পতিত সরকারের সাবেক আইন মন্ত্রী আনিছুল হকের নির্বাচনী এলাকা আখাউড়া উপজেলায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে আইন মন্ত্রীর মাধ্যমে বিগত ১৫ বছর দেশের শীর্ষস্থানীয় অফিস গুলোতে পোস্টিং নিয়ে নানা অনিয়ম দূর্নীতি ও বদলী বানিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ও প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন মুন্সিগঞ্জের জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ রমজান খান। বর্তমানে আইন মন্ত্রনালয়ের উচ্চ পদস্থ দুই কর্মকর্তার সঙ্গে সিন্ডিকেট গড়ে তিনি নতুন করে বদলী বানিজ্য শুরু করেছেন বলে কয়েক দিন আগে আইন উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এতে দেশের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ আওয়ামী ক্যাডার ও সাব-রেজিস্ট্রার বদলী বানিজ্যের গডফাদার রমজান খানের দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পাদ অর্জন ও বদলী বানিজ্য করে বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয়।
বাংলাদেশ নিবন্ধন অধিদপ্তরের অধিনস্থ কর্মরত কর্মচারীদের পক্ষে দায়ের করা অভিযোগে আরও বলা হয়েছে বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ রমজান খান দীর্ঘদিন সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকুরী করে দেশের লোভনীয় স্টেশন গুলোতে দু’হাতে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। ২০০৪ সালে সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকুরীতে যোগদান করেন। সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে আওয়ামী লীগের ক্যাডার পরিচয় দিয়ে তার বাড়ী সাবেক আইন মন্ত্রী আনিছুল হকের নির্বাচনী এলাকা আখাউড়া উপজেলায় হবার সুবাদে তিনি আইন মন্ত্রীর মাধ্যমে দেশের শীর্ষস্থানীয় অফিস গুলোতে বদলী হয়ে কোটিপতি বনে যান। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলেন। সেই সুবাদে প্রথম জেল পুলিশ হিসেবে বিভিন্ন জেলে চাকুরী করেছেন। সর্বশেষে যশোর জেলে বন্দীদের অত্যাচার করে টাকা আদায় করার অভিযোগে তার চাকুরী চলে গেলে সাব-রেজিস্ট্রার পদে যোগদান করেন। তারপরই রমজান খানের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। তিনি নরসিংদী সদর, কালামপুর, ফতুল্লা, গুলশান, নেত্রকোনা সদর ও মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত থেকে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি ও বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রার বদলী বানিজ্য করে দু’হাতে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। আর ঐ টাকা বিনিয়োগ করেছেন তার শ্যালকের মাধ্যমে লন্ডন, মালয়শিয়া ও দুবাইতে। তার দুবাই, লন্ডন ও মালয়শিয়ায় রয়েছে প্রায় অর্ধ ডজন বাড়ী।
আওয়ামী সরকারের পটপরিবর্তনের পর রাজনৈতিক দলের ভোল্ট পাল্টে রাতারাতি হয়ে যান বিএনপি নেতা। শুরু করেন তদবীর বানিজ্য ও ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির কমিটি গঠনের দায়িত্ব। আওয়ামী দোসরদের প্রতিষ্ঠিত করতে কয়েকশত আওয়ামী চিহ্নিত কর্মীকে বিএনপিতে যোগদান করিয়ে এবং তাদের রক্ষা করেন। নিজে বিএনপির খাস লোক পরিচয় দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার পদ থেকে জেলা রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি নিয়ে অবৈধভাবে একই জেলার জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন তদবীরের মাধ্যমে। যা বিধি বহির্ভূত। ৫ আগষ্টের পর মামলা বানিজ্যও করেন এই সুচতুর জেলা রেজিস্ট্রার রমজান খান। আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গত ১৭ বছরে যত বদলী বানিজ্য সংঘটিত হয়েছে তার সিংহভাগই বদলীতে নেপথ্য ভুমিকা রেখেছেন রমজান খান। আইন মন্ত্রনালয়ের দুর্নীতিবাজ যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহার ডানহাত হিসেবে বদলী বানিজ্য পাকাপোক্ত করতেই তিনি গুলশান-১ এর গ্লোরিয়ার জিন্স হোটেলটি বেছে নিয়েছেন। সেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যার পরেই বসে রমজান খানের সাব-রেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রার অফিস সহকারীদের বদলী বানিজ্যের হাট।
চট্টগ্রাম সদর, গুলশান, শ্যামপুর, কেরানীগঞ্জ, গজারিয়া, রূপগঞ্জ, কাপাশিয়া, শ্রীপুর, গাজীপুর সদর, রাঙ্গুনিয়া, কক্সবাজার সদর, পটিয়া, নোয়াখালী সদর, টাঙ্গাইল সদর, নবাবগঞ্জ, মধুপুর, ঘাটাইল, ত্রিশাল, কান্দিরপাড়, ফুলপুর, খিলগাঁও সহ দেড় শতাধিক সাব-রেজিস্ট্রার বদলী করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন গত ৬ মাসে। আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ স্থানীয় দুই জন কর্মকর্তাসহ কতিপয় সাব-রেজিস্ট্রারকে সাথে নিয়ে রমজান খান এক সিন্ডিকেট গঠন করে এ বদলী বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন অবলীলাক্রমে। নীলফামারী জেলার জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান মোল্লাকে চট্টগ্রাম সদর অথবা রূপগঞ্জে বদলীর কথা বলে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন রমজান খান। পরে তাকে বদলীর আদেশ করান শীতাকুন্ডে। আরও অতিরিক্ত বেশী টাকা পেয়ে রূপগঞ্জ ও চট্টগ্রাম সদরে অন্যদের বদলী করান। পরবর্তীতে আনডিউ বদলীর দোহাই দিয়ে ৬০ লক্ষ টাকা নিয়ে শীতাকুন্ডের বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিবের বদলীর আদেশ বাতিল করেন। সাব-রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান মোল্লার টাকা গুলো মেরে দেন জেলা রেজিস্ট্রার রমজান খান।
বদলী বানিজ্যের গডফাদার রমজান খান এখন মে মাসের মধ্যে মুন্সিগঞ্জ জেলা থেকে ঢাকা জেলার তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে বদলী হয়ে আসবেন ও ঢাকার জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন। একজন আওয়ামী ক্যাডার ও দেশের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ জেলা রেজিস্ট্রার বিদেশে অর্থ পাচারকারী যদি ঢাকা রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে বদলী হয়ে আসেন তাহলে ঢাকা জেলার ২১টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসই দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা। তাদের মতে এমনিতেই রমজান খানের ৩০ জন ব্যক্তিগত দালাল রয়েছে সারাদেশে। যারা প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিসে দলিল ধরে জোর করে সাব-রেজিস্ট্রারদের দলিল করতে বাধ্য করছে। তার মধ্যে যদি রমজান খান ঢাকায় যোগদান করেন তাহলে ঘুষ দুর্নীতি, দলিল বানিজ্য ও অনিয়ম বেড়ে যাবে কয়েকগুণ বেশী। তাই ঢাকা জেলা সহ সমস্ত রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স জুড়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে এখন রমজান আতংক বিরাজ করছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, রমজান খানের রয়েছে গুলশানে নামে বেনামে ৩০টি ফ্ল্যাট ও প্লট বুকিং করা। গুলশান নিকেতনে তিনি বসবাস করছেন স্বপরিবার নিয়ে। আখাউড়াতে রয়েছে তার কয়েকশত একর জমি। ব্যাংকে রয়েছে মোটা অংকের টাকা। দুর্নীতিবাজ ও বদলী বানিজ্যের গডফাদার রমজান খানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে লিখিত অভিযোগে।
০১:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
তানজিম ইসলাম :
দুর্নীতি ও বদলী বানিজ্যর মাফিয়া মুন্সিগঞ্জের জেলা রেজিস্ট্রার রমজান খান কোটি কোটি টাকার মালিক
Tag :
জনপ্রিয়