০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
কালাই জয়পুরহাট প্রতিনিধি:

কালাইয়ে ভেরেন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে পাঠদান

  • প্রকাশিত ০৬:০১:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
  • ৮৭ বার দেখা হয়েছে

জয়পুরহাটের কালাইয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যেই প্রতিদিন পাঠ নিচ্ছেন এই বিদ্যালয়ের একশত তিরাশি (১৮৩) জন শিক্ষার্থী। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও দিব্যি চলছে পাঠদান। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ভয় ও আতংক। বলছি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের ভেরেন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা।

বিদ্যালয়টিতে আছে ৩ কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ভবন এবং ৫ কক্ষ বিশিষ্ট টিনশেড ভবন। টিনশেড ভবনের ৫টি কক্ষের মধ্যে ৪টি কক্ষে চলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান এবং বাকি ১ টি কক্ষ ভাঙ্গা ব্রেঞ্চ,চেয়ার,টেবিল ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় জিনিসপতত্রে ভরা। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালেই দৃশ্যমান হয়েছে বৃহৎ অংশ জুড়ে ফাটল, যেকোন মুহূর্তে দেয়াল ধসে পড়ার উপক্রম ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এছাড়া পাকা ভবনের ৩ টি কক্ষের মধ্যে একটি অফিস কক্ষ আর ২টি শ্রেনী কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাকা ভবনেরও ছাদের অনেক অংশ থেকে সিমেন্টের প্লাস্টার খুলে পড়েছে।

বিদ্যালয়টি ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৮৩ সালে তিন কক্ষ এবং ১৯৯৪ সালে দুই কক্ষসহ ৫ কক্ষের টিনশেড ভবন নির্মিত হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে তিন কক্ষবিশিষ্ট পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয়টির মোট আটটি কক্ষের মধ্যে টিনশেড ভবনের পুরাতন পাঁচটি কক্ষই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১শ ৮৩ জন শিক্ষার্থী এবং ছয় জন শিক্ষক রয়েছে।

ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সেখানে পাঠদান করতে নিষেধ করেন কিন্তু
ঝুঁকিপূর্ণ হলেও নতুন ভবন না হওয়ায় এবং জায়গা না থাকায় পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। এমনটাই জানিয়েছেন এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক।

পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া সামিউল ইসলাম বলেন, আমাদের স্কুলের ঘর দেখেন কত ভাঙ্গাচূড়া,আমাদের এই ঘরে পড়তে ভয় লাগে। তাই জন্য সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ এই ঘরটা ভালো করে দেক।

চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া জাইফা আক্তার বলেন,দেয়ালটি খুব ভাংগা চূড়া, যদি দেয়ালটি ভালো থাকতো তাহলে আমরা আনন্দে ক্লাস করতে পারতাম।হঠাৎ করে দেয়ালটি পড়ে গেলে আমাদের ছাত্র- ছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারতো। আমাদের ঘরের টিন টুন ফাটা সেজন্য বৃষ্টি পড়ে আমরা ক্লাস করতে পারিনা।আমরা সবাই চাই আমাদের নতুন একটি বিদ্যালয় সুন্দরভাবে হোক।

পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া আরেক ছাত্রী শাহনাজ সাদিয়া মুন্নি বলেন, আমাদের এই ঘরটি ভাংগা,আমাদের এই ঘরে ক্লাস করতে খুব ভয় লাগে। আমাদের বিদ্যালয়ের নতুন ভবন দরকার।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পপি রানী পাল বলেন,আমাদের এই ভবন পরিত্যক্ত ভবন,এটা ঘোষণা করা হয়েছে, আমাদের এটিও বা টিও স্যার এসে বলে গেছেন। তারপর ও আমাদের এখানে ৭ পোস্টের স্কুল বিধায় আমাদের এখন ক্লাস নিতেই হচ্ছে, এক শিফট হিসেবে।

বিদ্যালয়ের আরেক সহকারী শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন, ভেরেন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। আপনারা কালাই উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের দিকে তাকিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন প্রত্যেকটা বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এই বিদ্যালয়ের ভাঙ্গা রুমে এখনো আমরা ক্লাস করতেছি। কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ ফরিদউদ্দিন আক্তার বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ের টিনশেড ভবন আছে একটি এবং পাকা ভবন আছে একটি।
স্থান সংকুলান না হওয়ায় টিনশেড ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরেও আমরা ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছি। অতি দ্রুত আমাদের বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা খুবই জরুরী।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) রাশেদুল আলম বলেন, উপজেলার ভেরেন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিযোগটি আমি জানতে পেরেছি। যেহেতু আমি নতুন আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে দ্রুত একটি নতুন ভবনের ব্যবস্থার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হবে।

Tag :
জনপ্রিয়

সার্ক মিডিয়া ক্লাব আয়োজিত বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

কালাই জয়পুরহাট প্রতিনিধি:

কালাইয়ে ভেরেন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে পাঠদান

প্রকাশিত ০৬:০১:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

জয়পুরহাটের কালাইয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যেই প্রতিদিন পাঠ নিচ্ছেন এই বিদ্যালয়ের একশত তিরাশি (১৮৩) জন শিক্ষার্থী। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও দিব্যি চলছে পাঠদান। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ভয় ও আতংক। বলছি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের ভেরেন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা।

বিদ্যালয়টিতে আছে ৩ কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ভবন এবং ৫ কক্ষ বিশিষ্ট টিনশেড ভবন। টিনশেড ভবনের ৫টি কক্ষের মধ্যে ৪টি কক্ষে চলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান এবং বাকি ১ টি কক্ষ ভাঙ্গা ব্রেঞ্চ,চেয়ার,টেবিল ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় জিনিসপতত্রে ভরা। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালেই দৃশ্যমান হয়েছে বৃহৎ অংশ জুড়ে ফাটল, যেকোন মুহূর্তে দেয়াল ধসে পড়ার উপক্রম ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এছাড়া পাকা ভবনের ৩ টি কক্ষের মধ্যে একটি অফিস কক্ষ আর ২টি শ্রেনী কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাকা ভবনেরও ছাদের অনেক অংশ থেকে সিমেন্টের প্লাস্টার খুলে পড়েছে।

বিদ্যালয়টি ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৮৩ সালে তিন কক্ষ এবং ১৯৯৪ সালে দুই কক্ষসহ ৫ কক্ষের টিনশেড ভবন নির্মিত হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে তিন কক্ষবিশিষ্ট পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয়টির মোট আটটি কক্ষের মধ্যে টিনশেড ভবনের পুরাতন পাঁচটি কক্ষই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১শ ৮৩ জন শিক্ষার্থী এবং ছয় জন শিক্ষক রয়েছে।

ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সেখানে পাঠদান করতে নিষেধ করেন কিন্তু
ঝুঁকিপূর্ণ হলেও নতুন ভবন না হওয়ায় এবং জায়গা না থাকায় পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। এমনটাই জানিয়েছেন এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক।

পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া সামিউল ইসলাম বলেন, আমাদের স্কুলের ঘর দেখেন কত ভাঙ্গাচূড়া,আমাদের এই ঘরে পড়তে ভয় লাগে। তাই জন্য সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ এই ঘরটা ভালো করে দেক।

চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া জাইফা আক্তার বলেন,দেয়ালটি খুব ভাংগা চূড়া, যদি দেয়ালটি ভালো থাকতো তাহলে আমরা আনন্দে ক্লাস করতে পারতাম।হঠাৎ করে দেয়ালটি পড়ে গেলে আমাদের ছাত্র- ছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারতো। আমাদের ঘরের টিন টুন ফাটা সেজন্য বৃষ্টি পড়ে আমরা ক্লাস করতে পারিনা।আমরা সবাই চাই আমাদের নতুন একটি বিদ্যালয় সুন্দরভাবে হোক।

পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া আরেক ছাত্রী শাহনাজ সাদিয়া মুন্নি বলেন, আমাদের এই ঘরটি ভাংগা,আমাদের এই ঘরে ক্লাস করতে খুব ভয় লাগে। আমাদের বিদ্যালয়ের নতুন ভবন দরকার।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পপি রানী পাল বলেন,আমাদের এই ভবন পরিত্যক্ত ভবন,এটা ঘোষণা করা হয়েছে, আমাদের এটিও বা টিও স্যার এসে বলে গেছেন। তারপর ও আমাদের এখানে ৭ পোস্টের স্কুল বিধায় আমাদের এখন ক্লাস নিতেই হচ্ছে, এক শিফট হিসেবে।

বিদ্যালয়ের আরেক সহকারী শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন, ভেরেন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। আপনারা কালাই উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের দিকে তাকিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন প্রত্যেকটা বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এই বিদ্যালয়ের ভাঙ্গা রুমে এখনো আমরা ক্লাস করতেছি। কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ ফরিদউদ্দিন আক্তার বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ের টিনশেড ভবন আছে একটি এবং পাকা ভবন আছে একটি।
স্থান সংকুলান না হওয়ায় টিনশেড ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরেও আমরা ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছি। অতি দ্রুত আমাদের বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা খুবই জরুরী।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) রাশেদুল আলম বলেন, উপজেলার ভেরেন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিযোগটি আমি জানতে পেরেছি। যেহেতু আমি নতুন আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে দ্রুত একটি নতুন ভবনের ব্যবস্থার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হবে।