১০:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সংকট নিরসনে ভূ-পৃষ্ঠের পানি সংরক্ষণ অপরিহার্য

  • প্রকাশিত ০৪:৪৯:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ৩ বার দেখা হয়েছে

স্বদেশ বিচিত্রা প্রতিবেদক : বিশাল বরেন্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ঘাটতির কারণে পানি সংকট আরো গভীর হচ্ছে, যা প্রশমনের জন্য ভূ-পৃষ্ঠের পানি সংরক্ষণ অপরিহার্য।

বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি সংকট নিরসনে নিয়োজিত উন্নয়ন কর্মী জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, গত কয়েক দশক ধরে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলে সংকটকে আরো ঘণীভূত করেছে।

তিনি বলেন, এই অঞ্চলে ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবহার করে সেচ বৃদ্ধির সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। কারণ, এখানে অসংখ্য প্রাকৃতিক জলাশয় রয়েছে- যা এখনো অযত্নে ও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

আলম খান বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলায় বিলভাটিয়াসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার পুকুর, ২শ’টি খাল ও ১০টি বৃহৎ আকারের জলাশয় রয়েছে- যা প্রায় ৬,৩৮৮ একর আয়তনের একটি বিশাল জলাভূমি।

বিল পুনঃখনন করলে সংরক্ষিত পানি ব্যবহার করে সারা বছর ধরে কয়েক হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে সেচের সুবিধা পাওয়া যাবে।

একই জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রোহনপুরে আরো চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ জলাশয় রয়েছে। এটি পুনঃখনন করলে ২৫ হাজার কৃষকের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিকে ভূ-পৃষ্ঠের পানিতে সেচের আওতায় আনা সম্ভব। এছাড়াও, দুই কিলোমিটার দীর্ঘ চৌডালা-বোয়ালিয়া খালটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। সংস্কার করা হলে খালের পানি দিয়ে প্রায় ১৫০ হেক্টর কৃষি জমি সেচের সুবিধা পাবে।

ভূগর্ভস্থ পানির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে বিদ্যমান সমস্ত ভূ-গর্ভস্থ পানিভিত্তিক সেচ ব্যবস্থাকে ভূ-পৃষ্ঠের পানিতে রূপান্তর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উন্নয়ন কর্মী আরো বলেন, জলাবদ্ধতাপূর্ণ এলাকার প্রান্তিক ও অন্যান্য স্বল্প আয়ের পরিবারের জীবনযাত্রার জন্য ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়া জলসম্পদ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

তবে তিনি বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সংকট নিরসনের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রা ও জীবিকা নির্বাহের জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ অপরিহার্য। এখন সময় এসেছে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের প্রযুক্তির সুযোগ গ্রহণে সক্ষম করে তুলতে জনগোষ্ঠীর কাছে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়ার।

এদিকে, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সম্প্রতি ‘পুকুর পুনঃখনন ও ভূ-পৃষ্ঠের পানি বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে জলাবদ্ধ বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-পৃষ্ঠের পানির মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণের জন্য কাজ করছে।
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমানোর জন্য ভূ-পৃষ্ঠের পানি সেচই সর্বোত্তম হাতিয়ার বলে মনে হচ্ছে, যেখানে বর্তমানে অসংখ্য প্রাকৃতিক জলাশয় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া ও নাটোর জেলার ৪৩টি খরাপ্রবণ উপজেলায় পাঁচ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় প্রায় ১২৮.১৯ কোটি টাকা। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সেচ সরবরাহকারী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি আরো ৭১৫টি পরিত্যক্ত পুকুর ও ১০টি বদ্ধ জলাশয়কে পুনঃখননের আওতায় এনেছে।

ড. জামান বলেন, জলাশয় পুনঃখননের লক্ষ্য ছিল এই অঞ্চলের সেচ ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারের জন্য জলাশয়গুলোকে উপযুক্ত করে তোলা। প্রকল্পটি ৩,০৫৮ হেক্টর কৃষিক্ষেত্রে সেচ প্রদানের সুযোগ তৈরি করেছে, যার ফলে বছরে প্রায় ১৮,৩৪৮ টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়াও, পুনঃখনন করা এই জলাশয়গুলোতে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে ১,০৮৮ টন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রকল্পটি ভূগর্ভস্থ পানির ওপর ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান চাপ হ্রাস করছে এবং সংরক্ষিত জলাশয়ে মাছ ও হাঁস চাষ বৃদ্ধিতে জনগণকে উৎসাহিত করছে। এরআগে, বিএমডিএ জুন মাস পর্যন্ত ভূ-পৃষ্ঠের পানি-ভিত্তিক সেচ প্রচারের জন্য অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৩,০৯৮টি পুকুর, ২,০১১ কিলোমিটার খাল ও ৪১৩টি খনন-কূপ পুনঃখনন করেছে।
স্বদেশ বিচিত্রা/এআর

Tag :
জনপ্রিয়

বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সংকট নিরসনে ভূ-পৃষ্ঠের পানি সংরক্ষণ অপরিহার্য

প্রকাশিত ০৪:৪৯:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

স্বদেশ বিচিত্রা প্রতিবেদক : বিশাল বরেন্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ঘাটতির কারণে পানি সংকট আরো গভীর হচ্ছে, যা প্রশমনের জন্য ভূ-পৃষ্ঠের পানি সংরক্ষণ অপরিহার্য।

বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি সংকট নিরসনে নিয়োজিত উন্নয়ন কর্মী জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, গত কয়েক দশক ধরে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলে সংকটকে আরো ঘণীভূত করেছে।

তিনি বলেন, এই অঞ্চলে ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবহার করে সেচ বৃদ্ধির সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। কারণ, এখানে অসংখ্য প্রাকৃতিক জলাশয় রয়েছে- যা এখনো অযত্নে ও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

আলম খান বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলায় বিলভাটিয়াসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার পুকুর, ২শ’টি খাল ও ১০টি বৃহৎ আকারের জলাশয় রয়েছে- যা প্রায় ৬,৩৮৮ একর আয়তনের একটি বিশাল জলাভূমি।

বিল পুনঃখনন করলে সংরক্ষিত পানি ব্যবহার করে সারা বছর ধরে কয়েক হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে সেচের সুবিধা পাওয়া যাবে।

একই জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রোহনপুরে আরো চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ জলাশয় রয়েছে। এটি পুনঃখনন করলে ২৫ হাজার কৃষকের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিকে ভূ-পৃষ্ঠের পানিতে সেচের আওতায় আনা সম্ভব। এছাড়াও, দুই কিলোমিটার দীর্ঘ চৌডালা-বোয়ালিয়া খালটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। সংস্কার করা হলে খালের পানি দিয়ে প্রায় ১৫০ হেক্টর কৃষি জমি সেচের সুবিধা পাবে।

ভূগর্ভস্থ পানির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে বিদ্যমান সমস্ত ভূ-গর্ভস্থ পানিভিত্তিক সেচ ব্যবস্থাকে ভূ-পৃষ্ঠের পানিতে রূপান্তর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উন্নয়ন কর্মী আরো বলেন, জলাবদ্ধতাপূর্ণ এলাকার প্রান্তিক ও অন্যান্য স্বল্প আয়ের পরিবারের জীবনযাত্রার জন্য ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়া জলসম্পদ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

তবে তিনি বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সংকট নিরসনের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রা ও জীবিকা নির্বাহের জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ অপরিহার্য। এখন সময় এসেছে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের প্রযুক্তির সুযোগ গ্রহণে সক্ষম করে তুলতে জনগোষ্ঠীর কাছে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়ার।

এদিকে, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সম্প্রতি ‘পুকুর পুনঃখনন ও ভূ-পৃষ্ঠের পানি বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে জলাবদ্ধ বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-পৃষ্ঠের পানির মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণের জন্য কাজ করছে।
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমানোর জন্য ভূ-পৃষ্ঠের পানি সেচই সর্বোত্তম হাতিয়ার বলে মনে হচ্ছে, যেখানে বর্তমানে অসংখ্য প্রাকৃতিক জলাশয় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া ও নাটোর জেলার ৪৩টি খরাপ্রবণ উপজেলায় পাঁচ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় প্রায় ১২৮.১৯ কোটি টাকা। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সেচ সরবরাহকারী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি আরো ৭১৫টি পরিত্যক্ত পুকুর ও ১০টি বদ্ধ জলাশয়কে পুনঃখননের আওতায় এনেছে।

ড. জামান বলেন, জলাশয় পুনঃখননের লক্ষ্য ছিল এই অঞ্চলের সেচ ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারের জন্য জলাশয়গুলোকে উপযুক্ত করে তোলা। প্রকল্পটি ৩,০৫৮ হেক্টর কৃষিক্ষেত্রে সেচ প্রদানের সুযোগ তৈরি করেছে, যার ফলে বছরে প্রায় ১৮,৩৪৮ টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়াও, পুনঃখনন করা এই জলাশয়গুলোতে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে ১,০৮৮ টন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রকল্পটি ভূগর্ভস্থ পানির ওপর ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান চাপ হ্রাস করছে এবং সংরক্ষিত জলাশয়ে মাছ ও হাঁস চাষ বৃদ্ধিতে জনগণকে উৎসাহিত করছে। এরআগে, বিএমডিএ জুন মাস পর্যন্ত ভূ-পৃষ্ঠের পানি-ভিত্তিক সেচ প্রচারের জন্য অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৩,০৯৮টি পুকুর, ২,০১১ কিলোমিটার খাল ও ৪১৩টি খনন-কূপ পুনঃখনন করেছে।
স্বদেশ বিচিত্রা/এআর