জয়পুরহাটের কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা চলতি মৌসুমে চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন। একদিকে বাজারে আলুর দর অস্থির, অন্যদিকে হিমাগারে সংরক্ষণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা দুই পক্ষই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। মৌসুমের শুরুতেই প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে হিমাগার ভাড়া বাড়ানো না গেলেও পরে নানা অজুহাতে প্রতি বস্তায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন হিমাগার মালিকরা।
এমন পরিস্থিতিতে কৃষক ও ব্যবসায়ী মহলের মন্তব্য, সরকার শক্ত নজরদারি এবং দ্রত নীতি সহায়তা ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। তা না হলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও কৃষকদের অনেকেই লোকসান গুনে পথে বসতে বাধ্য হবেন যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
সরেজমিনে জানা গেছে, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার এম ইসরাত, সালামিন ফুডস্, আরবিসহ জেলার ২১টি হিমাগারে এবার ব্যাপক হারে আলু সংরক্ষণ করা হলেও বাজারে চাহিদা কম থাকায় এখনো অধিকাংশ আলু হিমাগারেই রয়ে গেছে। হিমাগার থেকে আনলোডের হার গত বছরের তুলনায় তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত কম।
জেলার বটতলী গ্রামের আলু ব্যবসায়ী আব্দুন নূর জানান, তিনি প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১০০০ বস্তা আলু কিনে দেশের বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করে থাকেন। তিনি জানান, ‘গত দুই-তিন বছর ভালো লাভ হয়েছে, কিন্তু এবার প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় টাকা লোকসান গুনছি। ৬০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা আলু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ৯৬০ টাকায়। অথচ সংরক্ষণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪শ ১০ টাকা থেকে ৪২০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা।’
জেলার হিচমি কাজীপাড়ার কৃষক দিলীপ কুমার বলেন, ‘চরম কষ্ট করে ৩০ বস্তা আলু সালামিন ফুডস্ হিমাগারে সংরক্ষণ করেছি। শুরুতে প্রশাসনের চাপে বস্তা প্রতি ভাড়া ৩৫০ টাকা নির্ধারণ হলেও এখন ৪২০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। বাজারে আলুর দর নেই, আবার হিমাগারের ভাড়া চড়া এই সংকটে গরিব কৃষকরা পড়েছেন উভয় সংকটে।’
হিমাগার কয়েকজন শ্রমিক বেলাল,আতিকুল, জামির, আলমগীর আব্দুল কাদেরসহ অনেকে বলেন, ‘এবার আমাদের প্রতি বস্তায় ২ টাকা করে মজুরি বাড়ানো হয়েছে। অথচ বিদ্যুৎ সংকট নেই, বিদ্যুৎ খরচও বাড়েনি। তাহলে হিমাগার ভাড়া বস্তা প্রতি ৬০-৭০ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এম ইসরাত হিমাগারের ব্যবস্থাপক রায়হান আলম জানান, ‘এ বছর আমাদের হিমাগারে ২ লাখ ৩০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। অথচ ২১ জুন পর্যন্ত মাত্র ৬৮৫ বস্তা আলু আনলোড করা হয়েছে। গত বছর একই সময়ে আনলোড হয়েছিল প্রায় ১৭ হাজার বস্তা। এ বছর কিছু কৃষক ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতেই আলু সংরক্ষণ করেছেন। সেগুলোর বিক্রি এখনো শেষ হয়নি বলেই হয়তো হিমাগার থেকে আনলোড কম হচ্ছে।’
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা আক্তার জাহান বলেন, ‘হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর ভাড়া কেজিতে নয়, বস্তা হিসেবে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলার ১৩টি হিমাগারের মধ্যে ৯-১০টিতে ৩৫০-৩৬০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তবে দু-তিনটি হিমাগারে ৪০০-৪২০ টাকা পর্যন্ত নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। দ্রত তাদের ডেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলার কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান জানান, ‘এবার জেলায় ২১টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। গেল বছর সংখ্যা ছিল ১৯টি। নতুন আরও কিছু হিমাগার তৈরির কাজও চলমান রয়েছে।
০৫:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
কালাই প্রতিনিধি লিটন তালুকদার :
জয়পুরহাটে আলুর বাজার মন্দা, হিমাগারে ভাড়া চড়া বিপাকে কৃষক-ব্যবসায়ীরা
Tag :
জনপ্রিয়