০৮:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ডঃ কিউ এম জালাল খান :

দেশকন্যা রিজওয়ানা ও বিএনপি নেত্রী রুমিন -যেখানে অমিল বেমিল

  • প্রকাশিত ০৮:৪৬:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • ২৪ বার দেখা হয়েছে

৩৬ দিনে কোনো অভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লব হয় না: রুমিন ফারহানা

সোশ্যাল মিডিয়াতে মন্তব্য এসেছে, “তাহলে ১৭ বছর কি করছেন আপনি? আপনি কোন আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন? খালেদা জিয়া যখন জেলে তখন আপনি বাহিরে ঘুরে বেরিয়েছেন। বিএনপি 17 বছর না ৩৪ বছর ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে পারত না। জনগণ বলে পাতানো বিরোধী দলীয় আন্দোলন! আন্দোলন! আন্দোলন খেলা!! This most distorting, disowning, and ungrateful Rumin Farhana must not go unchallenged.” ৩৬ দিনে কোনো অভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লব হয় না: রুমিন ফারহানা

মার্কিন কবি রবার্ট ফ্রস্টের সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় কবিতার নাম, “The Road Not Taken” (১৯১৫)। কবিতাটির বিষয়বস্তূ হচ্ছে ইংল্যান্ডে বন্ধু এডওয়ার্ড টমাসসহ গ্রামপথে প্রাতঃভ্রমণ করার এক পর্যায়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়া পথের এই পথটি দিয়ে যাবেন নাকি সেই পথটি দিয়ে যাবেন এইটুকু। কবিতাটির তাৎক্ষণিক প্রেক্ষিত বা চিত্রকল্প নিতান্তই সাধারণ বা সাদামাটা হলেও এর প্রতীকী অর্থ খুবই ব্যাপক, গুরুত্বপূর্ণ ও সার্বজনীন। সেই রূপক অর্থ দৈনন্দিন জীবনে বা কর্ম জীবনের চাওয়া, না চাওয়া, সিদ্ধান্ত নেওয়া বা না নিতে পারার সাথে সম্পর্কিত। যাহোক, কবিতাটির শিরোনামের যে পথটি নেওয়া হয়নি সেটা ছিল যেটা সাধারণত সবসময় সবাই নিয়ে থাকে — চেনা পথ, পরিচিত, নিরাপদ, নির্ঝঞ্ঝাট ও পরিষ্কার। যে পথটি কবি একটু চিন্তা করে বেছে নিলেন সেটা প্রাক শীত মৌসুমের ঝরা পাতা ঢাকা, অপেক্ষাকৃত নতুন, কম ব্যবহৃত, অজানা, কোথায় শেষ হয় জানা নেই। দুটি পথ আর হয়তো কখনো কোথাও মিশবেনা, মিলবেনা। আর সেখানেই পরীক্ষা, সাফল্য বা ব্যর্থতা, যে যেভাবে দেখেন। আর নতুন কিছু অর্জন করতে হলে সেই নতুন ঝুঁকির পথটিইতো নিতে হবে। পরিহাস ও কাকতালীয় বিষয়, কবি-বন্ধু এডওয়ার্ড টমাস দুই বছর পরেই তখন চলমান প্রথম মহাযুদ্ধে নিহত হন। তবে কবিতাটিতে দুটি পথেরই বর্ণনা আছে। আমার এই ছোট্ট রচনাটির শিরোনাম থেকেও বোঝা যাচ্ছে তাঁদের অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বনামধন্য উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রাক্তন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার মধ্যে অনেক মিলও রয়েছে যেগুলো এই নিবন্ধটির পেছনে প্রধান উপজীব্য নয়। তবুও ফ্রস্টের কবিতাটির মত অমিলের আগে মিলগুলোও একটু বলে নেওয়া দরকার।

একজনের গ্রামের বাড়ী সিলেট হবিগঞ্জ আরেক জনের বাড়ি বি-বারিয়া। পেশায় দুইজনই আইনবিদ, দুইজনই পৈতৃক সূত্রে রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে। পরিববেশ রক্ষা বিষয়ে অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে এবং পরিবেশ আইনবিদদের সংগঠন (BELA)-বেলার প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে রিজওয়ানা নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে রেখেছেন অনেক বছর ধরেই । শুধু নোবেল প্রাইজটি বাকি থাকলেও যেন উনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় ডঃ ইউনুস। রুমিনও বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থেকে বহু পরিচিতি পেয়েছেন। দুইজনই গণমাধ্যম পর্দায় খুব সুপরিচিত। দুইজনই খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। দুইজনেরই উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গি ঈর্ষান্বিতভাবে সাবলীল ও বাকপটু। বাংলা ছাড়াও দুইজনই ইংরেজিতেও বেশ সুদক্ষ (একজনতো, মানে রিজওয়ানা, বেশ পারদর্শী ও পারঙ্গম। প্রায় প্রতিদিন বক্তব্য বক্তৃতা বাংলা ও ইংরেজিতে দিয়ে প্রমান করে চলেছেন যে তিনি চমৎকার ইংরেজি বলেন)। দুইজনই নিজেদের শিক্ষাগত, পেশাগত ও রাজনৈতিক জীবনে উজ্জ্বল। দেশে-বিদেশে উচ্চতর পড়াশুনার পূর্বে দুইজনই একই স্কুল ও কলেজ (ভিকারুননিসা এবং হলিক্রস)-থেকে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেছেন। দুইজনই লম্বা ও ফর্সা। সবার চোখে দুইজনই অত্যন্ত সুশ্রী ও আকর্ষণীয়। তবে একটু কমবেশী হলেও হতে পারে। রিজওয়ানাতো অসম্ভব সুন্দর ও সুদর্শন। দুইজনেরই নামের আদ্যক্ষর ‘র’ বা ‘আর’। দুইজনই খুবই উপ্সথাপনযোগ্য। ব্যক্তিগত জীবনে একজন বিবাহিত ও তিন সন্তানের জননী, আরেকজন অবিবাহিত। সম্প্রতি প্রাক নির্বাচনী প্রচারণার সময় মার্কিন রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স বিবাহিত অথচ নিঃসন্তান কামালা হ্যারিসকে ‘childless cat lady’ বলেছিলেন আর মার্কিন আরকানসাস স্টেটের রিপাবলিকান গভর্নর সারাহ হাকাবি কামালাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘having children makes one more human/e and humble.’ উনারা বাংলাদেশের এই দুই নারী নেত্রীর কাকে কি বলতেন কে জানে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় ও দৃশ্যমান রিজওয়ানা। ছত্তিশ জুলাই আন্দোলনে রিজওয়ানা ছিলেন ছাত্র জনতার পাশের একজন অগ্রসৈনিক যেখানে রুমিনকে দেখা যায়নি। তবে ২০১৯-২০২২ পর্যন্ত সংসদে বাগ্মিতার পরিচয় দিয়ে রুমিনও সবার নজর কেড়েছেন এবং অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে বিএনপিরই কেউ কেউ রুমিন তাঁর অতীত ছাত্রী ও পেশাজীবি জীবনে রাজনৈতিক তেমন কোন চড়াই উৎরাই, ঘাত প্রতিঘাত বা উল্লেখযোগ্য কঠিন সংগ্রামী ভূমিকা না রেখেও গত এক দশকে বেশ উপরে উঠে এসেছেন এই সাফল্যের কিছু সমালোচনা করে থাকেন বৈ কি। যাকগে, সেটা একটু ভিন্ন ব্যাপার। বর্তমান বাস্তবতাটাই আসল কথা।

এই বাস্তবতারই অংশ হিসেবে অনেকের ধারণা অনুযায়ী গত ১৬ বছর ধরে অকথ্য ও অবর্ণনীয় আওয়ামী অত্যাচার নির্যাতন সত্ত্বেও বিএনপির লন্ডন টু ঢাকা অনেক শীর্ষস্থানীয় দুর্বল ও আপোষকামী ব্যক্তিদের মতই রুমিনও বাংলাদেশের চিরশত্রু ভারতের অনুগত বলে ধরে নেওয়া হয় । তিনি ও তেনারা ভারতপন্থী বলেই (অমানুষিক নির্যাতন নিপীড়ন সত্ত্বেও) নির্লজ্জভাবে ৫ আগস্টের পর পরাজিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শিবিরের সমর্থনে একই সুরে বক্তব্য মন্তব্য ও মতামত দিচ্ছেন। অনেকের মতে তিনি ও তেনারা মহান, মহৎ, তারকাসম উজ্জ্বল ও কিংবদন্তী নেতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার অপ্রতিরোধ্য প্রভাব ও তাঁদের আপোষহীন জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেম ও ইসলাম বান্ধব আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়ে নিদারুন বিস্বাসঘাতকতা করে চলেছেন। তিনি ও তেনারা রাজনৈতিকভাবে এবং রূপক অর্থে পিতৃহন্তা ও মাতৃহন্তা (parricide, patricide, matricide)। এই বিস্বাসঘাতকতা ও আস্থার সংকটের জন্য তেনারা অনেক জন[প্রিয়তা হারিয়েছেন এবং হারাতে যাচ্ছেন। তাই তেনাদের জন্য ক্ষমতার মসনদ ‘দিল্লী’ এখনো অনেক দূরেই আছে বলা যায়। যাক, আমার এই ছোট্ট লেখাটির তাৎক্ষণিক কারণ সেটাও নয়।

কারণ হচ্ছে এইটি। ইদানিং রুমিন গণতন্ত্রী বাকস্বাধীনতার নামে রিজওয়ানার অনেক ভালো ভালো কাজের প্রশংসা না করে, সমর্থন না করে বা উৎসাহ না দিয়ে, এমনকি গঠনমূলক সমালোচনাও না করে তাঁকে (রিজওয়ানকে) সরাসরি অতি শক্তভাবে (এমনকি কিছুটা তাচ্ছিল্লের সাথে) আক্রমণ করে চলেছেন। পরিবেশ উপদেষ্টা বা প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা বলেনঃ “বাংলাদেশে কি পলিথিন বন্ধ হইছে? নদী উদ্ধার হইছে? খাল উদ্ধার হইছে? কিচ্ছু হয় নাই। সাড়ে পাঁচ মাসে অশ্ব ডিম্বের পরে এখন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন বন্ধ করছেন। এখন মানুষ কি করবে? দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাবে। শেখ হাসিনা সেন্টমার্টিন দেয় নাই তাই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে নতুন সরকারের সেন্টমার্টিন আমেরিকাকে দিয়ে দেয়ার নেগোশিয়েশন ভেতরে ভেতরে হয়ে গেছে। মানুষ বলবে ৫৩ বছরে প্রবালের কিছু হয় নাই, এখন তুমি নতুন সরকার আসার পরে ৫৩ দিনে প্রবাল ডুবে গেলো? আপনাদের কথা মানুষ খাবে না।” বীরোচিত সারজিস আলমের সাথে একটি শো’তে তিনি (রুমিন) আবারো রিজওয়ানাকে এক হাত নিয়ে ভালই সমালোচনা করলেন। ভালো কথা। তবে একই শোতে তিনি বললেন তিনি নাকি ফ্যাসিস্ট গুমি খুনি হাসিনার গত ১৫/১৬ বছর নিরাপদেই ছিলেন। এখন ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নাকি এতই নিরাপত্তার অভাব যে তিনি বাহিরে বেরুতে ভয় পান। সত্যিই কি? রুমিনের কথায় মনে হয় রক্তপিপাসু মনস্টার হায়েনা হাসিনা বিএনপির উপর অত্যাচার নির্যাতন কমই চালিয়েছিল আরো একটু বেশি চালালেই হয়তো রুমিনের নিরাপত্তা কম মনে হতো।

মাহবুব খালেদ লিখছেন, “গতকাল রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘গত ১৫ বছর আমাকে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগতে হয়নি, কিন্তু এখন আমাকে ভুগতে হচ্ছে।‘ গত ১৬ বছরে বিএনপির শুধুমাত্র ৬০০ জনের বেশি কর্মীকে গুম করা হয়েছে মানে তাদেরকে জাস্ট নাই করে দিছে, হত্যা করা হয়েছে ১০০০ হাজারেরও বেশি, মামলা দেয়া হইছে ৪০ লাখ। খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। প্রবাসে মৃত্যুবরণ করেছেন আরাফাত রহমান কোকো। ছাত্রদল হাজার হাজার পোলাপাইনকে গুম খুন করা হয়েছে। জনির শরীরে আর গুলি করার জায়গা ছিল না। একটা মানুষ খুন করতে কয়টা বুলেট লাগে বলেন? থানায় নিয়ে প্লাশ দিয়ে হাত-পায়ের সবগুলা নখ তুলে ফেলা হলো শুধুমাত্র ছাত্রদল করার কারণে। নুরুজ্জামানের লাশ ভেসে উঠেছিলো নদীতে। ইলিয়াস আলীর লাশটাও তো খুঁজে পাওয়া গেল না। লুৎফুজ্জামান বাবর জেলের বাইরে একটা দেন থাকতে পারেন নাই। পুরো যৌবন তিনি কুরবানি করেছেন জেলে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। গুম করা হয়েছিলো সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকেও। সাদেক হোসেন খোকাকে ক্যান্সার আক্রান্ত অবস্থায় জেলে নেওয়া হয়েছে। রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়েছিলো গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বলা হতো পাকিস্তানপন্থী রাজাকার। খালেদা জিয়া তাবিথ আউয়ালের হয়ে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চালাতে গিয়ে হামলার স্বীকার হয়েছিলেন। গয়েশ্বরকে রাস্তায় ফেলে পেটালো। মোহাম্মদ ইসহাক সরকার ভাইদের মতন নেতারা বছরের বছর কারাগারে কাটিয়ে দিয়েছে শত শত মামলা মাথায় নিয়ে জীবন যৌবন শেষ করে দিয়েছে। এইরকম হাজার হাজার তৃণমূল নেতাকর্মীদের জীবনের গল্প জানা আছে। চিটাগাংয়ের আবিদ, ইন্টারে পড়ুয়া ছেলে, ঝিনাইহদের সোহান সেও ইন্টারেই পড়তো। খুন করে তাদের চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল, ছেলেটাকে খুন করে তার লাশকে আবার ট্রাকচাপা দেওয়া হয়েছিল। বিএনপির কর্মীরা ১৫ বছর ঘর বাড়ি ঘর ছাড়া। দিন রাত কোথায় কেটেছে তার কোন ঠিক ঠিকনা নাই। আর রুমিন ফারহানা রাজউকের প্লট পেয়ে, রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে আরামসে বিন্দাস লাইফ লিড করেছেন। ৩৬ দিনে কোনো অভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লব হয় না: রুমিন ফারহানা

গত ১৫ বছরে আপনাকে জেলে যেতে হয়নি, একদিনের জন্যে হলেও নিজের বাসা ছেড়ে পালিয়ে থাকতে হয় নি। অনেকে বলেন, আপনি ২০১৮-২০২২ সংসদ একাই কাপিয়েছিলেন বিএনপির হয়ে। যেই সংসদের একটা অধিবেশন ও আমরা কেউ দেখে নাই, মনেও নাই কারো। আমরা তো চাই ও নাই ঐ সংসদে যাইতে। আপনি বরং ঐ সংসদের সদস্য হওয়ার অছিলায় প্লট চেয়েছেন সরকারের কাছে। অবৈধ এম্পি হয়ে আরামে জীবন কাটিয়েছেন কিন্তু আমরা কেউ আরামদায়ক জীবন কাটাতে পারিনি। নিজের দেশেই আমরা ঢুকতে পারিনি আওয়ামী হামলা মামলার ভয়ে। আমার খুবই জানতে ইচ্ছে হয় ঠিক কি কারণে রুমিন ফারহানা গত ১৫ বছর এতো নিরাপদে ছিলেন যেইটা এই ছয় মাসে তিনি নিরাপত্তার হীনতায় ভুগছেন? রুমিন ফারহানা আপনি ব্রাম্মণবাড়িয়া-২ আসনের জন্য কড়া লবিং চালাচ্ছেন যেই আসনের নেতারাই আপনাকে চায় না। আপনি আওয়ামীলীগ সরকারে আমলে এতোই নিরাপদে ছিল যে হাসিনাকে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বলার পরেও কোনদিন জেলে যাইতে হয় নাই, ঢাকায় অট্টালিকায় থাকতেন। হাসিনাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বইলা ফ্ল্যাটও চাইছিলেন। আওয়ামিলীগ কতলোক গুম খুন করেছে আপনি জানেন না? কত মা আজো অপেক্ষায় আছে তার সন্তান তার কোলে ফিরে আসবে, কত সন্তান তার বাবার অপেক্ষায় আজো, সেই খবর কখনোই কি আপনা মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে? মাইকেল চাকমা, আরমান, আমানরা ৮ বছর একটা ১৫ ফিট বাই ১০ রুমে আটকে থাকতেন, কোন আলো বাতাস, পৃথিবী দেখতে পারলেন না, তাদের ভাই, বোন, স্ত্রী, মা, সন্তানেরা জানতেও পারলেন না আদৌ তারা আর অপেক্ষা করবেন নাকি অপেক্ষা ছেড়ে দিবেন; এই ঘটনাগুলো কি আপনাদেরকে সত্যিই একটুও স্পর্শ করে না? আমাদের ২০০০ ছেলে জীবন দিয়ে দিলেও রুমিন ফারহানা আপনি ছিলেন আওয়ামিলীগ আমলে নিরাপদ।“

একই সুরে মীর জাহান লিখছেন, “রুমীন ফারহানা কতবড় নীতিহীন, লোভী মহিলা তার একটা সামান্য বর্ণনা দিচ্ছি। একটা সময় রুমীন ফারহানার সাথে প্রায়ই মোবাইলে কথা হতো। আমি ২০১৬-১৭-১৮ সালের কথা বলছি। বেশিরভাগ আলোচনা ছিল রাজনৈতিক, বিশেষ করে অনলাইন এক্টিভিস্টদের ওপর ক্রমেই হাসিনার রোষানল তৈরি হওয়া এবং আমাদের কয়েকজন ফ্রন্টিয়ার্সের ধরা পড়া ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে। আমারও খুব পছন্দের ছিলেন তিনি, কারণ তিনি ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। কিন্তু আমার আবেগ, ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা কে তিনি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে হাসিনার কাছে প্লট চেয়ে বসলেন! আমি প্রতিবাদ করে বসলাম, আপু এটা আপনি কী করলেন? এটা তো ভাল কাজ হয়নি! এরপর থেকে আর রুমীনের সাথে আমার কথা হয় না! সময়ের পরিক্রমায় অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে। পলকের সাথে দুবাই যাওয়া, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে উন্নয়নের নাটক করা এবং সর্বশেষ ‘র’ এর কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা। রুমীন আপা, তোমার কী ছিল না বলো তো? রূপে-গুণে-স্বাস্থ্যে, মেধা এবং যুক্তিতে তুমি অনন্যা। শুধুমাত্র তোমার মুখের কথার সাথে কাজের মিল থাকলেই আজ তুমি হিরোইন হয়ে যেতে পারতে। তবে ইদানিং তোমার যা কথাবার্তা, তাতে আমার মনে হয় খুব শীঘ্রই তুমি হাসিনার কাছাকাছি পর্যায়ের জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চলেছো। ভালো হয়ে যাও রুমিন আপু।“

মাত্র ছয় মাসের হিসেব নিলে দেখা যাচ্ছে রিজওয়ানার সাফল্যের সাথে রুমিনের নালিশের সামঞ্জস্য নেই। রিজওয়ানা পরিবেশ রক্ষায় মাত্র ছয় মাসে নাগরিক সচেতনতাসহ অনেক ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিয়েছেন যেটা কোন সরকারই গত বায়ান্ন বছরেও নেয়নি বা নিতে পারেনি। সেইন্ট মার্টিন্স নিয়েও রিজওয়ানা সরকারের সঠিক সুদৃঢ় অবস্থান–পর্যটনের নামে দ্বীপটি ধ্বংস করা হচ্ছে–জাতিকে জানিয়েছেন। কক্সবাজার সোনাদিয়া দ্বীপ এবং চট্টগ্রামের মিরসরাই ও মাতারবাড়ি নিয়ে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন্স অথরিটি’র (BEZA) আশিক চৌধুরীর রিপোর্ট প্রমান করে যে কর্মচঞ্চল রিজওয়ানার পরিবেশ সংক্রান্ত কর্মদক্ষতা কত বেশী ও বিরল। পরিবেশ বিষয়ে রিজওয়ানার সাহসী ও ব্যতিক্রমী দখল ও দৃষ্টান্ত, অর্জন ও জ্ঞানের পরিধি অমর ও অম্লান হয়ে থাকবে। She seems to have distinguished herself to be exceptionally exceptional in terms of her beauty, elegance and polish, and her virtues, commitment and accomplishment, with a basketful of accolades to her credit, though short of a Nobel yet.

“দেশে খুন খারাপি বেড়েছে, হিন্দু নির্যাতন বেড়েই চলেছে, দেশ একটি মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে,” ৭১ টিভিতে রুমিনের এইসব নালিশ গত বায়ান্ন বছরের তুলনায় ভিত্তিহীন। সোশ্যাল মিডিয়াতে একজন কমেন্ট করছেন, “এই মহিলা কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে? হাতে বিশেষ গোষ্ঠীর রশি দেখা যায়! এই মহিলা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। এই মহিলাকে তো বিএনপি চালায় না, চালায় ইন্ডিয়ান “র”। “একাদশ জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ায় দুই মাসের মধ্যে সরকারের কাছে ১০ কাঠার একটি প্লট চেয়েছেন বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা। সরকার প্লট দিলে ‘চিরকৃতজ্ঞ’ থাকবেন বলেও উল্লেখ করেছেন বিএনপি থেকে মনোনীত সংরক্ষিত নারী আসনের এই সাংসদ।“ ১৯৭১-এর পুরস্কারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও ১৯৭৫ ১৫ই আগস্টে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এবং অনেক বইয়ের রচয়িতা ক. রাশেদ চৌধুরী বলছেন , “রুমিন ফারহানকে কতটুকু বিশ্বাস করা যায় সেটাও প্রশ্ন। যদি আমি ঠিক মনে করে থাকি, ৮/৫ এর পর ১৯৭২ সংবিধানের পক্ষে জোরালো কথা বলেছেন, বিভিন্ন আইনি প্রশ্ন তুলে চুপ্পুর পক্ষে ছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বৈধতা নিয়ে কথা বলেছেন । ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে বলছেন।“ “রুমিন ফারহানা নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বৈষম্য বিরোধী হ’ত্যা মামলায় যুবলীগের নেতা সাইফুল ইসলাম সোহেলের পক্ষে জামিন চেয়েছেন। এজাহার নামীয় ১০৫ নং আসামী।“

রুমিনের বিরুদ্ধে ঢাবি ছাত্রদল নেতার পোস্ট দেখুন। “গত কয়েকদিন ধরে সরকারের অনেক সমালোচনা করে যাচ্ছেন রুমিন ফারহানা। রাতে বের হতে ভয় পান তিনি। এমনকি দেশে নিজেকে আগের থেকে অনিরাপদ মনে করেন এই বিএনপি নেত্রী। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে ব্যাপক সমালোচনার ঝড়। এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীমউদ্দীন হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক তানভির বারী হামিম তার ফেসবুক পোস্টে বিএনপির এই নেত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তিনি তার একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেন, দায়িত্ব নিয়ে বলছি-৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে রুমিন ফারহানাকে দলে ভিড়াতে চেয়েছিলেন নতুন দল গড়তে চাওয়া ছাত্রপ্রতিনিধিরা। এ সুযোগ লুফে নিতে বেশ ক’দিন রুমিন ফারহানা বিএনপির নামে অপপ্রচার চালিয়েছে টকশোগুলোতে।“

ক. রাশেদ চৌধুরী আবারো বলছেন, “Rumeen Farhana has become a nuisance these days. She should be banned from any public talks. In a talk show on the recently held investment summit in which Ashik Chowdhury was the star of the show (along with the other guys from the media, investment team, and the NCP), she dismissed the credit as just a media joke. Otherwise, an eloquent speaker, she thought the whole investment show was an eye wash. The NCP man, Tahsin Riyad, equally eloquent, stood his ground in support of the investment seminar that was excellent. আমরা জানি এবারের বিনিয়োগ সম্মেলন অন্যান্য বছরের থেকে ছিল আলাদা। দেশি বিদেশি সবাই সন্তুষ্ট । বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও পাওয়া গেছে মাশাআল্লাহ অনেক, আশা আকাঙক্ষার চেয়েও বেশি। এই জেরটাকে ধরে রাখতে হবে। এটা এককালীন শো নয়, ক্রমবর্ধমান উন্নতির দিকে নিতে হবে। অথচ, এই সাফল্যে কিছু লোকের মনোবেদনা, এমনকি বিষফোঁড়ার মত মনে হলো। দুদিন আগে একটি টকশোতে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহান এই সম্মেলনের সাফল্যকে উড়িয়ে দিলেন। বললেন এটা ছিল প্রফেসর ইউনুস সরকারের একটা মিডিয়া স্টান্ট, আই ওয়াশ! মাশাআল্লাহ, আমাদের দেশে এমন নেতা-নেত্রী বহাল থাকলে আমরা কেন আওয়ামিদের বা বাইরের কাউকে দোষ দেই? দেশকে বিপদে ফেলার জন্য এনারাই যথেষ্ট। ঘরের ইঁদুর যখন বেড়ার বাঁধ কাটে, তখন সেই ঘর কে রক্ষা করবে? একই টক শোতে ছিলেন একজন যুবনেতা, এনসিপি কর্মকর্তা। কথার ফুলঝড়িতে রুমিন থেকে কম যাননি, তবে সম্পূর্ণ বিপরীত এবং নমনীয় । সাবাশ বেটা! রুমিন ফারহানের মুসকি হাসি কেমন বেদনাদায়ক ছিল তা বোধগম্য। হাসিনা আমলে এই ব্যারিস্টারের ফ্যান ছিলাম। তার কথা শুনতে ভাল লাগত। এখন বিপরীতে। আফসোস এই মহিলা অলি আহাদের মত দেশপ্রেমীর মেয়ে! বাপের নামটি ডুবিয়ে দিল!”

ফ্রস্টের কবিতার আলোকে মনে হচ্ছে যে পথটি কবি নেননি রুমিন সেই (চিরাচরিত নিছক সমালোচনার জন্যই সমালোচনার অচলায়তনের) পথটিই বেছে নিচ্ছেন আর রিজওয়ানা নিচ্ছেন নতুন ভিন্নমাত্রার নতুম উদ্দম নতুন প্রচেষ্টার পথটি। তাঁকে স্বাগত জানাই। দেশনেত্রী খালেদার মত তিনিও (রিজওয়ানা) সত্যিকারের একজন দেশকন্যা। রুমিনও ভারতপন্থী না হয়ে বাংলাদেশপন্থী হলে অতি সহজেই অবশ্যই আরেকজন দেশকন্যা হয়ে উঠবেন। ভারতপন্থী আওয়ামী-বিএনপির অসাধু ও ষড়যন্ত্রমূলক আচরণের জন্যই (কিছুটা মেঘ ৫ আগস্ট কেটে গেলেও) চারিদিকেই যেন দুর্ভোগ দুশ্চিন্তা দুর্দশা হতাশার কালো মেঘ ধেয়ে আসছে। চতুর্দিক থেকেই যেন অবেলা কালবেলা অশুভ সময় ঘনিয়ে আসছে। আওয়ামী-বিএনপির অশুভ ইচ্ছা, দেশপ্রেমের অভাব, এমনকি দেশদ্রোহিতার কারণেই দেশের জনগণ বিভক্ত ও বিভ্রান্ত। যাতে করে হিন্দু মৌলবাদী ইস্কনের তুলসী গাবার্ড সহ ভারতীয় বিজেপি-আরএসএস মিডিয়ায় বাংলাদেশ বিরোধী ইউনুস সরকার বিরোধী ইসলাম বিরোধী মুসলিম বিরোধী দিনরাত অনর্গল মিথ্যা, অসত্য ও ভিত্তিহীন প্রচারণা ও নাশকতা চলছে। সরকার, সেনাবাহিনী, ছাত্র জনতা, অন্যান্য দেশপ্রেমী দলগুলো (NCP, Inqilab Manch, GOP, LDP, AB, Jamaat, Hefazat, Islami Andolon, Islami Oikkyjot, Khelphat Majlish and a new BNP of patriots and patriotic nationalists) সবাই একসাথে ভারতীয় মদদপুষ্ট ভারতীয় দালাল আওয়ামী-বিএনপিকে প্রতিহত করতে হবে। আর তা না হলে আমরা ইংরেজ কবি চার্লস কিংসলের (Charles Kingsley) বিখ্যাত কবিতা, “The Sands of Dee” (O Mary Go and Call the Cattle Home) বা সেই কবিতাটির বাঙ্গালী-ভারতীয় কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবীদ হুমাযুন কবিরের (১৯০৬-১৯৬৯) অমর অসাধারণ ভাষান্তর, ভাবানুবাদ বা বংগানুবাদ “মেঘনার ঢল” (শোন্ মা আমিনা … আমিনারে মোর নিল কি টানিয়া মেঘনা সর্বনাশী)কবিতাটি নতুন করে পড়া শুরু করতে হবে। I hope I’m not being too pessimistic.

ডঃ কিউ এম জালাল খান
ইংরেজীর অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত)
ফুলব্রাইট স্কলার, এমএ, পিএইচডি (আমেরিকা)
অনেক সাহিত্য ও রাজনৈতিক বইয়ের লেখক
কানাডা

Tag :
জনপ্রিয়

কাপ্তাই রিজার্ভ ফরেস্টে স’মিল স্থাপন বন উজাড়-সবুজ বেষ্টনীর বিপন্ন পাহাড়

ডঃ কিউ এম জালাল খান :

দেশকন্যা রিজওয়ানা ও বিএনপি নেত্রী রুমিন -যেখানে অমিল বেমিল

প্রকাশিত ০৮:৪৬:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

৩৬ দিনে কোনো অভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লব হয় না: রুমিন ফারহানা

সোশ্যাল মিডিয়াতে মন্তব্য এসেছে, “তাহলে ১৭ বছর কি করছেন আপনি? আপনি কোন আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন? খালেদা জিয়া যখন জেলে তখন আপনি বাহিরে ঘুরে বেরিয়েছেন। বিএনপি 17 বছর না ৩৪ বছর ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে পারত না। জনগণ বলে পাতানো বিরোধী দলীয় আন্দোলন! আন্দোলন! আন্দোলন খেলা!! This most distorting, disowning, and ungrateful Rumin Farhana must not go unchallenged.” ৩৬ দিনে কোনো অভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লব হয় না: রুমিন ফারহানা

মার্কিন কবি রবার্ট ফ্রস্টের সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় কবিতার নাম, “The Road Not Taken” (১৯১৫)। কবিতাটির বিষয়বস্তূ হচ্ছে ইংল্যান্ডে বন্ধু এডওয়ার্ড টমাসসহ গ্রামপথে প্রাতঃভ্রমণ করার এক পর্যায়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়া পথের এই পথটি দিয়ে যাবেন নাকি সেই পথটি দিয়ে যাবেন এইটুকু। কবিতাটির তাৎক্ষণিক প্রেক্ষিত বা চিত্রকল্প নিতান্তই সাধারণ বা সাদামাটা হলেও এর প্রতীকী অর্থ খুবই ব্যাপক, গুরুত্বপূর্ণ ও সার্বজনীন। সেই রূপক অর্থ দৈনন্দিন জীবনে বা কর্ম জীবনের চাওয়া, না চাওয়া, সিদ্ধান্ত নেওয়া বা না নিতে পারার সাথে সম্পর্কিত। যাহোক, কবিতাটির শিরোনামের যে পথটি নেওয়া হয়নি সেটা ছিল যেটা সাধারণত সবসময় সবাই নিয়ে থাকে — চেনা পথ, পরিচিত, নিরাপদ, নির্ঝঞ্ঝাট ও পরিষ্কার। যে পথটি কবি একটু চিন্তা করে বেছে নিলেন সেটা প্রাক শীত মৌসুমের ঝরা পাতা ঢাকা, অপেক্ষাকৃত নতুন, কম ব্যবহৃত, অজানা, কোথায় শেষ হয় জানা নেই। দুটি পথ আর হয়তো কখনো কোথাও মিশবেনা, মিলবেনা। আর সেখানেই পরীক্ষা, সাফল্য বা ব্যর্থতা, যে যেভাবে দেখেন। আর নতুন কিছু অর্জন করতে হলে সেই নতুন ঝুঁকির পথটিইতো নিতে হবে। পরিহাস ও কাকতালীয় বিষয়, কবি-বন্ধু এডওয়ার্ড টমাস দুই বছর পরেই তখন চলমান প্রথম মহাযুদ্ধে নিহত হন। তবে কবিতাটিতে দুটি পথেরই বর্ণনা আছে। আমার এই ছোট্ট রচনাটির শিরোনাম থেকেও বোঝা যাচ্ছে তাঁদের অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বনামধন্য উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রাক্তন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার মধ্যে অনেক মিলও রয়েছে যেগুলো এই নিবন্ধটির পেছনে প্রধান উপজীব্য নয়। তবুও ফ্রস্টের কবিতাটির মত অমিলের আগে মিলগুলোও একটু বলে নেওয়া দরকার।

একজনের গ্রামের বাড়ী সিলেট হবিগঞ্জ আরেক জনের বাড়ি বি-বারিয়া। পেশায় দুইজনই আইনবিদ, দুইজনই পৈতৃক সূত্রে রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে। পরিববেশ রক্ষা বিষয়ে অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে এবং পরিবেশ আইনবিদদের সংগঠন (BELA)-বেলার প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে রিজওয়ানা নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে রেখেছেন অনেক বছর ধরেই । শুধু নোবেল প্রাইজটি বাকি থাকলেও যেন উনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় ডঃ ইউনুস। রুমিনও বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থেকে বহু পরিচিতি পেয়েছেন। দুইজনই গণমাধ্যম পর্দায় খুব সুপরিচিত। দুইজনই খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। দুইজনেরই উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গি ঈর্ষান্বিতভাবে সাবলীল ও বাকপটু। বাংলা ছাড়াও দুইজনই ইংরেজিতেও বেশ সুদক্ষ (একজনতো, মানে রিজওয়ানা, বেশ পারদর্শী ও পারঙ্গম। প্রায় প্রতিদিন বক্তব্য বক্তৃতা বাংলা ও ইংরেজিতে দিয়ে প্রমান করে চলেছেন যে তিনি চমৎকার ইংরেজি বলেন)। দুইজনই নিজেদের শিক্ষাগত, পেশাগত ও রাজনৈতিক জীবনে উজ্জ্বল। দেশে-বিদেশে উচ্চতর পড়াশুনার পূর্বে দুইজনই একই স্কুল ও কলেজ (ভিকারুননিসা এবং হলিক্রস)-থেকে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেছেন। দুইজনই লম্বা ও ফর্সা। সবার চোখে দুইজনই অত্যন্ত সুশ্রী ও আকর্ষণীয়। তবে একটু কমবেশী হলেও হতে পারে। রিজওয়ানাতো অসম্ভব সুন্দর ও সুদর্শন। দুইজনেরই নামের আদ্যক্ষর ‘র’ বা ‘আর’। দুইজনই খুবই উপ্সথাপনযোগ্য। ব্যক্তিগত জীবনে একজন বিবাহিত ও তিন সন্তানের জননী, আরেকজন অবিবাহিত। সম্প্রতি প্রাক নির্বাচনী প্রচারণার সময় মার্কিন রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স বিবাহিত অথচ নিঃসন্তান কামালা হ্যারিসকে ‘childless cat lady’ বলেছিলেন আর মার্কিন আরকানসাস স্টেটের রিপাবলিকান গভর্নর সারাহ হাকাবি কামালাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘having children makes one more human/e and humble.’ উনারা বাংলাদেশের এই দুই নারী নেত্রীর কাকে কি বলতেন কে জানে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় ও দৃশ্যমান রিজওয়ানা। ছত্তিশ জুলাই আন্দোলনে রিজওয়ানা ছিলেন ছাত্র জনতার পাশের একজন অগ্রসৈনিক যেখানে রুমিনকে দেখা যায়নি। তবে ২০১৯-২০২২ পর্যন্ত সংসদে বাগ্মিতার পরিচয় দিয়ে রুমিনও সবার নজর কেড়েছেন এবং অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে বিএনপিরই কেউ কেউ রুমিন তাঁর অতীত ছাত্রী ও পেশাজীবি জীবনে রাজনৈতিক তেমন কোন চড়াই উৎরাই, ঘাত প্রতিঘাত বা উল্লেখযোগ্য কঠিন সংগ্রামী ভূমিকা না রেখেও গত এক দশকে বেশ উপরে উঠে এসেছেন এই সাফল্যের কিছু সমালোচনা করে থাকেন বৈ কি। যাকগে, সেটা একটু ভিন্ন ব্যাপার। বর্তমান বাস্তবতাটাই আসল কথা।

এই বাস্তবতারই অংশ হিসেবে অনেকের ধারণা অনুযায়ী গত ১৬ বছর ধরে অকথ্য ও অবর্ণনীয় আওয়ামী অত্যাচার নির্যাতন সত্ত্বেও বিএনপির লন্ডন টু ঢাকা অনেক শীর্ষস্থানীয় দুর্বল ও আপোষকামী ব্যক্তিদের মতই রুমিনও বাংলাদেশের চিরশত্রু ভারতের অনুগত বলে ধরে নেওয়া হয় । তিনি ও তেনারা ভারতপন্থী বলেই (অমানুষিক নির্যাতন নিপীড়ন সত্ত্বেও) নির্লজ্জভাবে ৫ আগস্টের পর পরাজিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শিবিরের সমর্থনে একই সুরে বক্তব্য মন্তব্য ও মতামত দিচ্ছেন। অনেকের মতে তিনি ও তেনারা মহান, মহৎ, তারকাসম উজ্জ্বল ও কিংবদন্তী নেতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার অপ্রতিরোধ্য প্রভাব ও তাঁদের আপোষহীন জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেম ও ইসলাম বান্ধব আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়ে নিদারুন বিস্বাসঘাতকতা করে চলেছেন। তিনি ও তেনারা রাজনৈতিকভাবে এবং রূপক অর্থে পিতৃহন্তা ও মাতৃহন্তা (parricide, patricide, matricide)। এই বিস্বাসঘাতকতা ও আস্থার সংকটের জন্য তেনারা অনেক জন[প্রিয়তা হারিয়েছেন এবং হারাতে যাচ্ছেন। তাই তেনাদের জন্য ক্ষমতার মসনদ ‘দিল্লী’ এখনো অনেক দূরেই আছে বলা যায়। যাক, আমার এই ছোট্ট লেখাটির তাৎক্ষণিক কারণ সেটাও নয়।

কারণ হচ্ছে এইটি। ইদানিং রুমিন গণতন্ত্রী বাকস্বাধীনতার নামে রিজওয়ানার অনেক ভালো ভালো কাজের প্রশংসা না করে, সমর্থন না করে বা উৎসাহ না দিয়ে, এমনকি গঠনমূলক সমালোচনাও না করে তাঁকে (রিজওয়ানকে) সরাসরি অতি শক্তভাবে (এমনকি কিছুটা তাচ্ছিল্লের সাথে) আক্রমণ করে চলেছেন। পরিবেশ উপদেষ্টা বা প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা বলেনঃ “বাংলাদেশে কি পলিথিন বন্ধ হইছে? নদী উদ্ধার হইছে? খাল উদ্ধার হইছে? কিচ্ছু হয় নাই। সাড়ে পাঁচ মাসে অশ্ব ডিম্বের পরে এখন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন বন্ধ করছেন। এখন মানুষ কি করবে? দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাবে। শেখ হাসিনা সেন্টমার্টিন দেয় নাই তাই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে নতুন সরকারের সেন্টমার্টিন আমেরিকাকে দিয়ে দেয়ার নেগোশিয়েশন ভেতরে ভেতরে হয়ে গেছে। মানুষ বলবে ৫৩ বছরে প্রবালের কিছু হয় নাই, এখন তুমি নতুন সরকার আসার পরে ৫৩ দিনে প্রবাল ডুবে গেলো? আপনাদের কথা মানুষ খাবে না।” বীরোচিত সারজিস আলমের সাথে একটি শো’তে তিনি (রুমিন) আবারো রিজওয়ানাকে এক হাত নিয়ে ভালই সমালোচনা করলেন। ভালো কথা। তবে একই শোতে তিনি বললেন তিনি নাকি ফ্যাসিস্ট গুমি খুনি হাসিনার গত ১৫/১৬ বছর নিরাপদেই ছিলেন। এখন ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নাকি এতই নিরাপত্তার অভাব যে তিনি বাহিরে বেরুতে ভয় পান। সত্যিই কি? রুমিনের কথায় মনে হয় রক্তপিপাসু মনস্টার হায়েনা হাসিনা বিএনপির উপর অত্যাচার নির্যাতন কমই চালিয়েছিল আরো একটু বেশি চালালেই হয়তো রুমিনের নিরাপত্তা কম মনে হতো।

মাহবুব খালেদ লিখছেন, “গতকাল রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘গত ১৫ বছর আমাকে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগতে হয়নি, কিন্তু এখন আমাকে ভুগতে হচ্ছে।‘ গত ১৬ বছরে বিএনপির শুধুমাত্র ৬০০ জনের বেশি কর্মীকে গুম করা হয়েছে মানে তাদেরকে জাস্ট নাই করে দিছে, হত্যা করা হয়েছে ১০০০ হাজারেরও বেশি, মামলা দেয়া হইছে ৪০ লাখ। খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। প্রবাসে মৃত্যুবরণ করেছেন আরাফাত রহমান কোকো। ছাত্রদল হাজার হাজার পোলাপাইনকে গুম খুন করা হয়েছে। জনির শরীরে আর গুলি করার জায়গা ছিল না। একটা মানুষ খুন করতে কয়টা বুলেট লাগে বলেন? থানায় নিয়ে প্লাশ দিয়ে হাত-পায়ের সবগুলা নখ তুলে ফেলা হলো শুধুমাত্র ছাত্রদল করার কারণে। নুরুজ্জামানের লাশ ভেসে উঠেছিলো নদীতে। ইলিয়াস আলীর লাশটাও তো খুঁজে পাওয়া গেল না। লুৎফুজ্জামান বাবর জেলের বাইরে একটা দেন থাকতে পারেন নাই। পুরো যৌবন তিনি কুরবানি করেছেন জেলে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। গুম করা হয়েছিলো সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকেও। সাদেক হোসেন খোকাকে ক্যান্সার আক্রান্ত অবস্থায় জেলে নেওয়া হয়েছে। রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়েছিলো গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বলা হতো পাকিস্তানপন্থী রাজাকার। খালেদা জিয়া তাবিথ আউয়ালের হয়ে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চালাতে গিয়ে হামলার স্বীকার হয়েছিলেন। গয়েশ্বরকে রাস্তায় ফেলে পেটালো। মোহাম্মদ ইসহাক সরকার ভাইদের মতন নেতারা বছরের বছর কারাগারে কাটিয়ে দিয়েছে শত শত মামলা মাথায় নিয়ে জীবন যৌবন শেষ করে দিয়েছে। এইরকম হাজার হাজার তৃণমূল নেতাকর্মীদের জীবনের গল্প জানা আছে। চিটাগাংয়ের আবিদ, ইন্টারে পড়ুয়া ছেলে, ঝিনাইহদের সোহান সেও ইন্টারেই পড়তো। খুন করে তাদের চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল, ছেলেটাকে খুন করে তার লাশকে আবার ট্রাকচাপা দেওয়া হয়েছিল। বিএনপির কর্মীরা ১৫ বছর ঘর বাড়ি ঘর ছাড়া। দিন রাত কোথায় কেটেছে তার কোন ঠিক ঠিকনা নাই। আর রুমিন ফারহানা রাজউকের প্লট পেয়ে, রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে আরামসে বিন্দাস লাইফ লিড করেছেন। ৩৬ দিনে কোনো অভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লব হয় না: রুমিন ফারহানা

গত ১৫ বছরে আপনাকে জেলে যেতে হয়নি, একদিনের জন্যে হলেও নিজের বাসা ছেড়ে পালিয়ে থাকতে হয় নি। অনেকে বলেন, আপনি ২০১৮-২০২২ সংসদ একাই কাপিয়েছিলেন বিএনপির হয়ে। যেই সংসদের একটা অধিবেশন ও আমরা কেউ দেখে নাই, মনেও নাই কারো। আমরা তো চাই ও নাই ঐ সংসদে যাইতে। আপনি বরং ঐ সংসদের সদস্য হওয়ার অছিলায় প্লট চেয়েছেন সরকারের কাছে। অবৈধ এম্পি হয়ে আরামে জীবন কাটিয়েছেন কিন্তু আমরা কেউ আরামদায়ক জীবন কাটাতে পারিনি। নিজের দেশেই আমরা ঢুকতে পারিনি আওয়ামী হামলা মামলার ভয়ে। আমার খুবই জানতে ইচ্ছে হয় ঠিক কি কারণে রুমিন ফারহানা গত ১৫ বছর এতো নিরাপদে ছিলেন যেইটা এই ছয় মাসে তিনি নিরাপত্তার হীনতায় ভুগছেন? রুমিন ফারহানা আপনি ব্রাম্মণবাড়িয়া-২ আসনের জন্য কড়া লবিং চালাচ্ছেন যেই আসনের নেতারাই আপনাকে চায় না। আপনি আওয়ামীলীগ সরকারে আমলে এতোই নিরাপদে ছিল যে হাসিনাকে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বলার পরেও কোনদিন জেলে যাইতে হয় নাই, ঢাকায় অট্টালিকায় থাকতেন। হাসিনাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বইলা ফ্ল্যাটও চাইছিলেন। আওয়ামিলীগ কতলোক গুম খুন করেছে আপনি জানেন না? কত মা আজো অপেক্ষায় আছে তার সন্তান তার কোলে ফিরে আসবে, কত সন্তান তার বাবার অপেক্ষায় আজো, সেই খবর কখনোই কি আপনা মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে? মাইকেল চাকমা, আরমান, আমানরা ৮ বছর একটা ১৫ ফিট বাই ১০ রুমে আটকে থাকতেন, কোন আলো বাতাস, পৃথিবী দেখতে পারলেন না, তাদের ভাই, বোন, স্ত্রী, মা, সন্তানেরা জানতেও পারলেন না আদৌ তারা আর অপেক্ষা করবেন নাকি অপেক্ষা ছেড়ে দিবেন; এই ঘটনাগুলো কি আপনাদেরকে সত্যিই একটুও স্পর্শ করে না? আমাদের ২০০০ ছেলে জীবন দিয়ে দিলেও রুমিন ফারহানা আপনি ছিলেন আওয়ামিলীগ আমলে নিরাপদ।“

একই সুরে মীর জাহান লিখছেন, “রুমীন ফারহানা কতবড় নীতিহীন, লোভী মহিলা তার একটা সামান্য বর্ণনা দিচ্ছি। একটা সময় রুমীন ফারহানার সাথে প্রায়ই মোবাইলে কথা হতো। আমি ২০১৬-১৭-১৮ সালের কথা বলছি। বেশিরভাগ আলোচনা ছিল রাজনৈতিক, বিশেষ করে অনলাইন এক্টিভিস্টদের ওপর ক্রমেই হাসিনার রোষানল তৈরি হওয়া এবং আমাদের কয়েকজন ফ্রন্টিয়ার্সের ধরা পড়া ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে। আমারও খুব পছন্দের ছিলেন তিনি, কারণ তিনি ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। কিন্তু আমার আবেগ, ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা কে তিনি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে হাসিনার কাছে প্লট চেয়ে বসলেন! আমি প্রতিবাদ করে বসলাম, আপু এটা আপনি কী করলেন? এটা তো ভাল কাজ হয়নি! এরপর থেকে আর রুমীনের সাথে আমার কথা হয় না! সময়ের পরিক্রমায় অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে। পলকের সাথে দুবাই যাওয়া, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে উন্নয়নের নাটক করা এবং সর্বশেষ ‘র’ এর কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা। রুমীন আপা, তোমার কী ছিল না বলো তো? রূপে-গুণে-স্বাস্থ্যে, মেধা এবং যুক্তিতে তুমি অনন্যা। শুধুমাত্র তোমার মুখের কথার সাথে কাজের মিল থাকলেই আজ তুমি হিরোইন হয়ে যেতে পারতে। তবে ইদানিং তোমার যা কথাবার্তা, তাতে আমার মনে হয় খুব শীঘ্রই তুমি হাসিনার কাছাকাছি পর্যায়ের জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চলেছো। ভালো হয়ে যাও রুমিন আপু।“

মাত্র ছয় মাসের হিসেব নিলে দেখা যাচ্ছে রিজওয়ানার সাফল্যের সাথে রুমিনের নালিশের সামঞ্জস্য নেই। রিজওয়ানা পরিবেশ রক্ষায় মাত্র ছয় মাসে নাগরিক সচেতনতাসহ অনেক ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিয়েছেন যেটা কোন সরকারই গত বায়ান্ন বছরেও নেয়নি বা নিতে পারেনি। সেইন্ট মার্টিন্স নিয়েও রিজওয়ানা সরকারের সঠিক সুদৃঢ় অবস্থান–পর্যটনের নামে দ্বীপটি ধ্বংস করা হচ্ছে–জাতিকে জানিয়েছেন। কক্সবাজার সোনাদিয়া দ্বীপ এবং চট্টগ্রামের মিরসরাই ও মাতারবাড়ি নিয়ে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন্স অথরিটি’র (BEZA) আশিক চৌধুরীর রিপোর্ট প্রমান করে যে কর্মচঞ্চল রিজওয়ানার পরিবেশ সংক্রান্ত কর্মদক্ষতা কত বেশী ও বিরল। পরিবেশ বিষয়ে রিজওয়ানার সাহসী ও ব্যতিক্রমী দখল ও দৃষ্টান্ত, অর্জন ও জ্ঞানের পরিধি অমর ও অম্লান হয়ে থাকবে। She seems to have distinguished herself to be exceptionally exceptional in terms of her beauty, elegance and polish, and her virtues, commitment and accomplishment, with a basketful of accolades to her credit, though short of a Nobel yet.

“দেশে খুন খারাপি বেড়েছে, হিন্দু নির্যাতন বেড়েই চলেছে, দেশ একটি মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে,” ৭১ টিভিতে রুমিনের এইসব নালিশ গত বায়ান্ন বছরের তুলনায় ভিত্তিহীন। সোশ্যাল মিডিয়াতে একজন কমেন্ট করছেন, “এই মহিলা কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে? হাতে বিশেষ গোষ্ঠীর রশি দেখা যায়! এই মহিলা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। এই মহিলাকে তো বিএনপি চালায় না, চালায় ইন্ডিয়ান “র”। “একাদশ জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ায় দুই মাসের মধ্যে সরকারের কাছে ১০ কাঠার একটি প্লট চেয়েছেন বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা। সরকার প্লট দিলে ‘চিরকৃতজ্ঞ’ থাকবেন বলেও উল্লেখ করেছেন বিএনপি থেকে মনোনীত সংরক্ষিত নারী আসনের এই সাংসদ।“ ১৯৭১-এর পুরস্কারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও ১৯৭৫ ১৫ই আগস্টে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এবং অনেক বইয়ের রচয়িতা ক. রাশেদ চৌধুরী বলছেন , “রুমিন ফারহানকে কতটুকু বিশ্বাস করা যায় সেটাও প্রশ্ন। যদি আমি ঠিক মনে করে থাকি, ৮/৫ এর পর ১৯৭২ সংবিধানের পক্ষে জোরালো কথা বলেছেন, বিভিন্ন আইনি প্রশ্ন তুলে চুপ্পুর পক্ষে ছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বৈধতা নিয়ে কথা বলেছেন । ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে বলছেন।“ “রুমিন ফারহানা নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বৈষম্য বিরোধী হ’ত্যা মামলায় যুবলীগের নেতা সাইফুল ইসলাম সোহেলের পক্ষে জামিন চেয়েছেন। এজাহার নামীয় ১০৫ নং আসামী।“

রুমিনের বিরুদ্ধে ঢাবি ছাত্রদল নেতার পোস্ট দেখুন। “গত কয়েকদিন ধরে সরকারের অনেক সমালোচনা করে যাচ্ছেন রুমিন ফারহানা। রাতে বের হতে ভয় পান তিনি। এমনকি দেশে নিজেকে আগের থেকে অনিরাপদ মনে করেন এই বিএনপি নেত্রী। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে ব্যাপক সমালোচনার ঝড়। এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীমউদ্দীন হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক তানভির বারী হামিম তার ফেসবুক পোস্টে বিএনপির এই নেত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তিনি তার একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেন, দায়িত্ব নিয়ে বলছি-৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে রুমিন ফারহানাকে দলে ভিড়াতে চেয়েছিলেন নতুন দল গড়তে চাওয়া ছাত্রপ্রতিনিধিরা। এ সুযোগ লুফে নিতে বেশ ক’দিন রুমিন ফারহানা বিএনপির নামে অপপ্রচার চালিয়েছে টকশোগুলোতে।“

ক. রাশেদ চৌধুরী আবারো বলছেন, “Rumeen Farhana has become a nuisance these days. She should be banned from any public talks. In a talk show on the recently held investment summit in which Ashik Chowdhury was the star of the show (along with the other guys from the media, investment team, and the NCP), she dismissed the credit as just a media joke. Otherwise, an eloquent speaker, she thought the whole investment show was an eye wash. The NCP man, Tahsin Riyad, equally eloquent, stood his ground in support of the investment seminar that was excellent. আমরা জানি এবারের বিনিয়োগ সম্মেলন অন্যান্য বছরের থেকে ছিল আলাদা। দেশি বিদেশি সবাই সন্তুষ্ট । বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও পাওয়া গেছে মাশাআল্লাহ অনেক, আশা আকাঙক্ষার চেয়েও বেশি। এই জেরটাকে ধরে রাখতে হবে। এটা এককালীন শো নয়, ক্রমবর্ধমান উন্নতির দিকে নিতে হবে। অথচ, এই সাফল্যে কিছু লোকের মনোবেদনা, এমনকি বিষফোঁড়ার মত মনে হলো। দুদিন আগে একটি টকশোতে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহান এই সম্মেলনের সাফল্যকে উড়িয়ে দিলেন। বললেন এটা ছিল প্রফেসর ইউনুস সরকারের একটা মিডিয়া স্টান্ট, আই ওয়াশ! মাশাআল্লাহ, আমাদের দেশে এমন নেতা-নেত্রী বহাল থাকলে আমরা কেন আওয়ামিদের বা বাইরের কাউকে দোষ দেই? দেশকে বিপদে ফেলার জন্য এনারাই যথেষ্ট। ঘরের ইঁদুর যখন বেড়ার বাঁধ কাটে, তখন সেই ঘর কে রক্ষা করবে? একই টক শোতে ছিলেন একজন যুবনেতা, এনসিপি কর্মকর্তা। কথার ফুলঝড়িতে রুমিন থেকে কম যাননি, তবে সম্পূর্ণ বিপরীত এবং নমনীয় । সাবাশ বেটা! রুমিন ফারহানের মুসকি হাসি কেমন বেদনাদায়ক ছিল তা বোধগম্য। হাসিনা আমলে এই ব্যারিস্টারের ফ্যান ছিলাম। তার কথা শুনতে ভাল লাগত। এখন বিপরীতে। আফসোস এই মহিলা অলি আহাদের মত দেশপ্রেমীর মেয়ে! বাপের নামটি ডুবিয়ে দিল!”

ফ্রস্টের কবিতার আলোকে মনে হচ্ছে যে পথটি কবি নেননি রুমিন সেই (চিরাচরিত নিছক সমালোচনার জন্যই সমালোচনার অচলায়তনের) পথটিই বেছে নিচ্ছেন আর রিজওয়ানা নিচ্ছেন নতুন ভিন্নমাত্রার নতুম উদ্দম নতুন প্রচেষ্টার পথটি। তাঁকে স্বাগত জানাই। দেশনেত্রী খালেদার মত তিনিও (রিজওয়ানা) সত্যিকারের একজন দেশকন্যা। রুমিনও ভারতপন্থী না হয়ে বাংলাদেশপন্থী হলে অতি সহজেই অবশ্যই আরেকজন দেশকন্যা হয়ে উঠবেন। ভারতপন্থী আওয়ামী-বিএনপির অসাধু ও ষড়যন্ত্রমূলক আচরণের জন্যই (কিছুটা মেঘ ৫ আগস্ট কেটে গেলেও) চারিদিকেই যেন দুর্ভোগ দুশ্চিন্তা দুর্দশা হতাশার কালো মেঘ ধেয়ে আসছে। চতুর্দিক থেকেই যেন অবেলা কালবেলা অশুভ সময় ঘনিয়ে আসছে। আওয়ামী-বিএনপির অশুভ ইচ্ছা, দেশপ্রেমের অভাব, এমনকি দেশদ্রোহিতার কারণেই দেশের জনগণ বিভক্ত ও বিভ্রান্ত। যাতে করে হিন্দু মৌলবাদী ইস্কনের তুলসী গাবার্ড সহ ভারতীয় বিজেপি-আরএসএস মিডিয়ায় বাংলাদেশ বিরোধী ইউনুস সরকার বিরোধী ইসলাম বিরোধী মুসলিম বিরোধী দিনরাত অনর্গল মিথ্যা, অসত্য ও ভিত্তিহীন প্রচারণা ও নাশকতা চলছে। সরকার, সেনাবাহিনী, ছাত্র জনতা, অন্যান্য দেশপ্রেমী দলগুলো (NCP, Inqilab Manch, GOP, LDP, AB, Jamaat, Hefazat, Islami Andolon, Islami Oikkyjot, Khelphat Majlish and a new BNP of patriots and patriotic nationalists) সবাই একসাথে ভারতীয় মদদপুষ্ট ভারতীয় দালাল আওয়ামী-বিএনপিকে প্রতিহত করতে হবে। আর তা না হলে আমরা ইংরেজ কবি চার্লস কিংসলের (Charles Kingsley) বিখ্যাত কবিতা, “The Sands of Dee” (O Mary Go and Call the Cattle Home) বা সেই কবিতাটির বাঙ্গালী-ভারতীয় কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবীদ হুমাযুন কবিরের (১৯০৬-১৯৬৯) অমর অসাধারণ ভাষান্তর, ভাবানুবাদ বা বংগানুবাদ “মেঘনার ঢল” (শোন্ মা আমিনা … আমিনারে মোর নিল কি টানিয়া মেঘনা সর্বনাশী)কবিতাটি নতুন করে পড়া শুরু করতে হবে। I hope I’m not being too pessimistic.

ডঃ কিউ এম জালাল খান
ইংরেজীর অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত)
ফুলব্রাইট স্কলার, এমএ, পিএইচডি (আমেরিকা)
অনেক সাহিত্য ও রাজনৈতিক বইয়ের লেখক
কানাডা