০৯:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তিতাসের আ’ লীগ ওসমান বিএনপি সাইন বোর্ডে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম।

  • প্রকাশিত ১১:২০:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২৩ বার দেখা হয়েছে

কুমিল্লা প্রতিনিধি:

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ইউপি সদস্য হয়ে ওসমান খান, আওয়ামী লীগের অফিস বানিয়ে এলাকায় জমি দখল, অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও টাকার বিনিময়ে সালিশ বৈঠক করার মত অনেক অভিযোগে হোতা ওসমান খান। গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পরও কুমিল্লার তিতাস উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়ন ১ ওয়ার্ড সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা ওসমান খান রাতারাতি আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড নামিয়ে বিএনপি’র সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে নিজের রামরাজত্ব বহাল তবিয়তে আছেন। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারছে না।  তার সাঙ্গপাঙ্গদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নয়াকান্দি-দুঃখিয়ারকান্দি গ্রামবাসী। ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনার পতন হলেও থামছেনা ওসমান মেম্বারের আধিপত্যের প্রভাব বিস্তার।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ পতনের পর ওসমান খান কিছু বিএনপি নেতাকে ম্যানেজ করে  রাতারাতি আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড নামিয়ে  স্থানীয় নয়াকান্দি বাজারে তার ব্যাক্তিগত অফিসে বিএনপি নেতাদের ছবি টানিয়ে বিএনপির অফিস বানায়। এ অফিসে তার
ছোট ভাই সাদ্দাম কে নিয়ে আধিপত্য বিস্তার আগের চেয়ে আরও বেশী সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
২০২২ সালে ওসমান আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নারান্দিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের(নয়াকান্দি-দুঃখিয়ারকান্দি গ্রাম) মেম্বার নির্বাচিত হন। এরপর থেকে নয়াকান্দি, দুঃখিয়ারকান্দি ও পার্শ্ববর্তী গ্রাম ভাটিবন্দ, সোনাকান্দা, নারান্দিয়া, তাইরাকান্দি, বাঘাইরামপুর, গোপালপুরসহ অন্যান্য গ্রামে আধিপত্যের প্রভাব বিস্তার করে আসছেন এবং গড়ে তুলেছেন বিশাল ওসমান বাহিনী।  এ বাহিনী মাদক, চাঁদাবাজি, জুয়া, বিচার বানিজ্য নিয়ে ওসমান মেম্বার আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছে বলেও এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায় (১১ আগস্ট) বিকালে দুঃখিয়ারকান্দি গ্রামের ঈদগাহ মাঠে মাদক, জুয়া সন্ত্রাস ও চাদাবাজির বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভায় তিতাস থানার ওসি উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায়ও নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেন ওসমান ও তার সংঘবদ্ধ চক্রটি। মাদক চক্রের হোতা হয়ে তারাই ওসিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মাদক, জুয়া ও সন্ত্রাসবিরোধী সভা করেন সভা আয়োজকরা এমন ইঙ্গিত করে সভায় বক্তব্য দিলে ওসমান মেম্বার ও সাদ্দাম ক্ষিপ্ত হয়ে বহিরাগত ভাড়াটিয়া ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী তিনটি অটো গাড়িতে করে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের ইঙ্গিত করে বক্তৃতা দেওয়া ব্যক্তিদের ঘরবাড়ি ও নারীসহ পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালান, যা গ্রাম ও বাজারের সকল ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। অস্ত্র হাতে এসব সন্ত্রাসীদের সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

এঘটনায় তিতাস থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগী রুজিনা আক্তার। তিনি বলেন,আমার ভাই কাউছার দুঃখিয়ারকান্দি গ্রামে একটি মাদক বিরোধী সভার আয়োজন করে উক্ত সভায় তিতাস থানার ওসিসহ এলাকার গণ্যমাম্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। মাদক কারবারি ওসমান মেম্বার ও তার ভাই সাদ্দাম পরেরদিন সকালে নয়াকান্দি বাজারে আমার ভাইয়ের ওপর হামলা করে এবং এর প্রতিবাদ করলে আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে এবং আমার ছোট বোনকে মারধর করে। এঘটনায় আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে ওসি সাহেব আমার মামলা নিয়ে আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে আসে। আমার অভিযোগ আমলে না নিয়ে আমি সঠিক বিচার পাইনি। তিনি আরও বলেন, দুঃখিয়ারকান্দি, নয়াকান্দি, ভাটিবন্দসহ আশে-পাশের গ্রামের সাধারণ জনগণ তাদের ভয়ে মুখ খুলার সাহস পান না।

আরেক ভুক্তভোগী নারী লাকী আক্তার বলেন, আমার ছেলের সাথে ঝগরা করেছে তারই জেরে ওসমান মেম্বার আমার বাড়িতে এসে বাড়ি ঘরে হামলা করে ভাংচুর করে আমি ভয়ে আমার ছেলে সন্তান নিয়ে ঢাকায় চলে আসছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার অনেকেই বলেন, ওসমান মেম্বারের রয়েছে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। এলাকাবাসীর দাবি দ্রুত সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ওসমান মেম্বারের সন্ত্রাসী বাহিনীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
নারান্দিয়া ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি জহিরুল ইসলাম ও ১নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি আবু তাহের এর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ওসমান মেম্বার আগে ফেসিস্ট আওয়ামী লীগ এর সাইনবোর্ড অফিস বানিয়ে অনেক জমি দখল, বিচার বানিজ্য ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এখন বিএনপি নেতা ছাদেক চেয়ারম্যান এর নাম ভাঙ্গিয়ে আগের মতই অবৈধ কাজ করছে। বিএনপি তে তাদের কেন পদ পদবি নেই। বিষয়টি আমরা উপজেলা বিএনপিকে জানিয়েছি।
এবিষয়ে অভিযুক্ত ওসমান মেম্বার বলেন, আওয়ামী লীগের সময় মেম্বার হয়েছি তখন ঐ সরকারের সাথে ছিলাম। এখন আমারা বিএনপি করি তাই বিএনপি অফিসে কার্যকলাপ চালাচ্ছি।
আমার নামে যে অভিযোগ আনা হয়ে সম্পন্ন মিথ্যা ও উদ্দেশ্য মুলক।

তিতাস থানা সূত্রে জানা যায়, ওসমান মেম্বার ও তার ভাই সাদ্দামের বিরুদ্ধে  মাদক, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ওসমান মেম্বারের বিরুদ্ধে ৭টি ও সাদ্দামের ৮টি মামলা রয়েছে।

Tag :
জনপ্রিয়

যৌথ বাহিনীর অভিযানে সরকারি ২০ টন গম জব্দ: পিরোজপুরে ফুড প্রোডাক্টস মিল সিলগালা ও এক লাখ টাকা জরিমানা

তিতাসের আ’ লীগ ওসমান বিএনপি সাইন বোর্ডে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম।

প্রকাশিত ১১:২০:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কুমিল্লা প্রতিনিধি:

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ইউপি সদস্য হয়ে ওসমান খান, আওয়ামী লীগের অফিস বানিয়ে এলাকায় জমি দখল, অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও টাকার বিনিময়ে সালিশ বৈঠক করার মত অনেক অভিযোগে হোতা ওসমান খান। গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পরও কুমিল্লার তিতাস উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়ন ১ ওয়ার্ড সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা ওসমান খান রাতারাতি আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড নামিয়ে বিএনপি’র সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে নিজের রামরাজত্ব বহাল তবিয়তে আছেন। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারছে না।  তার সাঙ্গপাঙ্গদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নয়াকান্দি-দুঃখিয়ারকান্দি গ্রামবাসী। ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনার পতন হলেও থামছেনা ওসমান মেম্বারের আধিপত্যের প্রভাব বিস্তার।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ পতনের পর ওসমান খান কিছু বিএনপি নেতাকে ম্যানেজ করে  রাতারাতি আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড নামিয়ে  স্থানীয় নয়াকান্দি বাজারে তার ব্যাক্তিগত অফিসে বিএনপি নেতাদের ছবি টানিয়ে বিএনপির অফিস বানায়। এ অফিসে তার
ছোট ভাই সাদ্দাম কে নিয়ে আধিপত্য বিস্তার আগের চেয়ে আরও বেশী সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
২০২২ সালে ওসমান আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নারান্দিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের(নয়াকান্দি-দুঃখিয়ারকান্দি গ্রাম) মেম্বার নির্বাচিত হন। এরপর থেকে নয়াকান্দি, দুঃখিয়ারকান্দি ও পার্শ্ববর্তী গ্রাম ভাটিবন্দ, সোনাকান্দা, নারান্দিয়া, তাইরাকান্দি, বাঘাইরামপুর, গোপালপুরসহ অন্যান্য গ্রামে আধিপত্যের প্রভাব বিস্তার করে আসছেন এবং গড়ে তুলেছেন বিশাল ওসমান বাহিনী।  এ বাহিনী মাদক, চাঁদাবাজি, জুয়া, বিচার বানিজ্য নিয়ে ওসমান মেম্বার আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছে বলেও এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায় (১১ আগস্ট) বিকালে দুঃখিয়ারকান্দি গ্রামের ঈদগাহ মাঠে মাদক, জুয়া সন্ত্রাস ও চাদাবাজির বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভায় তিতাস থানার ওসি উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায়ও নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেন ওসমান ও তার সংঘবদ্ধ চক্রটি। মাদক চক্রের হোতা হয়ে তারাই ওসিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মাদক, জুয়া ও সন্ত্রাসবিরোধী সভা করেন সভা আয়োজকরা এমন ইঙ্গিত করে সভায় বক্তব্য দিলে ওসমান মেম্বার ও সাদ্দাম ক্ষিপ্ত হয়ে বহিরাগত ভাড়াটিয়া ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী তিনটি অটো গাড়িতে করে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের ইঙ্গিত করে বক্তৃতা দেওয়া ব্যক্তিদের ঘরবাড়ি ও নারীসহ পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালান, যা গ্রাম ও বাজারের সকল ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। অস্ত্র হাতে এসব সন্ত্রাসীদের সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

এঘটনায় তিতাস থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগী রুজিনা আক্তার। তিনি বলেন,আমার ভাই কাউছার দুঃখিয়ারকান্দি গ্রামে একটি মাদক বিরোধী সভার আয়োজন করে উক্ত সভায় তিতাস থানার ওসিসহ এলাকার গণ্যমাম্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। মাদক কারবারি ওসমান মেম্বার ও তার ভাই সাদ্দাম পরেরদিন সকালে নয়াকান্দি বাজারে আমার ভাইয়ের ওপর হামলা করে এবং এর প্রতিবাদ করলে আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে এবং আমার ছোট বোনকে মারধর করে। এঘটনায় আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে ওসি সাহেব আমার মামলা নিয়ে আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে আসে। আমার অভিযোগ আমলে না নিয়ে আমি সঠিক বিচার পাইনি। তিনি আরও বলেন, দুঃখিয়ারকান্দি, নয়াকান্দি, ভাটিবন্দসহ আশে-পাশের গ্রামের সাধারণ জনগণ তাদের ভয়ে মুখ খুলার সাহস পান না।

আরেক ভুক্তভোগী নারী লাকী আক্তার বলেন, আমার ছেলের সাথে ঝগরা করেছে তারই জেরে ওসমান মেম্বার আমার বাড়িতে এসে বাড়ি ঘরে হামলা করে ভাংচুর করে আমি ভয়ে আমার ছেলে সন্তান নিয়ে ঢাকায় চলে আসছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার অনেকেই বলেন, ওসমান মেম্বারের রয়েছে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। এলাকাবাসীর দাবি দ্রুত সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ওসমান মেম্বারের সন্ত্রাসী বাহিনীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
নারান্দিয়া ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি জহিরুল ইসলাম ও ১নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি আবু তাহের এর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ওসমান মেম্বার আগে ফেসিস্ট আওয়ামী লীগ এর সাইনবোর্ড অফিস বানিয়ে অনেক জমি দখল, বিচার বানিজ্য ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এখন বিএনপি নেতা ছাদেক চেয়ারম্যান এর নাম ভাঙ্গিয়ে আগের মতই অবৈধ কাজ করছে। বিএনপি তে তাদের কেন পদ পদবি নেই। বিষয়টি আমরা উপজেলা বিএনপিকে জানিয়েছি।
এবিষয়ে অভিযুক্ত ওসমান মেম্বার বলেন, আওয়ামী লীগের সময় মেম্বার হয়েছি তখন ঐ সরকারের সাথে ছিলাম। এখন আমারা বিএনপি করি তাই বিএনপি অফিসে কার্যকলাপ চালাচ্ছি।
আমার নামে যে অভিযোগ আনা হয়ে সম্পন্ন মিথ্যা ও উদ্দেশ্য মুলক।

তিতাস থানা সূত্রে জানা যায়, ওসমান মেম্বার ও তার ভাই সাদ্দামের বিরুদ্ধে  মাদক, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ওসমান মেম্বারের বিরুদ্ধে ৭টি ও সাদ্দামের ৮টি মামলা রয়েছে।