কাজী ফয়সাল আহম্মেদ
কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার আদমপুর ইউনিয়নের আদমপুর বাজারে নয় শতাংশ খাস জমি নিয়ে এলাকার লোকদের মধ্যে দখল করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এতে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে এলাকায়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আদমপুর লাউরা মৌজাস্থিত এক নং খাস খতিয়ানের আর এস ২৩৬৪ নং দাগ ০.০৯০০ একর ভুমি অকৃষি খাস জমি হিসেবে পতিত অবস্থায় আছে। এলাকাবাসীরা জানায় এক সময় এখানে একটি সরকারী গুদাম ছিল। গুদামটি দীর্ঘ সময় ব্যবহার না করার কারণে গুদামের ঘর দরজা ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশে গেছে। বর্তমানে জমিটি খালি ও পতিত অবস্থায় পড়ে আছে। অনেকদিন যাবৎ সরকার উহা লিজ দিয়ে কোন প্রকার রাজস্বও আদায় করতে পারছেনা। এমতাবস্থায় এলাকার মোঃ ফরহাদ মিয়া পিতা- মোঃ আবদুল করিম, মাতা – মোসাঃ সাফিয়া খাতুন, গ্রাম -বরাগীর কান্দি, ডাকঘর-আদমপুর, উপজেলা-অষ্টগ্রাম, জেলা- কিশোরগঞ্জ অকৃষি খাস জমিটি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা ১৯৯৫ এর আলোকে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য সচিব, ভুমি মন্ত্রণালয়, খাস জমি -১ বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা-১০০০ বরাবর একটি আবেদন দাখিল করেন। ফরহাদ মিয়ার জমিটি লিজ পাওয়ার আবেদনের মুল কারণ হলো জমিটি তার বাড়ি বা জমির সংলগ্ন এবং তিনি দীর্ঘ দিন ধরে হাটবারের দিন এখানে ছোট ছোট অস্থায়ী দোকান বসিয়ে এ সরকারী খাস জমিটি দখলে রেখে দেখাশুনা করে আসছেন।
ফরহাদ মিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে ভুমি মন্ত্রণালয়ের খাস জমি ১ থেকে জেলা প্রশাসক কিশোরগঞ্জকে সরেজমিনে যাচাই পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন, যার স্মারক নং -৩১.০০.০০০০.০৪০.৪১.১০৪.২৩.৮৩/১ (৪) তারিখ ২৩/০৮/২৩ইং। উক্ত পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় কিশোরগঞ্জ এর রাজস্ব শাখা থেকে সহকারী কমিশনার ভুমি অষ্টগ্রামকে একটি পত্র দেন। উক্ত পত্রে, বর্ণিত ভুমি সরেজমিনে তদন্ত ক্রমে রেকর্ডপত্র যাচাই করে অকৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত নীতিমালা ১৯৯৫ অনুযায়ী আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রস্তাব/প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য বলেন, যার স্বারক নং ৩১.১২.৪৮০০.০০৭.২৯.০৭১.১৪-২৭২২, তারিখ ১৯/০৯/২০২৩ ইং। অষ্টগ্রাম উপজেলা ভুমি অফিস স্মারক নং ৪৪৯/১৩ তাং ৩১/১০/২০২৩ ইং ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তাকে বর্ণিত ভুমি সরেজমিনে তদন্ত করে রেকর্ডপত্র যাচাই করে নীতিমালার আলোকে মতামতসহ প্রতিবেদন দানের জন্য বলেন।
সহকারী কমিশনার (ভুমি) এর পত্রের আলোকে আদমপুর ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির উদ্দিন একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন, যার স্মারক নং ১০০ তারিখ ১৯/১২/২০২৩ ইং।
তিনি তার প্রতিবেদনে লেখেন যে, ”আমি অত্র অফিসের রেকর্ডপত্র ও সরেজমিনে তদন্ত করি, তদন্তে দেখা যায় যে, আর এস ২৩৬৪ দাগটি পরিমাণ ০.০৯০০ একর ভুমি শ্রেণী আর এস রেকর্ডে গুদাম থাকিলেও বর্তমানে পতিত ভুমি রহিয়াছে। ভুমি প্রশাসন ম্যানুয়েলের প্রথম খন্ডের ৩ এর ৬ অনুযায়ী কারখানা ও বাড়ী সংলগ্ন খাস জমি আছে এবং এই খাস জমির অবস্থান এমন যে, অন্য কাহাকেও বন্দোবস্ত প্রদান করিলে বাড়ী বা শিল্প কারখানায় যাতায়াতসহ অন্যান্য অসুবিধার সৃষ্টি হইবে, সেক্ষেত্রে বাড়ীর মালিক বা শিল্প কারখানার অনুকুলে বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে এই খাস জমি (কৃষি বা অকৃষি যাহাই হোক না কেন) দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত দেওয়া যাবে বলে ভুমি প্রশাসন ম্যানুয়ালে উল্লেখ রহিয়াছে।” যেহেতু আবেদীত ভুমি পতিত অবস্থায় আছে আবেদনকারীকে দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্ত প্রদান করিলে একদিকে সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব প্রাপ্ত হবে, অন্যদিকে সরকারের সম্পদটি বেহাত হওয়ার সম্ভবনা থেকে রক্ষা পাবে। বর্তমানে উক্ত ভুমি আবেদনকারীর বাড়ীর সংলগ্ন থাকায় আবেদনকারীর দখলে রহিয়াছে।”
তিনি তার মতামতে উল্লেখ করেছেন যে, ’উক্ত ভুমিটি সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী আবেদনকারীর অনুকুলে দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্ত প্রদান করা যাইতে পারে । এতে সরকারের কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নাই।’
ইউনিয়ন ভুমি অফিসের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সহকারী কমিশনার ভুমি অষ্টগ্রাম মোঃ উবায়দুর রহমান সাহেল এই প্রতিবেদন আড়াল করে জেলা প্রশাসন কিশোরগঞ্জকে স্মারক নং ৩৩৩ তাং ০৫/০৫/২০২৪ ইং এ অন্য একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন যাহা পূর্বের তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে সাংঘর্ষিক। এমতাবস্তায় আবেদনকারী ফরহাদ মিয়া জেলা প্রশাসক কিশোরগঞ্জ বরাবর আরেকটি আবেদন দেন যে, ”অষ্টগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি এর স্মারক নং -৩৩৩ তারিখ ০৫/০৫/২০২৪ ইং এর ভুল প্রতিবেদনটি বাতিল করার জন্য। উক্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় কিশোরগঞ্জ এর রাজস্ব শাখা বিষয়টি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় সহকারী কমিশনার (ভুমি) অষ্টগ্রামকে প্রেরণ করেন। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে।
এদিকে ফরহাদ মিয়ার দরখাস্তটি সহকারী কমিশনার (ভুমি) অষ্টগ্রাম এর কার্ষালয় আসলে বিষয়টি সম্পর্কে আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অবগত হন। তিনি তড়িঘরি করে ফরহাদ মিয়াকে হুমকি ধামকি দিয়ে সরকারী খাস জমিতে দোকান নির্মাণ করে পজিশন বিক্রি শুরু করেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবগত হয়ে থানা পুলিশের সহায়তায় স্থাপনা ভেঙ্গে পুনরায় মাটি সমান করে দেন। ফরহাদ মিয়া জমিটি পুনরায় দখলে নিয়ে জমিটির দেখাশুনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে এলাকার একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ফরহাদ মিয়াকে প্রাণ নাশের হুমকি ধামকি দিয়ে জমি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে কোন মুহুর্ত্বে ফরহাদ মিয়াকে জমি থেকে উচ্ছেদ করে সন্ত্রাসীরা জমির দখল নিতে পারে বলে এলাকবাসীরা আশংকা প্রকাশ করছে। এলাকাবাসীরা ফরহাদ মিয়ার বন্দোবস্ত প্রাপ্তির বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যে যেই অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যতায় এলাকার আইন শৃঙ্খলা বিঘœ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মত দেন তারা।