর্বরোচিত হামলা এবং সংবিধান ও জুলাই ঘোষণাপত্রে তাদের স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়া এবং ঐকমত্য কমিশনসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একমাত্র নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি’কে আমন্ত্রণ না জানানো এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোন প্রকার মতামত গ্রহণ না করার বিষয়ে বিএমজেপি’র তীব্র প্রতিবাদ ও সরকারের প্রতি জরুরি দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সভাপতি সুকৃতি কুমার মন্ডল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ধর্মের অবমাননার মিথ্যা ট্যাগ লাগিয়ে বর্বরোচিত হামলা, লুটপাট, বাড়িঘর ভাঙচুর, মন্দির ভাঙচুর, ধর্ষণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অমানবিক ও ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে । আমরা এই ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখি না। যখনই দেশে কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন বা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তখনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে। এই ঘটনাগুলো আমাদের সেই বিভীষিকাময় ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ সালের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইতিহাস আবার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নতুন করে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে।লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের সংবিধান, যা দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে, তা ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় রয়েছে এবং সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ প্রায় অনুপস্থিত। এই সংবিধান আমাদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং সমঅধিকার নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।আমরা বছরের পর বছর ধরে সংবিধানের এই বৈষম্যমূলক দিকগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এসেছি, কিন্তু কোনো সরকারই এ বিষয়ে কর্ণপাত করেনি।সংবাদ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি’র পক্ষ থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ৬ টি দাবি পেশ করেন।দাবিগুলো হলো: ১. হামলার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সকল সহিংসতার ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে যেন কোনো অপরাধী পার না পায়, সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে। ২. ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ: ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দ্রুত আর্থিক সহায়তা, বাড়িঘর ও উপাসনালয় পুনর্র্নিমাণে পর্যাপ্ত সহায়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অপরিহার্য। ৩. সংবিধানের সংস্কার: একটি সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হোক। এই কমিশনকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ সুরক্ষা,
অধিকার ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেসংবিধানের ধারাগুলো সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হোক। ৪. জুলাই ঘোষণাপত্রে সংশোধন: জুলাই ঘোষণাপত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, সম্পত্তি রক্ষা এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। এই সনদের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করার আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনার ব্যবস্থা করা হোক। ৫. বিশেষ সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা, জমি দখল এবং হয়রানি বন্ধে একটি বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হোক, যা সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। ৬. রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ: জাতীয় সংসদ এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হোক।তারা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, আপনারা শুধু দেশের গণতন্ত্র? পুনরুদ্ধার নয়, বরং সকল নাগরিকের জন্য একটি নিরাপদ ও সমতাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার দিকে মনোযোগ দিন এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি সিদ্ধান্তে ধর্মীয় সখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করুন। একটি জাতিকে উপেক্ষা করে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন সফল হতে পারে না।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির মহাসচিব দিলীপ কুমার দাস, সহ-সভাপতি রবীন্দ্র নাথ বর্মন, সহ-সভাপতি নিরথ মজুমদার, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন কুমার বেপারী প্রমুখ।

Tag :
জনপ্রিয়

আমিরাত প্রবাসী সাংবাদিক সাইফুল ইসলামের বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে উপস্থিত কমার্শিয়াল কাউন্সিলর

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি’র ৬ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত ০৫:৫৬:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

গতকাল ৯ আগষ্ট ২০২৫ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব “আব্দুস সালাম হল” অডিটোরিয়াম, ৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর বর্বরোচিত হামলা এবং সংবিধান ও জুলাই ঘোষণাপত্রে তাদের স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়া এবং ঐকমত্য কমিশনসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একমাত্র নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি’কে আমন্ত্রণ না জানানো এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোন প্রকার মতামত গ্রহণ না করার বিষয়ে বিএমজেপি’র তীব্র প্রতিবাদ ও সরকারের প্রতি জরুরি দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সভাপতি সুকৃতি কুমার মন্ডল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ধর্মের অবমাননার মিথ্যা ট্যাগ লাগিয়ে বর্বরোচিত হামলা, লুটপাট, বাড়িঘর ভাঙচুর, মন্দির ভাঙচুর, ধর্ষণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অমানবিক ও ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে । আমরা এই ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখি না। যখনই দেশে কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন বা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তখনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে। এই ঘটনাগুলো আমাদের সেই বিভীষিকাময় ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ সালের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইতিহাস আবার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নতুন করে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে।লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের সংবিধান, যা দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে, তা ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় রয়েছে এবং সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ প্রায় অনুপস্থিত। এই সংবিধান আমাদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং সমঅধিকার নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।আমরা বছরের পর বছর ধরে সংবিধানের এই বৈষম্যমূলক দিকগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এসেছি, কিন্তু কোনো সরকারই এ বিষয়ে কর্ণপাত করেনি।সংবাদ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি’র পক্ষ থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ৬ টি দাবি পেশ করেন।দাবিগুলো হলো: ১. হামলার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সকল সহিংসতার ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে যেন কোনো অপরাধী পার না পায়, সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে। ২. ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ: ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দ্রুত আর্থিক সহায়তা, বাড়িঘর ও উপাসনালয় পুনর্র্নিমাণে পর্যাপ্ত সহায়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অপরিহার্য। ৩. সংবিধানের সংস্কার: একটি সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হোক। এই কমিশনকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ সুরক্ষা,
অধিকার ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেসংবিধানের ধারাগুলো সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হোক। ৪. জুলাই ঘোষণাপত্রে সংশোধন: জুলাই ঘোষণাপত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, সম্পত্তি রক্ষা এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। এই সনদের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করার আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনার ব্যবস্থা করা হোক। ৫. বিশেষ সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা, জমি দখল এবং হয়রানি বন্ধে একটি বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হোক, যা সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। ৬. রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ: জাতীয় সংসদ এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হোক।তারা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, আপনারা শুধু দেশের গণতন্ত্র? পুনরুদ্ধার নয়, বরং সকল নাগরিকের জন্য একটি নিরাপদ ও সমতাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার দিকে মনোযোগ দিন এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি সিদ্ধান্তে ধর্মীয় সখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করুন। একটি জাতিকে উপেক্ষা করে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন সফল হতে পারে না।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির মহাসচিব দিলীপ কুমার দাস, সহ-সভাপতি রবীন্দ্র নাথ বর্মন, সহ-সভাপতি নিরথ মজুমদার, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন কুমার বেপারী প্রমুখ।