চট্টগ্রামে বায়েজিদ থানার পাহাড়িকা হাউজিং সোসাইটি এলাকার এজেএফ টাওয়ারের দশম তলার ভাড়া বাসায় ৯ জুলাই রোজ বুধবার স্ত্রী কে হত্যা করে ১১ টুকরা করল পাষণ্ড স্বামী।
খুনি স্বামীর নাম হলো মোঃ সুমন।সে কুমিল্লার বাসিন্দা।সে পেশায় একজন গাড়িচালক। স্বামীর হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার স্ত্রীর নাম হচ্ছে ফাতেমা বেগম তার বাড়ি ছিল নোয়াখালীতে। তারা দুজনের একে অপরের সাথে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল তারপর তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে।
দেড় মাস আগে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার পাহাড়িকা হাউজিং সোসাইটি এলাকার এজেএফ টাওয়ারের দশম তলা ভাড়া নেন সুমন আর ফাতেমা নামে এই দম্পতি। আট বছরের এক ছেলে সন্তান নিয়ে ফ্লাটে থাকতো এই দম্পতি। বুধবার রাতে ফ্লাট থেকে দুর্গন্ধ আর অস্বাভাবিক কিছু শব্দ পেয়ে বাড়ির কেয়ার টেকার সহ কয়েকজন তাদের বাসায় তল্লাশি চালায়। ওই ফ্ল্যাটটির বিভিন্ন স্থান থেকে ফাতেমার শরীরের বিভিন্ন খন্ড কৃত অংশ দেখতে পান তারা। এই সময় সুমনকে বাসার ভেতর তালাবদ্ধ করে এলাকাবাসী এবং থানায় খবর দেয়া হয়। পরে খুনি কৌশলে বাসার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে যাই আসামি সুমন।
এজেএফ টাওয়ারের কেয়ারটেকার মশিউর রহমান বলেন, সুমন এবং ফাতেমা নামে এই দুই দম্পতি আজ থেকে প্রায় দেড় মাস আগে এই এজেএফ টাওয়ারের ১০ তালায় ভাড়া বাসায় উঠেন। যে ফ্লাটে এ নৃশংস ঘটনাটি ঘটে তার ঠিক নিচ তলায় থাকতেন তিনি।৯ জুলাই বুধবার সন্ধ্যার দিকে পানির ফাইফ থেকে বিভিন্ন ধরনের শব্দ শুনতে পান তিনি। এই শব্দটি কীভাবে ও কোত্থেকে হচ্ছে তা দেখতে গিয়ে তিনি তার উপরে থাকা সুমনের ফ্ল্যাটের সামনে যান।তিনি দরজায় নক করার পরও সুমন দরজা খোলেনা। তাই তিনি পাশের ফ্ল্যাটের আরো দুই একজনকে ডেকে নেন। তারা সবাই মিলে যখন দরজায় নক করতেছে তখন থেকে প্রায় বিশ হতে ২৫ মিনিট পর সুমন দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। এবং বলে সে বাথরুমে কিছু কাজ করতেছে তাই তার দরজা খুলতে দেরি হচ্ছিল। তার কথা এবং আচার-আচরণ তাদের কাছে খুব অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল তাই তারা বাসার ভেতর ঢুকে তল্লাশি করে।বাসার কেয়ার টেকার মশিউর রহমান বাথরুমে প্রবেশ করেই দেখে বাথরুমে কাপড়-চোপড় ছিড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।কাপড়ের নিচে এবং বাথরুমের কমেটের ভেতর অনেক গুলো মাংসের টুকরা দেখতে পায়। এরপর তিনি খাটের নিচটা তল্লাশি করতে গিয়ে দেখা মিলল স্ত্রীর পায়ের অংশটুকু। এগুলো দেখে তিনি স্বাভাবিক থাকতে পারছিলেন না তাই খুনি সুমনকে দরজায় তালাবন্দী করে এলাকাবাসী এবং থানায় খবর দেন।এই সুযোগে বাসার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে যায় খুনি সুমন।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তল্লাশি করে দেখতে পান নিহত ফাতেমা বেগমকে খুনের পর তার লাশটিকে খুনি স্বামী ১১ টুকরো করে ফেলে।এই ঘটনায় এলাকার ভেতরে অনেক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। নিহত ফাতেমা বেগমের মা এবং তার বোন ঘটনাস্থলে এসে যখন বোনের লাশের টুকরো দেখতে পান তারা তাদের নিজেদেরকে আর সামলাতে পারছিলেন না। এলাকাবাসীরা বলেন, এ ধরনের ঘটনা তারা এর আগে কখনো দেখেননি।পুরো এলাকায় অনেক আতঙ্ক বিরাজ করছে। এভাবে স্ত্রীকে হত্যা করে নৃশংসভাবে টুকরো টুকরো করাটা আমরা কখনো কাম্য করি না। এ ধরনের খুনিদের উত্তম শাস্তি হলো ফাঁসি। যা দেখে অন্যরাও এ ধরনের কাজ করার আগে সতর্ক হতে পারে। পারিবারিক কলহের কারণে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড হতে পারে ধারণা পুলিশের।
খুনি স্বামী সুমনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে রেব। গতকাল রেব সাত ও নয় এর যৌথ অভিযানে বিজয়নগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ঘাতক সুমনকে।রেব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেছে স্বামী। সুমনের দাবি স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্ক মানতে পারেননি তিনি সেই ক্ষুভ থেকেই গত ৯ জুলাই স্ত্রী কে হত্যার পর লাশ গুম করতে ১১ টুকরো করেন তিনি। কিছু অংশ কমেটে ফেলে প্লেস করে সুমন বাকি অংশ গুম করার আগেই খবর পেয়ে যায় নিজের বাসার কেয়ারটেকার। তাকে বাসার ভেতর আটকে রেখে খবর দিতে যায় পুলিশ এবং এলাকাবাসীকে পরে সে জানালার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে যায়।রেব-৭ অধিনায়ক কর্নেল হাফিজুর রহমান বলেন, স্ত্রীর লাশটি গুম করার উদ্দেশ্যেই সে বাকি কাজগুলো করেছে পরে সে দেখেছে যে ধরা পড়ে যাবে বাঁচার জন্য সে গ্রিল কেটে পালিয়ে যায়। যখন কেউ এ ধরনের কাজ করে সে তখন মানসিক ভাবে অন্য এক পর্যায়ে থাকে। ওই সময় মানুষ অনেক কিছুই করে থাকে যেটা আসলে পূর্ব পরিকল্পিত বলা হয়তো ঠিক হবে না। আমরা তাকে আইনের আওতায় তুলে দিব আইন তাকে তার এই জঘন্যতম কাজের সর্বোচ্চ শাস্তি দিবে।