পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকার বেইলি রোডস্থ পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের সূচনায় কেক কেটে শুভ উদ্বোধন করেন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব সুপ্রদীপ চাকমা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মো. আব্দুল খালেক। উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ সংস্থাসমূহের কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধিগণ।
আলোচনা সভায় উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন, শান্তি, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থার প্রসারে সরকার গ্রহণকৃত উদ্যোগ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং পিছিয়ে পড়া জনপদের প্রয়োজন বিবেচনায় ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই মন্ত্রণালয়ের যাত্রা শুরু হয়।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা জানান, পার্বত্য এলাকায় Affirmative Action ও মেইনস্ট্রিমের সাথে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের অতিরিক্ত বাজেটের বরাদ্দ গ্রহণ না করে ফেরত দেওয়ার প্রবণতা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। বাজেটের যথাসময়ে সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর তিনি জোর দেন।
শিক্ষার ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় চলতি বছরের মধ্যে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে ১০০টি স্কুলে ই-লার্নিং চালু করার পরিকল্পনার কথা জানান উপদেষ্টা। এছাড়া ৪০টি হোস্টেল নির্মাণ কাজ শেষের দিকে রয়েছে এবং দুর্গম এলাকায় স্কুল, কলেজ, ও হোস্টেল স্থাপন করায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া ও ঝরে পড়ার হার হ্রাস পেয়েছে বলে তিনি জানান। শিক্ষকদের জন্য ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার কথাও তিনি তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই শিক্ষাবিপ্লব একদিন দেশের অন্যান্য পশ্চাৎপদ অঞ্চলের জন্য একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে উঠবে। সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ, মর্যাদাসম্পন্ন ও উন্নত পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়ে তোলার সম্ভাবনার কথাও তিনি ব্যক্ত করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল খালেক তাঁর বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। বাজেটের সুসম বণ্টন ও বরাদ্দের যৌক্তিকতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য আগে জানতে হবে কোথায় কোন জায়গায় কী প্রয়োজন আছে। তিনি পার্বত্য এলাকায় মন্ত্রণালয়ের নাম ভাংগিয়ে কোন ধরনের আর্থিক সুবিধাদি নেওয়ার বিষয়ে কঠোর হুশিয়ারি দেন। এ ধরণের কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান সুদত্ত চাকমা, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার, বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থানজামা লুসাই, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা, অতিরিক্ত সচিব ড. রাশিদা ফেরদৌস এবং আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গৌতম কুমার চাকমা।অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত আলোচনা ও মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়, যেখানে বক্তারা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ, জনবান্ধবতা বৃদ্ধি ও শিক্ষার মানোন্নয়নের বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।