কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা পিআইও কর্মকর্তার নামে প্রায় দের কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার কাবিটা/কাবিখা কর্মসূচীর আওতায় ১ম কাবিটা ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৪২ হাজার ২৮১টাকা এবং গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ টিআর কর্মসূচীর ৯০লাখ ২৭ হাজার ৮৫৬টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে টিআর কর্মসূচীর ১কোটি ৮০ লাখ ৫৫ হাজার ৭১২টাকা এবং ৩য় পর্যায়ে কাবিটা ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ২৪০/- টাকা বরাদ্দ পায় । দাউদকান্দি উপজেলায় ১৫ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ টিআর কর্মসূচীর প্রায় পাঁচ কোটি ৬১ লক্ষ টাকার ৩শত ৩০টি এ প্রকল্পের ইউনিয়ন পর্যায় হতে উপজেলা প্রকল্প প্রেরন করা হয়। উপজেলা পরিষদের মিটিং এ যাচাই-বাছাই করে জেলায় প্রেরণ করে ৩শত ৩০টি প্রকল্প অনুমোদিতন করে উপজেলা পরিষদ । সে অনুযায়ী ইউনিয়ন হতে প্রতিটা প্রকল্পেন ৫/৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে থেকে একজন সভাপতি করে কাজ শুরু করা হয় । নিয়ম অনুযায়ী ১ম চলতি বিল অগ্রিম প্রদান করিবে এবং বাকি বিল কাজ ১০০% শেষ করারপর প্রদান করিবে । ইউএনও পিআইও এর যৌথ স্বাক্ষরে পিআইসি সভাপতিকে বিল প্রদান করিবে । সে অনুযায়ী উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসার বিল পাশ করে সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার বরাবর এডভাইস প্রদান করবেন। সে অনুযায়ী সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার পিআইসির নামীয় ব্যাংক হিসাবে উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিস কর্তৃক পাশকৃত টাকা পিআইসি সভাপতির নামীয় হিসাব নাম্বারে জমাদান নিশ্চিত করার কথা থাকলেও বাস্তবতা পাওয়া যায় তার উল্টো।
দাউদকান্দি উপজেলা পিআইও অফিস সহকারী মোসলেম উদ্দিনের শিমুল এবং সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন এর সার্বিক সহযোগিতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন সভাপতিদের একাধিক ফাইল পিআইসির নামীয় হিসাবে জমা না দিয়ে, পিআইসির সভাপতিদেরকে সুকৌশলে ডেকে এনে ফাইল স্বাক্ষর করিয়ে নেন পিআইও অফিস ।
তারপর মূল টাকা থেকে ভুয়া ভ্যাট আইডি নামে পারসেন্টিস আকারে ১২.৫০% থেকে ১৭% পর্যন্ত টাকা কর্তন করে রাখছেন পিআইও অফিস। সর্বনিম্ন ১২.৫০% হারে টাকা কর্তন করলে মোট টাকার অঙ্কে দাড়ায় ৮৪ লক্ষ টাকা। যার সাথে আরো সংযুক্ত রয়েছে উৎকোচ হিসেবে প্রায় ১০% পর্যন্ত টাকা যা অংকের হিসেবে প্রায় ৬১লক্ষ টাকা। সে হিসেবে শুধু টিয়ার আর কাবিটা খাত থেকে পিআইও অফিসে দূনীতি হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা ।
এসব প্রকল্পের সুবিধা ভোগীরা দাউদকান্দি পিআইও অফিস থেকে বিল উত্তোলনের বিরম্বনা এবং তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা সহ সত্যতার কথা জানান গণমাধ্যম কর্মীদের । এই দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্টদের আইনে আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে এলাকার স্থানীয়রা ।
এ ব্যাপারে মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ দুলাল মিয়া বলেন, পিআইও অফিস ভ্যাট আইডি নামে আমাদের থেকে ১২% টাকা কেটে রেখে বাকী টাকার কাজ করেছি। পদুয়া ইউনিয়নের একটি প্রকল্পের সভাপতি আবু তাহের বলেন, আমাদের অনেকের নিকট থেকে ভ্যাট আইডি নামে ১৭% টাকা কর্তন করে রাখছে পিআইও অফিস। অফিস সহকারী মোসলেম উদ্দিন স্যার ব্যাংক থেক টাকা তুলে বাকী টাকা আমাদের কে দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রকল্প সভাপতি বলেন, শুধু ভ্যাট টেক্স নয় সারে তিন শত টাকা স্ট্যাম্প এক হাজার টাকা নিয়েছে হলফ নামার জন্যে। তারা সরকারি লোক তাদের সাথে বেশী কথা বললে আবার টাকা দিতে গরিমশি করে।
ভুক্তভোগীদের কথার রেশ ধরে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে জাল জালিয়াতির সুকৌশল । প্রকল্পের বিল উত্তোলনে জন্য সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় পিআইও অফিস হিসাব রক্ষণ অফিস ও সোনালী ব্যাংকের ।
সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার, মোশারফ হোসেন জানান, একাধিক ফাইলের ক্যাশ টাকা একসাথে পিআইও অফিসের কর্মচারী মোসলেম উদ্দিন এবং অন্যান্য কর্মচারীরা এসে নিয়েছেন। আমাদের কাছে কোন প্রকল্পের সভাপতি আসেনি। পিআইও অফিস ও ইউএনও অফিস থেকে লোক আসলে আমরা ক্যাশ টাকা দিয়েছি। টেক্স ও ভ্যাট নামে কোন ধরনের টাকা কর্তন করা হয়নি।
এ নিয়ে পিআইও অফিস এর হিসাব সহকারী মোসলেম উদ্দিন শিমুলের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, পিআইও স্যার যে ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেই ভাবে দ্বায়িত্ব পালন করেছি। তবে তিনি কিছু কিছু বিল উঠিয়ে আনার কথা স্বীকার করে বলেন, প্রকল্পের সভাপতিরা অফিসে এসে কাগজে সাইন করে গেলে আমি টাকা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে আনি, আমার ঊর্ধ্বতন অফিসাররা আমাকে যা বলেন আমি তাই করি।আমি একা কিছুই করি না বলে তিনি জানান।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার দাউদকান্দি আরিফুল ইসলাম জানায়, প্রকল্প সভাপতি ব্যাংক থেকে টাকা নিবেন নাকি পিআইও অফিস থেকে টাকা নিবেন এটি তার ইচ্ছা। আমরা প্রকল্পের সভাপতি বরাবর বিল দেই। ব্যাংক থেকে কে টাকা উঠাচ্ছে, ব্যাংক কাকে দিচ্ছে সেটি আমাদের দেখার বিষয় না। ভ্যাট ও পারসেন্টিজ আকারে কোন টাকা আমাদের এখানে কাটা হয় না বলেও তিনি জানান ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছরীন আক্তার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার কাবিটা/কাবিখা কর্মসূচীর টাকা ভ্যাট ও টেক্স মুক্ত। বিষয় ক্ষতিয়ে দেখা হবে ধরনের ঘটনায় কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ।
কুমিল্লা জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা (মোহাম্মদ আবেদ আলী) জানান- টিয়ার এবং কাবিটা সম্পূর্ণ ভ্যাট আইডিমুক্ত। এখান থেকে পার্সেন্টিজ আকারে কোন টাকা কাটার সুযোগ নেই। ব্যাংকে পিআইও অফিসের কোন কর্মচারী যেতে পারে না, প্রকল্পের সভাপতি ব্যাংকে থেকে টাকা তুলে আনবে । এ বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে অবশ্যই আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি ।
উল্লেখ্য দাউদকান্দি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার আরিফুল ইসলাম এর পূর্বে গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পিআইও কর্মকর্তা থাকা কালীন সময়ে দূর্নীতির কারণে তার বিরুদ্ধে দুদককে মামলা চলছে। সেই মামলা কপি দেওয়া হলো।