০৫:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাজু আলীম :

বাংলাদেশ এর ভবিষ্যত ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা

  • প্রকাশিত ০৩:৫৭:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
  • ১৬ বার দেখা হয়েছে

মধ্যরাত, ঈদের ঠিক আগে। বগুড়ার একটি চেকপোস্টে নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। নিরাপত্তা প্রহরার এক পর্যায়ে হঠাৎ চোখে পড়লো এক অদ্ভুত দৃশ্যের। গভীর রাতে একটি সাইকেল সাথে নিয়ে যাচ্ছেন এক বৃদ্ধ। দৃশ্যটি দেখে সেনা সদস্যদের মনে প্রশ্ন জাগে। থামতে বলেন বৃদ্ধকে। বৃদ্ধ থেমে যান। মধ্যরাতে সহাসড়কে এমনভাবে যাবার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় তাকে। তাঁর উত্তর যেন এক মুহূর্থে থমকে দেয় উপস্থিত সবাইকে। বৃদ্ধ ব্যক্তিটির নাম রাজু। বাড়ি গাইবান্ধার পলাশাবাড়ির হরিণাথপুর গ্রামে। পেশায় তিনি রিকশা চালক। ছেলে পড়াশোনা করে। ছেলের মুখে হাসি ফোটাতে ২০০ কিমি পথ সাইকেলে পাড়ি দিলেন রিকশাচালক রাজু। রাজুর গল্প জেনে সহায়তার হাত বাড়ায় সেনাবাহিনী। সাইকেলসহ একটি ট্রাকে রাজুর যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন দায়িত্বরত সেনাসদস্যরা। সঙ্গে পথে খাবার জন্য দেন কিছু শুকনো খাদ্যদ্রব্য।
১৮ জুন, ২০২৪। বয়সের ভারে নুয়ে পরেছেন ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধ বিমলা রানী। ঠিক মতো দেখতে পারেন না চোখে। কানেও শোনেন কম। চলাফেরার ক্ষমতাও কমে গেছে বৃদ্ধার। এক সময় তিন ছেলে নিয়ে সুখে সংসার করলেও এখন আর সংসারে জায়গা হয় না বৃদ্ধা মায়ের। ফেলে যান বগুড়ার বড়কুমিড়া এলাকায়। বিষয়টি চোখে পরে সেনা ক্যাম্পের লেফটেন্যান্ট আল ফাহাদের। পরম মমতায় নিজ হাতে খাবার তুলে দেন বৃদ্ধাকে। তিন সন্তানের কাছে উঠিয়ে দিয়ে আসেন সেই বৃদ্ধা মাকে। দেন সেনাবাহিনী থেকে সহায়তার আশ্বাস। বৃদ্ধার ছেলে মেয়ে বুঝতে পারেন তাদের ভুল।
২০২৪ আগস্ট। ছাত্র জনতার আন্দোলনে উত্তাল দেশ, রাজধানী। একদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা। অন্যদিকে অবস্থান করছে আওয়ামী প্রশাসনের পুলিশ বাহিনী ও সশস্ত্র গ্রুপ। যে কোন সময় গুলি ছুটে আসবে ছাত্র জনতার বুকে। ঠিক এমন সময় দেখা যায় সেনা সদস্যদের। সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখে উল্লাসে ফেটে পরে উপস্থিত জনতা। জনতার পাশে দাঁড়িয়ে ফাঁকা গুলি ছোঁড়েন সেনা সদস্যরা। সরে যায় প্রতিপক্ষ। জনতা এগিয়ে যায় রাজপথে।
এ সময় ৩ আগস্ট জনতার দিকে গুলি না ছুঁড়তে নির্দেশ দেন সেনা প্রধান। নির্বাহী আদেশ ছাড়া যেকোনো উসকানির মুখেও ছাত্র ও সাধারণ জনগণের দিকে গুলি না ছুড়তে সব সেনাসদস্যদের নির্দেশ প্রদান করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এ ছাড়া ডেপুটেশনে থাকা সামরিক কর্মকর্তাদের সর্বতোভাবে সহযোগিতা প্রদান করার আহ্বানও জানান তিনি।
এরপর ৫ আগস্ট। গোটা জাতি অপেক্ষায় আছে একটি ভাষণের। টেলিভিশনের পর্দায় জাতির উদ্যেশ্যে সেনা প্রধানের এক ঐতিহাসিক ভাষণ। দেশের অপামর সাধারণ মানুষের পাশে আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সাধারণ জনতার চুড়ান্ত বিজয় আসে সেই দিন।
ঐতিহাসিক সেই ভাষণে সেনা প্রধান বলেন, দেশে একটি রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। একটি অন্তবর্তী সরকার গঠন করা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন। আমরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। জনগণের উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধান আরও বলেন, দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখেন। আপনারা আমার ওপর আস্থা রাখেন, আমি সব দায়িত্ব নিচ্ছি। প্রতিটি হত্যার বিচার করা হবে। মারামারি সংঘাত করে আর কিছু পাব না। সংঘাত থেকে বিরত হোন। সবাই মিলে সুন্দর দেশ গড়ার চেষ্টা করি। আপনারা আমকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে এগিয়ে আসুন। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এভাবেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এবং জনতার কাছে একান্ত ভরসাস্থল হিসেবে উঠে আসে। কেবল আগস্ট নয়। এর আগেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীকে দেখা যায় শক্তিশালি একটি অবস্থানে।
অভ্যুত্থানের সময় অথবা অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন এবং আভ্যন্তরীন আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রথম সারিতে কাজ করে যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। কিন্তু এতকিছুর পরেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে বর্তমানে সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়ে অনেকেই অনেক আলোচনা করে আসছেন। অনেকের কাছেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং সেনা প্রধানের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ওঠানেরা প্রচেষ্টা দেখা যায়। কোন বিষয়ে প্রশ্ন তোলা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। প্রশ্নে তৈরি হয় জবাবদিহিতার পথ। তবে প্রশ্ন কখনো কখনো কেবল মাত্র প্রশ্নে সীমাবদ্ধ থাকে না। প্রশ্নের আড়ালে লুকিয়ে থাকে নানা মত, নানা পথ আর নানান অবস্থানকে প্রতিষ্ঠিত করার আকাঙ্খা।
যা অনেকটা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় তৈরি হওয়া ধারার প্রতিফলন।
একটি দেশ তৈরি হবার সময় থেকে আদ্যবধি যে প্রতিষ্ঠানটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে এসেছে সেই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে বিভিন্ন সময় সৃষ্টি করা হয়েছে নানান প্রশ্ন। এ বিষয়ে একটু গভীর দৃষ্টি দিলেই দেখা যায়, যখনই দেশ রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী এই সেনাবাহিনীকে ঘিরে প্রশ্ন ওঠানো হয় ঠিক তখনই দেশকে ঘিরে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে গভীর এক ষড়যন্ত্র।
যার মুখ্য উদ্যেশ্য থাকে সেনাবাহিনীকে যে কোন উপায়ে বিতর্কিত করে তোলা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে ঘিরে প্রশ্ন তোলার সেই পরিকল্পনা অনেকটাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। সেনাবাহিনীর এই অবস্থান আর দৃঢ়তার পেছনে রয়েছে বর্তমান সেনা প্রধান, সেনাবাহিনী সদস্য আর সাবেক সেনাসদস্যদের সমন্বিত এবং সুশৃঙ্খল অবস্থান।
সম্প্রতি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তি সময়ে বাংলাদেশ বেশ কিছু ঝুঁকির মাঝ দিয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে একটি অভ্যুত্থান পরবর্তি রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। গত প্রায় এক বছরে দেশের ভঙ্গুর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিকের পথে হাঁটছে। যদিও সম্পুর্ন স্বাভাবিক হতে এখনও সময় প্রয়োজন। তবে সেনা প্রধান ওয়াকার উজ জামানের দৃঢ় ব্যক্তিত্ব এবং প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি এখন পুর্বের চেয়ে অনেক পরিবর্তিত। যা ইতিমধ্যে দৃশ্যমান।
অন্যদিকে বিদেশি শক্তির সামনেও দেশের সেনাবাহিনী নিজেদের শক্তিশালি অবস্থান দেখিয়েছে। করিডোর ইস্যু সহ বেশ কিছু ইস্যুতে দেশের বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টাও অনেকটাই খর্ব করতে সক্ষম হয়েছে সেনাবাহিনী। যার নেতৃত্ব দেন সেনা প্রধান ওয়াকার উজ জামান।
দেশকে এগিয়ে নিতে সেনা প্রধান ওয়াকার উজ জামান সবসময়েই স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের বিষয়ে সজাগ। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর চেতনার মূল উৎস হলো সংবিধানের নির্দেশনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতির অসীম আত্মত্যাগ থেকে পাওয়া শিক্ষা। এই চেতনায় বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ।
রাজনৈতিক ক্ষমতা হোক অথবা প্রভাব। দেশের সামগ্রিক স্থিরতা রক্ষায় দেশের অন্যতম খুঁটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। যার দক্ষ এবং সুযোগ্য নেতৃত্ব ওয়াকার উজ জামানের হাতে। যিনি সেই নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করে আসছেন সততার সাথে। তবে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান শক্তি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং সাবেক ও বর্তমান সেনা সদস্যদের জন্য রাষ্ট্রেরও রয়েছে দায়িত্ব। রাষ্ট্র যেন সেই দায়িত্ব ভুলে না যায়।

রাজু আলীম
কবি, সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

Tag :
জনপ্রিয়

শ্রমিক দল নেতা শেখ আহমদ আলী রানার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা: উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানির অভিযোগ

রাজু আলীম :

বাংলাদেশ এর ভবিষ্যত ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা

প্রকাশিত ০৩:৫৭:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

মধ্যরাত, ঈদের ঠিক আগে। বগুড়ার একটি চেকপোস্টে নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। নিরাপত্তা প্রহরার এক পর্যায়ে হঠাৎ চোখে পড়লো এক অদ্ভুত দৃশ্যের। গভীর রাতে একটি সাইকেল সাথে নিয়ে যাচ্ছেন এক বৃদ্ধ। দৃশ্যটি দেখে সেনা সদস্যদের মনে প্রশ্ন জাগে। থামতে বলেন বৃদ্ধকে। বৃদ্ধ থেমে যান। মধ্যরাতে সহাসড়কে এমনভাবে যাবার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় তাকে। তাঁর উত্তর যেন এক মুহূর্থে থমকে দেয় উপস্থিত সবাইকে। বৃদ্ধ ব্যক্তিটির নাম রাজু। বাড়ি গাইবান্ধার পলাশাবাড়ির হরিণাথপুর গ্রামে। পেশায় তিনি রিকশা চালক। ছেলে পড়াশোনা করে। ছেলের মুখে হাসি ফোটাতে ২০০ কিমি পথ সাইকেলে পাড়ি দিলেন রিকশাচালক রাজু। রাজুর গল্প জেনে সহায়তার হাত বাড়ায় সেনাবাহিনী। সাইকেলসহ একটি ট্রাকে রাজুর যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন দায়িত্বরত সেনাসদস্যরা। সঙ্গে পথে খাবার জন্য দেন কিছু শুকনো খাদ্যদ্রব্য।
১৮ জুন, ২০২৪। বয়সের ভারে নুয়ে পরেছেন ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধ বিমলা রানী। ঠিক মতো দেখতে পারেন না চোখে। কানেও শোনেন কম। চলাফেরার ক্ষমতাও কমে গেছে বৃদ্ধার। এক সময় তিন ছেলে নিয়ে সুখে সংসার করলেও এখন আর সংসারে জায়গা হয় না বৃদ্ধা মায়ের। ফেলে যান বগুড়ার বড়কুমিড়া এলাকায়। বিষয়টি চোখে পরে সেনা ক্যাম্পের লেফটেন্যান্ট আল ফাহাদের। পরম মমতায় নিজ হাতে খাবার তুলে দেন বৃদ্ধাকে। তিন সন্তানের কাছে উঠিয়ে দিয়ে আসেন সেই বৃদ্ধা মাকে। দেন সেনাবাহিনী থেকে সহায়তার আশ্বাস। বৃদ্ধার ছেলে মেয়ে বুঝতে পারেন তাদের ভুল।
২০২৪ আগস্ট। ছাত্র জনতার আন্দোলনে উত্তাল দেশ, রাজধানী। একদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা। অন্যদিকে অবস্থান করছে আওয়ামী প্রশাসনের পুলিশ বাহিনী ও সশস্ত্র গ্রুপ। যে কোন সময় গুলি ছুটে আসবে ছাত্র জনতার বুকে। ঠিক এমন সময় দেখা যায় সেনা সদস্যদের। সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখে উল্লাসে ফেটে পরে উপস্থিত জনতা। জনতার পাশে দাঁড়িয়ে ফাঁকা গুলি ছোঁড়েন সেনা সদস্যরা। সরে যায় প্রতিপক্ষ। জনতা এগিয়ে যায় রাজপথে।
এ সময় ৩ আগস্ট জনতার দিকে গুলি না ছুঁড়তে নির্দেশ দেন সেনা প্রধান। নির্বাহী আদেশ ছাড়া যেকোনো উসকানির মুখেও ছাত্র ও সাধারণ জনগণের দিকে গুলি না ছুড়তে সব সেনাসদস্যদের নির্দেশ প্রদান করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এ ছাড়া ডেপুটেশনে থাকা সামরিক কর্মকর্তাদের সর্বতোভাবে সহযোগিতা প্রদান করার আহ্বানও জানান তিনি।
এরপর ৫ আগস্ট। গোটা জাতি অপেক্ষায় আছে একটি ভাষণের। টেলিভিশনের পর্দায় জাতির উদ্যেশ্যে সেনা প্রধানের এক ঐতিহাসিক ভাষণ। দেশের অপামর সাধারণ মানুষের পাশে আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সাধারণ জনতার চুড়ান্ত বিজয় আসে সেই দিন।
ঐতিহাসিক সেই ভাষণে সেনা প্রধান বলেন, দেশে একটি রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। একটি অন্তবর্তী সরকার গঠন করা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন। আমরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। জনগণের উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধান আরও বলেন, দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখেন। আপনারা আমার ওপর আস্থা রাখেন, আমি সব দায়িত্ব নিচ্ছি। প্রতিটি হত্যার বিচার করা হবে। মারামারি সংঘাত করে আর কিছু পাব না। সংঘাত থেকে বিরত হোন। সবাই মিলে সুন্দর দেশ গড়ার চেষ্টা করি। আপনারা আমকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে এগিয়ে আসুন। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এভাবেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এবং জনতার কাছে একান্ত ভরসাস্থল হিসেবে উঠে আসে। কেবল আগস্ট নয়। এর আগেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীকে দেখা যায় শক্তিশালি একটি অবস্থানে।
অভ্যুত্থানের সময় অথবা অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন এবং আভ্যন্তরীন আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রথম সারিতে কাজ করে যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। কিন্তু এতকিছুর পরেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে বর্তমানে সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়ে অনেকেই অনেক আলোচনা করে আসছেন। অনেকের কাছেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং সেনা প্রধানের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ওঠানেরা প্রচেষ্টা দেখা যায়। কোন বিষয়ে প্রশ্ন তোলা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। প্রশ্নে তৈরি হয় জবাবদিহিতার পথ। তবে প্রশ্ন কখনো কখনো কেবল মাত্র প্রশ্নে সীমাবদ্ধ থাকে না। প্রশ্নের আড়ালে লুকিয়ে থাকে নানা মত, নানা পথ আর নানান অবস্থানকে প্রতিষ্ঠিত করার আকাঙ্খা।
যা অনেকটা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় তৈরি হওয়া ধারার প্রতিফলন।
একটি দেশ তৈরি হবার সময় থেকে আদ্যবধি যে প্রতিষ্ঠানটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে এসেছে সেই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে বিভিন্ন সময় সৃষ্টি করা হয়েছে নানান প্রশ্ন। এ বিষয়ে একটু গভীর দৃষ্টি দিলেই দেখা যায়, যখনই দেশ রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী এই সেনাবাহিনীকে ঘিরে প্রশ্ন ওঠানো হয় ঠিক তখনই দেশকে ঘিরে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে গভীর এক ষড়যন্ত্র।
যার মুখ্য উদ্যেশ্য থাকে সেনাবাহিনীকে যে কোন উপায়ে বিতর্কিত করে তোলা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে ঘিরে প্রশ্ন তোলার সেই পরিকল্পনা অনেকটাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। সেনাবাহিনীর এই অবস্থান আর দৃঢ়তার পেছনে রয়েছে বর্তমান সেনা প্রধান, সেনাবাহিনী সদস্য আর সাবেক সেনাসদস্যদের সমন্বিত এবং সুশৃঙ্খল অবস্থান।
সম্প্রতি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তি সময়ে বাংলাদেশ বেশ কিছু ঝুঁকির মাঝ দিয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে একটি অভ্যুত্থান পরবর্তি রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। গত প্রায় এক বছরে দেশের ভঙ্গুর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিকের পথে হাঁটছে। যদিও সম্পুর্ন স্বাভাবিক হতে এখনও সময় প্রয়োজন। তবে সেনা প্রধান ওয়াকার উজ জামানের দৃঢ় ব্যক্তিত্ব এবং প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি এখন পুর্বের চেয়ে অনেক পরিবর্তিত। যা ইতিমধ্যে দৃশ্যমান।
অন্যদিকে বিদেশি শক্তির সামনেও দেশের সেনাবাহিনী নিজেদের শক্তিশালি অবস্থান দেখিয়েছে। করিডোর ইস্যু সহ বেশ কিছু ইস্যুতে দেশের বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টাও অনেকটাই খর্ব করতে সক্ষম হয়েছে সেনাবাহিনী। যার নেতৃত্ব দেন সেনা প্রধান ওয়াকার উজ জামান।
দেশকে এগিয়ে নিতে সেনা প্রধান ওয়াকার উজ জামান সবসময়েই স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের বিষয়ে সজাগ। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর চেতনার মূল উৎস হলো সংবিধানের নির্দেশনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতির অসীম আত্মত্যাগ থেকে পাওয়া শিক্ষা। এই চেতনায় বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ।
রাজনৈতিক ক্ষমতা হোক অথবা প্রভাব। দেশের সামগ্রিক স্থিরতা রক্ষায় দেশের অন্যতম খুঁটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। যার দক্ষ এবং সুযোগ্য নেতৃত্ব ওয়াকার উজ জামানের হাতে। যিনি সেই নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করে আসছেন সততার সাথে। তবে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান শক্তি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং সাবেক ও বর্তমান সেনা সদস্যদের জন্য রাষ্ট্রেরও রয়েছে দায়িত্ব। রাষ্ট্র যেন সেই দায়িত্ব ভুলে না যায়।

রাজু আলীম
কবি, সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব