০৭:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশ ঘোষ বিধান,পাইকগাছা (খুলনা) :

পাইকগাছায় তাল গাছের রস আহরণের মৌসুম শুরু

  • প্রকাশিত ০৫:৩১:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৫ বার দেখা হয়েছে

খুলনার পাইকগাছায় তাল গাছের রস আহরণের মৌসুম পুরাদমে শুরু হয়েছে। গাছিরা রস আহরণে তালগাছে ব্যস্ত দিন পার করছে। তালের রস সুমিষ্ট ও পাটালি গুড় সবার কাছে মুখরোচক। এ কারণে তালের রস ও গুড়ে কদর রয়েছে সবার কাছে।

উপকূলের পাইকগাছা উপজেলায় গদাইপুর, গোপালপুর, তোকিয়া, হেতামপুর, বাঁকা, কপিলমুনি, সলুয়া, শ্যামনগর গ্রামে তাল গাছের রস আহরণে গাছিরা সারাদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফাল্গুনের শেষ ও চৈত্র মাসের প্রথম থেকে তালের রস আহরণের জন্য গাছিরা তাল গাছ পরিচর্যা শুরু করে। চৈত্র মাস থেকে আষাড় মাষের শেষ পর্যন্ত তালের রস আহরণ চলবে। বর্ষাকাল আসলে আর রস আহরণ করা যায় না। তালগাছে উঠার জন্য সোজা শক্ত বাঁশের প্রয়োজন হয়। গাছ ছোট-বড় হিসাবে বাঁশের প্রয়োজন হয়। বাঁশের প্রতিটি গিরায় কুঞ্চি ৬/৮ ইঞ্চি রেখে বাকিটা কেঁটে ফেলা হয়। বাঁশের গিরার এই কুঞ্চি সিঁড়ি হিসাবে বেয়ে ওঠা নামা করতে হয়। তালগাছ ২ প্রকারের ফল ও জটা। এ ২ ধরণের রস আহরণ করা যায়। তালের জট ও ফলের কাধির মুচা ৬ ইঞ্চি মতো বের হলে রস আহরণের জন্য কাঁটা আহরণ শুরু করতে হয়। প্রতিটি গাছে ৬টি কাধি বা মুচা রেখে বাকি গুলো কেঁটে রাখা হয়। জটা তাল গাছের জটার মুচার সারিগুলো শক্তভাবে বেঁধে রাখা হয়। জট বা কাঁধির শেষ প্রান্ত থেকে ধারালো দা দিয়ে পাতলা করে কাঁটা শুরু করা হয়। কয়েকদিন কাঁটার পর রসের পরিমাণ বাড়লে রস আহরণ শুরু হয়। রস আহরণের জন্য প্রতিটি গাছে ১২টি ঘট প্রয়োজন হয়। প্রতিদিন ৩ বার গাছের মুচা বা কাধি পাতলা করে কেঁটে রস আহরণ করা হয়। সকালে ও বিকালের রস গাছ থেকে নামানো হয়। আর দুপুর বেলায় শুধু মুচা বা কাধি পাতলা করে কাঁটা হয়। প্রতিদিন একটি গাছে থেকে ১৩ থেকে ১৫ লিটার রস পাওয়া যায়। সকালে ৮-৯ লিটার ও বিকালে ৫-৬ লিটার রস হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়ানের মোঃ আনোয়ার গাজী জানান, তিনি প্রায় ১৭-১৮বছর যাবৎ তালগাছের রস আহরণ করে আসছে। তার পিতা মোঃ নজরুল গাজী প্রায় ৪০ বছর যাবত কৃষি কাজের পাশাপাশি প্রতিবছর খেঁজুর ও তালের রস আহরণ করে। তিনি জানান, তাল গাছের মালিকের কাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ শত টাকা হারি হিসাবে ৬টি গাছ এ মৌসুমে লীজ নিয়ে তালের রস সংগ্রহ করছেন। এক ভাড় রস পাইকারী ১৫০ টাকা ও খুচরা গ্লাস প্রতি ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি তালের পাটালি ২শত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৪ লিটার রস জ্বালিয়ে ৭০০ গ্রাম গুড় তৈরি হয়। একটি তালগাছ থেকে মৌসুমে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। তবে তিনি জানান, এখন আর কেউ তালের রস আহরণ করার জন্য এই কাজে আসতে চাই না। তালের রস আহরণে প্রায় সারা দিন তালগাছের জন্য ব্যয় করতে হয়। বাঁশ বেয়ে গাছে ওঠা নামা ও মাজায় বেঁধে ঘট ও রস নামানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এ কষ্টের কাজে গাছি কাজ করতে কেউ এগিয়ে আসছে না। নতুন করে গাছি তৈরি না হলে আগামীতে হয়তো এ এলাকায় তালের রস সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। গাছি মোঃ নজরুল গাজী জানান, এ এলাকায় তাল গাছের যত গাছি রয়েছে অধিকাংশ তার শিস্য। নতুন করে গাছির কাজে কেউ না আসায় তিনি কিছুটা হতাশ, হয়তো এক সময় তালের রস বের করার এই শিল্প এলাকা থেকে হারিয়ে যাবে।

তালগাছ প্রাকৃতিক দূর্যোগ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারপরও নির্বিচারে তালগাছ নিধন করায় এলাকা থেকে তালগাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমনি গাছির অভাবে তালগাছ থেকে রস বের করা সম্ভব হচ্ছে না। তালগাছ টিকিয়ে রাখতে ও তালের রস আহরণ করার জন্য সরকারী ভাবে গাছির প্রশিক্ষণ ও সরকারী ভাবে প্রদয়না দিলে অনেকেই হয়তো গাছির কাজ করতে আগ্রহী হবে। এ জন্য এলাকার গাছিরা কৃষি অধিদপ্তর ও সরকারের প্রতি তালের রস আহরণের শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এই অর্থকারী খাতের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করেছে।

Tag :
জনপ্রিয়

মধুপুরে সর্বস্তরের জনতার ব্যানারে সওদাগরদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত

প্রকাশ ঘোষ বিধান,পাইকগাছা (খুলনা) :

পাইকগাছায় তাল গাছের রস আহরণের মৌসুম শুরু

প্রকাশিত ০৫:৩১:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

খুলনার পাইকগাছায় তাল গাছের রস আহরণের মৌসুম পুরাদমে শুরু হয়েছে। গাছিরা রস আহরণে তালগাছে ব্যস্ত দিন পার করছে। তালের রস সুমিষ্ট ও পাটালি গুড় সবার কাছে মুখরোচক। এ কারণে তালের রস ও গুড়ে কদর রয়েছে সবার কাছে।

উপকূলের পাইকগাছা উপজেলায় গদাইপুর, গোপালপুর, তোকিয়া, হেতামপুর, বাঁকা, কপিলমুনি, সলুয়া, শ্যামনগর গ্রামে তাল গাছের রস আহরণে গাছিরা সারাদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফাল্গুনের শেষ ও চৈত্র মাসের প্রথম থেকে তালের রস আহরণের জন্য গাছিরা তাল গাছ পরিচর্যা শুরু করে। চৈত্র মাস থেকে আষাড় মাষের শেষ পর্যন্ত তালের রস আহরণ চলবে। বর্ষাকাল আসলে আর রস আহরণ করা যায় না। তালগাছে উঠার জন্য সোজা শক্ত বাঁশের প্রয়োজন হয়। গাছ ছোট-বড় হিসাবে বাঁশের প্রয়োজন হয়। বাঁশের প্রতিটি গিরায় কুঞ্চি ৬/৮ ইঞ্চি রেখে বাকিটা কেঁটে ফেলা হয়। বাঁশের গিরার এই কুঞ্চি সিঁড়ি হিসাবে বেয়ে ওঠা নামা করতে হয়। তালগাছ ২ প্রকারের ফল ও জটা। এ ২ ধরণের রস আহরণ করা যায়। তালের জট ও ফলের কাধির মুচা ৬ ইঞ্চি মতো বের হলে রস আহরণের জন্য কাঁটা আহরণ শুরু করতে হয়। প্রতিটি গাছে ৬টি কাধি বা মুচা রেখে বাকি গুলো কেঁটে রাখা হয়। জটা তাল গাছের জটার মুচার সারিগুলো শক্তভাবে বেঁধে রাখা হয়। জট বা কাঁধির শেষ প্রান্ত থেকে ধারালো দা দিয়ে পাতলা করে কাঁটা শুরু করা হয়। কয়েকদিন কাঁটার পর রসের পরিমাণ বাড়লে রস আহরণ শুরু হয়। রস আহরণের জন্য প্রতিটি গাছে ১২টি ঘট প্রয়োজন হয়। প্রতিদিন ৩ বার গাছের মুচা বা কাধি পাতলা করে কেঁটে রস আহরণ করা হয়। সকালে ও বিকালের রস গাছ থেকে নামানো হয়। আর দুপুর বেলায় শুধু মুচা বা কাধি পাতলা করে কাঁটা হয়। প্রতিদিন একটি গাছে থেকে ১৩ থেকে ১৫ লিটার রস পাওয়া যায়। সকালে ৮-৯ লিটার ও বিকালে ৫-৬ লিটার রস হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়ানের মোঃ আনোয়ার গাজী জানান, তিনি প্রায় ১৭-১৮বছর যাবৎ তালগাছের রস আহরণ করে আসছে। তার পিতা মোঃ নজরুল গাজী প্রায় ৪০ বছর যাবত কৃষি কাজের পাশাপাশি প্রতিবছর খেঁজুর ও তালের রস আহরণ করে। তিনি জানান, তাল গাছের মালিকের কাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ শত টাকা হারি হিসাবে ৬টি গাছ এ মৌসুমে লীজ নিয়ে তালের রস সংগ্রহ করছেন। এক ভাড় রস পাইকারী ১৫০ টাকা ও খুচরা গ্লাস প্রতি ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি তালের পাটালি ২শত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৪ লিটার রস জ্বালিয়ে ৭০০ গ্রাম গুড় তৈরি হয়। একটি তালগাছ থেকে মৌসুমে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। তবে তিনি জানান, এখন আর কেউ তালের রস আহরণ করার জন্য এই কাজে আসতে চাই না। তালের রস আহরণে প্রায় সারা দিন তালগাছের জন্য ব্যয় করতে হয়। বাঁশ বেয়ে গাছে ওঠা নামা ও মাজায় বেঁধে ঘট ও রস নামানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এ কষ্টের কাজে গাছি কাজ করতে কেউ এগিয়ে আসছে না। নতুন করে গাছি তৈরি না হলে আগামীতে হয়তো এ এলাকায় তালের রস সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। গাছি মোঃ নজরুল গাজী জানান, এ এলাকায় তাল গাছের যত গাছি রয়েছে অধিকাংশ তার শিস্য। নতুন করে গাছির কাজে কেউ না আসায় তিনি কিছুটা হতাশ, হয়তো এক সময় তালের রস বের করার এই শিল্প এলাকা থেকে হারিয়ে যাবে।

তালগাছ প্রাকৃতিক দূর্যোগ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারপরও নির্বিচারে তালগাছ নিধন করায় এলাকা থেকে তালগাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমনি গাছির অভাবে তালগাছ থেকে রস বের করা সম্ভব হচ্ছে না। তালগাছ টিকিয়ে রাখতে ও তালের রস আহরণ করার জন্য সরকারী ভাবে গাছির প্রশিক্ষণ ও সরকারী ভাবে প্রদয়না দিলে অনেকেই হয়তো গাছির কাজ করতে আগ্রহী হবে। এ জন্য এলাকার গাছিরা কৃষি অধিদপ্তর ও সরকারের প্রতি তালের রস আহরণের শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এই অর্থকারী খাতের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করেছে।