মনির হোসেন নবীনগর থেকে : এক সময় ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে রাজা- বাদশাহরা দেশ শাসন করতেন। যুদ্ধক্ষেত্রে ও ঘোড়ার ব্যবহার হত। সেই আদিকাল থেকেই কৃষি কাজে ঘোড়ার ব্যবহার হয়ে আসছে। কৃষকরা ঘোড়ার পাশাপাশি গরু-মহিষও ব্যবহার করত। কিন্ত কালের বিবর্তনে পশু দিয়ে হাল চাষ আজ বিলুপ্তির পথে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কৃষিক্ষেত্রে ও এসেছে আমুল পরিবর্তন। বর্তমানে কৃষকরা উন্নতমানের যান্ত্রিক প্রযুক্তির সাহায্যে জমি হালচাষ করছেন। তবে ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে এসেও ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষক আব্দুল সাত্তার মিয়া (৪৪), তাঁর নেই নিজস্ব কোন জমি-জমা। এই ঘোড়ার হাল চাষের আয় দিয়েই ঘোরাচ্ছেন সংসার- জীবিকার চাকা। তিনি উপজেলার শিবপুর গ্রামের হামিদ মিয়ার ছেলে। তিনি প্রতি বিঘা জমি চাষের জন্য ৫০০ টাকা পান।
প্রতিদিন গড়ে ৭৫০ থেকে ১০০০ টাকা আয় করতে পারেন বলে জানান। এ বিষয়ে সাত্তার মিয়া বলেন- “এখন লোকজন ট্রাক্টর দিয়ে জমিতে হাল চাষ করেন। তবে যে সব জমিতে ট্রাক্টর যায় না, সে সব জমি আমি ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে দেয়”। গরু দিয়ে কেন হালচাষ করেন না কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন- “গরুর দাম বেশি, এত টাকা দিয়ে আমার পক্ষে গরু কেনা সম্ভব না। তা ছাড়া গরুর চেয়ে ঘোড়া দিয়ে দ্রুত হাল চাষ করা যায়। তিনি তাঁর ঘোড়ার হাল দিয়ে ইরি-বোরোসহ রবি ফসলের জমিতে চাষাবাদ করেন। তিনি জানান- প্রতি দিন ভোর থেকে শুরু করে সকালের নাস্তা খাওয়া পর্যন্ত ১-২ বিঘা জমি চাষ করা যায়। এ ছাড়া অন্য সময় হালচাষ বা জমিতে মই দেন। তিনি আরো জানান -বর্ষা মৌসুমে যখন হালচাষ থাকে না তখন ঘোড়া গুলো সরিষার তেলের ঘানিতে কাজে লাগাই। জমির মালিক কামাল মিয়া বলেন- “আমার জমি ছোট হওয়ায় ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা যায় না। তাই আমি সাত্তার মিয়ার দ্বারস্থ হয়।
এতে করে দরিদ্র সাত্তার মিয়ার ও কিছু আয় হয়। সুর সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ ডিগ্রি কলেজের এইচ.এস.সি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. মামুন বলেন- “আগে জানতাম ঘোড়া- দৌঁড় প্রতিযোগিতা ও ঘোড়ার গাড়ির সৌখিনতার কথা। মানুষ শখের বসে ঘোড়া লালন-পালন করে, ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াত। মালামাল টানতেও ঘোড়াকে ব্যবহার হয়। কিন্ত ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষ করা তেমন একটা দেখা যায় না”। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন- “কৃষকরা এখন যান্ত্রিক উপায়ে জমিচাষ করেন। সময়ের পরিবর্তনে ঘোড়ার গাড়িও উঠে গেছে। এ সময় ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করা দুর্লভ বিষয়”।