আগ্রাসী পদ্মার তীব্র ভাঙনে একে একে গ্রাস করছে বসতভিটা, আবাদি জমি, সরকারি স্থাপনা ও গ্রামীণ সড়ক। সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন একের পর এক বাসিন্দা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে এমনই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পদ্মাপাড়ের কয়েকটি গ্রামে এখন শুধু ভাঙন হাহাকার। পদ্মা সেখানে সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। বারবার ভাঙনের কবলে পড়ে নিজেদের বেড়ে ওঠা জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় অবস্থান নিতে হচ্ছে পদ্মা-তীরবর্তী বাসিন্দাদের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেনÑ নদী ভাঙন রোধে পদ্মার তীরজুড়ে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাড়ে ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সুফল পাবে ওইসব এলাকার মানুষ।
জানা গেছে, প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদী ভাঙন মানুষের জীবনকে অনিয়শ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়, সেই অনিয়শ্চয়তা থেকে বেরিয়ে আসতে মানুষ চায় স্থায়ী সমাধান। আর এই স্থায়ী সমাধান হচ্ছে একটি শক্তিশালী, টেকসই বাঁধ। কিন্তু বছরের পর বছর তাদের এই দাবিটিই উপেক্ষিত হয়ে আসছে। যার ফলে তাদেরকে প্রতিবারই বর্ষার সময় চরম মূল্য দিতে হয় নিঃস্ব হয়ে। পদ্মার আগ্রাসী রূপ মানুষের দুর্দশা বাড়িয়ে দেয়। পদ্মার ভাঙনে নিঃস্ব হয় তীরবর্তী মানুষ। ভিটেমাটি হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছেন তারা। এর কারণ একটাই ‘টেকসই বাঁধ’ নির্মাণ না হওয়া। অথচ দীর্ঘস্থায়ী, টেকসই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, নকশা হয়েছে; কতো কতো প্রতিশ্রুতি, আশ্বাস পেয়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ। কিন্তু কবে সেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন?
সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর থেকে শিবগঞ্জের মনোহরপুর পর্যন্ত পদ্মা নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। এ ছাড়া সদর উপজেলার দেবিনগর, শাজাহানপুর, চরবাগডাঙ্গা ও আলাতুলি ইউনিয়নের কিছু অংশে ভাঙন দেখা যায়। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ৫ ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ পরিবার ভাঙনের মুখে তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের বরেন্দ্র অঞ্চল অথবা পদ্মা নদীর এপারে বসতঘর তুলছেন। পদ্মা-তীরবর্তী বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছোটবেলা থেকেই নদীর ভাঙা-গড়ার খেলা দেখছি। এই পদ্মা নদী আগে অনেক দূরে ছিল। ভাঙতে ভাঙতে পৌঁছে গেছে বাড়ির দরজায়। এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি ভাঙনের মুখে সরানো হচ্ছে। তীব্র ভাঙনে ইউপি ভবনের জায়গাটিও আর থাকলো না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ বলেন, পদ্মার ভাঙনে আমি নিজে পাঁচবার বাড়ি ভেঙেছি। নদী ভাঙনের কারণে এ বয়সেও (৭৫ বছর বয়সেও) বারবার ঘরবাড়ি ভেঙে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হয়েছে। ভাঙনে আমি তো পাঁচবার বাড়িঘর সরিয়েছি, আমার বাবা-দাদারাও এই নদী ভাঙনে তাদের ভিটামাটি সরিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর বাতাসমোড়, পাঁকার ঘাট, মনোহরপুর, ঝাইলপাড়া, মল্লিকপাড়া, পোলাডাঙ্গা বিওপি এসব এলাকার ডান তীর-বাম তীর মিলে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকা এখন ভাঙনের মুখে। জরুরি ভিত্তিতে পোলাডাঙ্গা বিওপি ও মনোহরপুর এলাকায় জিও ব্যাগ ও জিও টিউব দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু হয়েছে। সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পদ্মা নদীর তীর রক্ষা নামে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রথমে এ প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। বর্তমানে ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন
১০:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
আলি হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের চারটি ইউনিয়ন আগ্রাসী পদ্মা তীব্র ভাঙ্গনে
Tag :
জনপ্রিয়