বাংলাদেশে‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও জনমতের বিভাজন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২৫ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করে ১৬ জুলাইকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’,৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ এবং ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। তবে এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নানা রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং তরুণ আন্দোলনের নেতারা ৮ আগস্টকে নতুন বাংলাদেশের সূচনার দিন হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানান।জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর তিন শীর্ষ নেতা—আখতার হোসেন, হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম—একাধিক ফেসবুক পোস্ট ও বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলেন, ৫ আগস্টই প্রকৃত নতুন বাংলাদেশের জন্মদিন। ওই দিন ছাত্র ও সাধারণ জনগণের গণআন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় এবং একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাংলাদেশ পা রাখে।দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন,“৫ আগস্টের সাধারণ ছাত্র-জনতার এই অর্জনকে সরকারের কুক্ষিগত করার চেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না।”অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের নেতা সারজিস আলম বলেন,“৮ আগস্ট দ্বিতীয় স্বাধীনতা শুরু হয়নি— বরং দ্বিতীয় স্বাধীনতা নষ্টের, ছাড় দেওয়ার এবং বিপ্লব বেহাতের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ৫ আগস্টই প্রকৃত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ ও ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস’।”এছাড়াও এনসিপি’র আরেক শীর্ষ নেতা আখতার হোসেন আরও বলেন, “নতুন বাংলাদেশ দিবস সেদিন হবে, যেদিন জুলাই ঘোষণাপত্র আসবে, মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়িত হবে। এখন যা হয়েছে, তা জনগণের সংগ্রামকে বিকৃত করার চেষ্টা।”এই দাবির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “৫ আগস্টে জনগণ ইতিহাস গড়েছিল, ৮ আগস্ট একটি কৌশলগত পদক্ষেপ মাত্র।”সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে গ্রহণ করার বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গড়ে উঠেছে। সিনিয়র সাংবাদিক আনিস আলমগীর মন্তব্য করেছেন, “৮ আগস্টের ঘোষণা প্রমাণ করে ড. ইউনূস তার সিংহাসনে আরোহণের দিনটিকে স্থায়ী করতে চাচ্ছেন।”সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এই বিতর্ককে কেন্দ্র করে সরকার দিবসগুলোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনার কথা ভাবছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, “দিবস ঘোষণার সিদ্ধান্তটি নিয়ে দুই-এক দিনের মধ্যেই পুনরায় আলোচনা ও পর্যালোচনা হতে পারে।”এদিকে, আন্দোলনের পথিকৃৎ ছাত্র-জনতা ৫ আগস্টকে জাতীয় দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, জনগণের ত্যাগ ও সংগ্রামকে বাদ দিয়ে কোনো দিবস পালন করলে তা হবে ইতিহাসের প্রতি অবমাননা।এই মুহূর্তে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’কে ঘিরে সরকার ও নাগরিক সমাজের মধ্যে যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে, তা আগামী দিনের রাজনীতিতে বড় ধরনের সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক বিভাজনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সরকার পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিলে হয়তো এই বিরোধ কমবে, না হলে নতুন বাংলাদেশ দিবস নিয়ে গণআন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম