স্বদেশ বিচিত্রা প্রতিবেদক: দোয়ারাবাজারে বোরো ধান গোলায় তুলতে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পারকরছে। দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই ধান আর ধান। বোরো ধানের ঘ্রাণে মুখর হাওর এলাকার চারপাশ। ফসলের মাঠের বুক চিরে সুদূরে গিয়ে মিলিত হয়েছে মেঠো পথ। পথের দ্বারে দ্বারে স্তুপ দিয়ে রাখা হয়েছে বোরো ধান। কেউ ধান স্তুপ দিয়ে রাখছেন, আবার কেউ ধান মাড়াই করছেন মেশিনে। আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা। বাতাসে দোল খাচ্ছে ধানের শীষ। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে কৃষকদের ধান কাটা এবং ধান মাড়াই করে ঘরে তোলার ব্যস্ততা দেখা গেছে হাওর পাড়ে। সম্প্রতি আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সতর্কতা কৃষকদের ব্যস্ততা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও আগাম বন্যার শঙ্কায় বোরো ফসল ঘরে তুলতে কাস্তে হাতে নিয়ে কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছেন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার কৃষান-কৃষানীরা।
উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ৩৮ ভাগ বোরো ধান কর্তন হয়েগেছে। শতভাগ কর্তন হতে আরো অন্তত ৫-৬ দিন লাগতে পারে।উপজেলায় এবার বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৯০১ হেক্টর। বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে কালনার হাওরপাড়ে স্থানীয় কৃষকদের সাথে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। কৃষকেরা বলছেন, এখনো অনেক ধান পাকার বাকি। তারপরও তড়িগড়ি করে পাকা-আধা পাকা ধান কাটতে হচ্ছে। কখন আবহাওয়া খারাপ করে বসে তাঁর কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই সময়ের মধ্যেই ধান কাটতে হবে, মাড়াই করতে হবে। তারপর ধান শুকিয়ে ঘরে তুলতে হবে। তাছাড়া ধানের পাশাপাশি খড় শুকিয়ে সংগ্রহ করতে হবে গো খাদ্যের জন্য।
আলীপুর গ্রামের কৃষক মোবারক মিয়া বলেন, ‘৩০ শতক জমিতে এইবার হাইব্রিড সুরভি জাতের ধান লাগাইছি। ভালো ফলন হইছে। আশা করছি ২০ মন ধান পাওয়া যাইব। শ্রমিক পাওয়া যায়না। ভাগে শ্রমিক লইছি। ধানের ৫ ভাগের এক ভাগ তারারে দেওয়া লাগব।’
ধান কাটার শ্রমিক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমরা দলবদ্ধ ভাবে ধান কাটি। একেক দল একেকজনের জমিতে ধান কাটে। জমির মালিকের ধান কেটে দিলে ৫ ভাগের এক ভাগ ধান আমরা পাই। দলের সবাই এই ধান ভাগবন্টন করে নিই।’কানলার হাওরের কৃষক দিন ইসলাম বলেন, ‘আমার ধান এখনো পাকেনি। ধান পাকতে আরো অন্তত ৫-৭ দিন সময় লাগবে। এনিয়ে সবসময় টেনশনে আছি। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টি হচ্ছে। শিলাবৃষ্টি হলে ধানের ক্ষতি হবে।’
দোয়াবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মহসিন জানান, বৃষ্টিতে ধান খেত তলিয়ে যাওয়ার কোনো খবর এখনো পর্যন্ত পাইনি। তবে শিলাবৃষ্টিতে অনেক এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। কৃষকদেরকে দ্রুত ধান কাটার তাগিদ দেয়া হচ্ছে।তিনি আরো জানান, ধান কাটতে এবার শ্রমিক সংকট তেমন নেই। তাছাড়া আমাদের সাথে কৃষকেরা যোগাযোগ করলে আমরা ধান কাটার কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের ব্যবস্থা করে দেব।
স্বদেশ বিচিত্রা/এআর