০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
জামিল জাহাঙ্গীর :

নরসুন্দা চন্দ্রাবতীর ছোঁয়া এখন মৃতপ্রায়

  • প্রকাশিত ০৫:৪৫:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫
  • ৯ বার দেখা হয়েছে

এককালের খরস্রোতা নদী এখন মরা খালে পরিণত। যে নদী দিয়ে বছরজুড়ে পালতোলা নৌকা চলতো- সেই নদী এখন ধানী জমি। তখন সারা দেশের সঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলার নদীপথের যোগাযোগ ছিল। তবে এখন আর সে আগের রূপ নেই। কেউ দেখলে বিশ্বাসই করবে না যে এখানে খরস্রোতা নদী ছিল। নরসুন্দা নদী বা নাগচিনি নদীর দৈর্ঘ্য ৫৭ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৮০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।

এই নদী হোসেনপুর-পাকুন্দিয়া দু’টি উপজেলার সীমানার নিকট ব্রহ্মপুত্রের সাথে যুক্ত। অন্যদিকে বাদলার নিকট ধনু নদীর সাথে সংযুক্ত। স্থানীয়ভাবে এই সংযোগস্থল ‘চৌগংগা’ নামে পরিচিত। চৌগংগা মানে ধনু, নরসুন্দা, ঘরভাংগা ও গোপী/বর্নি’র মিলনস্থল। এই নদী তাড়াইলের প্রান্ত ছুঁয়ে করিমগঞ্জ থানার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিন্নাটি ইউনিয়নের পাটাবুকা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এর আরেকটি শাখা।

অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ থানা বা জেলা অতিক্রম করে ঝাওগারচর, তারাকান্দি, দগদগা, জাঙ্গালিয়া, বানাইল, কাওনা, বাসুরচর, আশুতিয়া, রামপুর, পুমদী, প্যারাভাঙ্গা, ভূরুঙ্গারচর, কাতিয়ারচর ইত্যাদি হয়ে কিশোরগঞ্জ সদর শহরে এসে প্রবেশ করেছে। বর্তমান নরসুন্দার মৃত অবস্থায় যেখানে কোন স্রোত নেই সেখানে তার সামান্য জলধারার জন্যই ব্রহ্মপুত্রই একমাত্র ভরসা। নরসুন্দার অপর জলপ্রবাহ ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার ভিতর দিয়ে ধলেশ্বরী নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিশোরগঞ্জ সদর থানার মাইজখাপন ইউনিয়নের কাচারীপাড়ায় নরসুন্দা নামে কিশোরঞ্জে প্রবেশ। কবি চন্দ্রাবতী মন্দিরের প্রায় ১ কিঃ মিঃ পশ্চিম দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরো সামনে মূলধারার সথে যুক্ত হয়েছে। এই অংশে কেবল বর্ষাকালেই পানি থাকে।

নিকলীতে নরসুন্দা এই শাখা সারাবছরই নাব্য থাকে, দামপাড়ার প্রসিদ্ধ পাটের গুদামগুলো এর তীরে অবস্থিত, যা অতীত দিনের গৌরবময় স্মৃতির কথা আজো মনে করিয়ে দেয়। নরসুন্দা নদী একমাত্র নিকলীতেই এখন জীবিত বা নাব্য থাকে সবঋতুতে। কিশোরগঞ্জ শহরের পুরানথানা বাজারের কাছে নরসুন্দা নদীর বাঁক থেকে যে শাখাটি মনিপুরীঘাট হয়ে উথরিয়া বিলের সাথে সংযুক্ত তাঁর মধ্যে মনিপুরীঘাট পর্যন্ত অংশটি কাটাখাল নামে পরিচিত।

কিশোরগঞ্জে মূল নরসুন্দা নদীর দৈর্ঘ্য ৫৮ কিঃ মিঃ। এক সময় কিশোরগঞ্জ শহরের প্রধান আকর্ষণ ছিল এই নদী এবং অদ্যাবধি তা কিশোরগঞ্জ শহরকে দুভাবে বিভক্ত করে রেখেছে একে নিয়ে অনেক গল্প, কাহিনী, কিংবদন্তী মনে গেথে থাকলেও সেই খরস্রোতা নরসুন্দা বর্তমানে মৃত, স্থানে স্থানে তার বুকে ধানের সবুজ চারা শোভা পায়। পাকিস্তান আমলে হোসেনপুরের কাওনা নামক স্থানে নরসুন্দার ওপর আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীটি তার স্বাভাবিক নাব্যতা হারায়। মূলত এরপর থেকেই শুরু হয় অবৈধ দখলদারদের জবর প্রতিযোগিতা।

অধুনা ব্রহ্মপুত্রের গতি পরিবর্তনের ফলে কালের প্রবাহে নরসূন্দাও হারিয়ে ফেলেছে যৌবন। এখন আর তীব্র স্রোতে জল চিকচিক করে না। এই জলে ডুব দিলে মানুষ হয়ে ওঠে না সুন্দরতম। তাই এখন আর ব্রহ্মপুত্র তার বুকে যুক্ত এই প্রবাহকে নতুন করে বশীকরণ মন্ত্র শেখায় না। মানুষ অল্প অল্প করে গিলে ফেলছে নরসুন্দা। অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি করে এর মৃত্যুই নিশ্চিত করছে। নদীকে নদীর কাছে ফিরিয়ে দেবার কোন উদ্যোগ নেই।

Tag :
জনপ্রিয়

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমানের ৩১ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাবো এড, এম এ মান্নান

জামিল জাহাঙ্গীর :

নরসুন্দা চন্দ্রাবতীর ছোঁয়া এখন মৃতপ্রায়

প্রকাশিত ০৫:৪৫:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫

এককালের খরস্রোতা নদী এখন মরা খালে পরিণত। যে নদী দিয়ে বছরজুড়ে পালতোলা নৌকা চলতো- সেই নদী এখন ধানী জমি। তখন সারা দেশের সঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলার নদীপথের যোগাযোগ ছিল। তবে এখন আর সে আগের রূপ নেই। কেউ দেখলে বিশ্বাসই করবে না যে এখানে খরস্রোতা নদী ছিল। নরসুন্দা নদী বা নাগচিনি নদীর দৈর্ঘ্য ৫৭ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৮০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।

এই নদী হোসেনপুর-পাকুন্দিয়া দু’টি উপজেলার সীমানার নিকট ব্রহ্মপুত্রের সাথে যুক্ত। অন্যদিকে বাদলার নিকট ধনু নদীর সাথে সংযুক্ত। স্থানীয়ভাবে এই সংযোগস্থল ‘চৌগংগা’ নামে পরিচিত। চৌগংগা মানে ধনু, নরসুন্দা, ঘরভাংগা ও গোপী/বর্নি’র মিলনস্থল। এই নদী তাড়াইলের প্রান্ত ছুঁয়ে করিমগঞ্জ থানার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিন্নাটি ইউনিয়নের পাটাবুকা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এর আরেকটি শাখা।

অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ থানা বা জেলা অতিক্রম করে ঝাওগারচর, তারাকান্দি, দগদগা, জাঙ্গালিয়া, বানাইল, কাওনা, বাসুরচর, আশুতিয়া, রামপুর, পুমদী, প্যারাভাঙ্গা, ভূরুঙ্গারচর, কাতিয়ারচর ইত্যাদি হয়ে কিশোরগঞ্জ সদর শহরে এসে প্রবেশ করেছে। বর্তমান নরসুন্দার মৃত অবস্থায় যেখানে কোন স্রোত নেই সেখানে তার সামান্য জলধারার জন্যই ব্রহ্মপুত্রই একমাত্র ভরসা। নরসুন্দার অপর জলপ্রবাহ ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার ভিতর দিয়ে ধলেশ্বরী নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিশোরগঞ্জ সদর থানার মাইজখাপন ইউনিয়নের কাচারীপাড়ায় নরসুন্দা নামে কিশোরঞ্জে প্রবেশ। কবি চন্দ্রাবতী মন্দিরের প্রায় ১ কিঃ মিঃ পশ্চিম দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরো সামনে মূলধারার সথে যুক্ত হয়েছে। এই অংশে কেবল বর্ষাকালেই পানি থাকে।

নিকলীতে নরসুন্দা এই শাখা সারাবছরই নাব্য থাকে, দামপাড়ার প্রসিদ্ধ পাটের গুদামগুলো এর তীরে অবস্থিত, যা অতীত দিনের গৌরবময় স্মৃতির কথা আজো মনে করিয়ে দেয়। নরসুন্দা নদী একমাত্র নিকলীতেই এখন জীবিত বা নাব্য থাকে সবঋতুতে। কিশোরগঞ্জ শহরের পুরানথানা বাজারের কাছে নরসুন্দা নদীর বাঁক থেকে যে শাখাটি মনিপুরীঘাট হয়ে উথরিয়া বিলের সাথে সংযুক্ত তাঁর মধ্যে মনিপুরীঘাট পর্যন্ত অংশটি কাটাখাল নামে পরিচিত।

কিশোরগঞ্জে মূল নরসুন্দা নদীর দৈর্ঘ্য ৫৮ কিঃ মিঃ। এক সময় কিশোরগঞ্জ শহরের প্রধান আকর্ষণ ছিল এই নদী এবং অদ্যাবধি তা কিশোরগঞ্জ শহরকে দুভাবে বিভক্ত করে রেখেছে একে নিয়ে অনেক গল্প, কাহিনী, কিংবদন্তী মনে গেথে থাকলেও সেই খরস্রোতা নরসুন্দা বর্তমানে মৃত, স্থানে স্থানে তার বুকে ধানের সবুজ চারা শোভা পায়। পাকিস্তান আমলে হোসেনপুরের কাওনা নামক স্থানে নরসুন্দার ওপর আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীটি তার স্বাভাবিক নাব্যতা হারায়। মূলত এরপর থেকেই শুরু হয় অবৈধ দখলদারদের জবর প্রতিযোগিতা।

অধুনা ব্রহ্মপুত্রের গতি পরিবর্তনের ফলে কালের প্রবাহে নরসূন্দাও হারিয়ে ফেলেছে যৌবন। এখন আর তীব্র স্রোতে জল চিকচিক করে না। এই জলে ডুব দিলে মানুষ হয়ে ওঠে না সুন্দরতম। তাই এখন আর ব্রহ্মপুত্র তার বুকে যুক্ত এই প্রবাহকে নতুন করে বশীকরণ মন্ত্র শেখায় না। মানুষ অল্প অল্প করে গিলে ফেলছে নরসুন্দা। অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি করে এর মৃত্যুই নিশ্চিত করছে। নদীকে নদীর কাছে ফিরিয়ে দেবার কোন উদ্যোগ নেই।