১৪ জুলাই ২০২৫, সোমবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে প্রখ্যাত সমবায়ী ডা. মো. নুরুল আমিন তামিজীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন বলেন, “ডা. নুরুল আমিন তামিজী ছিলেন গরীবের বন্ধু ও শোষিতের পক্ষে লড়াকু বীরযোদ্ধা।” জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান কবি ও সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মু. নজরুল ইসলাম তামিজী।
এছাড়াও, বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ আউয়াল, কবি ও সম্পাদক অশোক ধর, কবি ও সাংবাদিক আকতার হোসেন, জাগ্রত মহানায়ক শিহাব রিফাত আলম, শফিকুল আলম বাবুল, কবি তৌহিদুল ইসলাম কনক, আরাফাত ইসলাম তামিজী, কবি প্রসপারিনা সরকার, কবি জান্নাতুল ফেরদৌসী, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মোস্তফা, অভিনেতা এ বি বাদল, কবি লিটন সিদ্দিকী, কবি ইকবাল হোসেন, মোহাম্মদ নাজমুল হাসান মিলন প্রমুখ।
ডা. নুরুল আমিন তামিজীর বর্ণাঢ্য জীবনী নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি রলি আক্তার। স্মরণসভায় তাঁর সহকর্মী এবং বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি তার জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং তার অবদানের ওপর আলোকপাত করেন। দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন এম সাইফুল ইসলাম মিরন। নিবেদিত কবিতা পাঠ করেন পীরজাদা আজমীর।
বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন আরও বলেন, “মন্দুক সমিতি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তিনি গ্রামীণ জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য কার্যক্রম শুরু করেন, যা গ্রামীণ মানুষের আর্থিক উন্নতি এবং সামাজিক কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তার আত্মত্যাগ এবং তার অবদানের স্মরণে আয়োজিত আজকের এই স্মরণসভা বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে তার অবদানকে চিরকাল স্মরণীয় করে রাখবে।”
ডা. মো. নুরুল আমিন তামিজী (১৯৩৯ – ২০২৩) ছিলেন বাংলাদেশে সমবায় আন্দোলনের পুরোধা এবং একজন সমাজসংস্কারক, যিনি অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়ন এবং সমবায়ভিত্তিক বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আজীবন কাজ করেছেন। ১৯৬৯ সালে তিনি দরিদ্র ও অসহায় কৃষকদের নিয়ে ‘মন্দুক সমিতি’ গঠন করেন এবং ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মন্দুক সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি’। এই সমিতি আজও গ্রামীণ উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিবেচিত।
তিনি ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন এবং ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চট্টগ্রামে থেকে গণসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জোগান এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ, ১৯৮৪ সালের জাতীয় সমবায় দিবসে তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতির হাত থেকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা লাভ করেন।
ডা. তামিজী ১৯৩৯ সালে কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার মন্দুক গ্রামে এক অভিজাত তামিজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা পন্ডিত এম নুর মোহাম্মদ তামিজী এবং পিতামহ মৌলভী তমিজ উদ্দীন তামিজী ছিলেন প্রভাবশালী ও অগাধ ভূসম্পত্তির মালিক। তবে, পৈতৃক সুত্রে প্রাপ্ত সন্পত্তির অধিকাংশই তিনি মানবকল্যাণে ব্যয় করেন।
ষাটের দশকে চিকিৎসক হিসেবে চট্টগ্রাম ও সিলেটে ব্যাপক সুনাম অর্জন করার পর, তিনি ১৯৬৯ সালে চিকিৎসা পেশা ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসেন এবং সমবায় আন্দোলন শুরু করেন।