০৮:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
জয়নাল আবেদীন মানিক কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

ঐতিহ্যবাহী ঢাক ও ঢোলের বাজার জমেছে।

  • প্রকাশিত ১২:৩১:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • ১৮৩ বার দেখা হয়েছে

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে এবারও বসেছে ৫০২ বছরের ঐতিহ্যবাহী দেশের একমাত্র ঢাকের হাট। সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই হাট চলবে বুধবার দিন পর্যন্ত। ঢাক ছাড়াও ঢোল, ড্রাম, বাঁশি, সানাই, মন্দিরা, কাঁসি, ঝনঝনিসহ বাহারি বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বাদ্যকর আসেন এই হাটে। একসঙ্গে নানা বাদ্যের সন্মিলিত শব্দে ভিন্ন রকম উৎসবের আবহ তৈরি হয়েছে কটিয়াদীর পুরাতনবাজার এলাকায়। জনশ্রুতি আছে, ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমভাগে স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় তার রাজপ্রসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। উপজেলার চারিপাড়া গ্রামে ছিল ওই রাজার প্রসাদ। রাজা সেরা ঢাকির সন্ধান করতে গিয়ে বিক্রমপুর পরগনার (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ) ঢাকিদের আমন্ত্রণ জানান। সেই সময় নৌপথে অসংখ্য ঢাকি ও বাদকরা আসেন এখানে । তারপর রাজা নিজে সবার বাজনা শুনে বেছে নেন সেরা দলটিকে। সেই থেকেই প্রচলন এই ঢাকের হাটের। ঢাকের বাজনা ছাড়া দুর্গাপূজা অসম্পূর্ণ। মহাষষ্ঠী থেকে বিসর্জন সবক্ষেত্রেই চাই ঢাকের আওয়াজ। তাই পূজার সময় ঢাকঢোলের কদর বাড়ে। এ সময় মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, সিলেট, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকিরা আসেন এই হাটে। তাদেরকে নিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পূজার আয়োজকরা আসেন এই হাটে। সোমবার সকালে এ হাটে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকি ও পূজা আয়োজকদের ভিড়ে জমে উঠেছে ঢাকের হাট। এবার হাটে একটি ঢাক ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা, ঢোল ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা, ব্যান্ডপার্টি প্রকারভেদে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় পর্যন্ত বায়না হচ্ছে। কথা হয় বিক্রমপুর থেকে আসা যাদব চন্দ্র দাস, স্বপন চন্দ্র দাস, দিলীপ চন্দ্র দাস, অনুপ কমল চন্দ্র দাস, নীল চন্দ্র দাস কয়েকজন ঢাকির সাথে। তারা জানান, এবার পূজার আয়োজন বেশি। এ কারণে ভালো বায়না প্রত্যাশা করছেন তারা। তবে হাটে আসা বাদকদের থাকা-খাওয়া, রাত্রিযাপন ব্যবস্থা অপ্রতুল বলেও জানান তারা। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, কটিয়াদী উপজেলা শাখার সভাপতি ও ঢাকের হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য বেণী মাধব ঘোষ বলেন, এ হাটের ইতিহাস শত শত বছরের পুরানো। এখানে আসা ঢাকি ও যারা বায়না করতে আসে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে থাকি। কটিয়াদী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব বাবু ধ্রুব রঞ্জন দাস বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই ঢাকের হাটটি এলাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ ঢাকের হাটটি এই এলাকায় সকল প্রকার মানুষের মধ্যে উৎসবে পরিণত হয়। ঢাকিদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :
জনপ্রিয়

“বমু কাঠকাণ্ডে আসছেন উপদেষ্টা—‘অপরাধ ঢাকতে দেব না’”

জয়নাল আবেদীন মানিক কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

ঐতিহ্যবাহী ঢাক ও ঢোলের বাজার জমেছে।

প্রকাশিত ১২:৩১:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে এবারও বসেছে ৫০২ বছরের ঐতিহ্যবাহী দেশের একমাত্র ঢাকের হাট। সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই হাট চলবে বুধবার দিন পর্যন্ত। ঢাক ছাড়াও ঢোল, ড্রাম, বাঁশি, সানাই, মন্দিরা, কাঁসি, ঝনঝনিসহ বাহারি বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বাদ্যকর আসেন এই হাটে। একসঙ্গে নানা বাদ্যের সন্মিলিত শব্দে ভিন্ন রকম উৎসবের আবহ তৈরি হয়েছে কটিয়াদীর পুরাতনবাজার এলাকায়। জনশ্রুতি আছে, ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমভাগে স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় তার রাজপ্রসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। উপজেলার চারিপাড়া গ্রামে ছিল ওই রাজার প্রসাদ। রাজা সেরা ঢাকির সন্ধান করতে গিয়ে বিক্রমপুর পরগনার (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ) ঢাকিদের আমন্ত্রণ জানান। সেই সময় নৌপথে অসংখ্য ঢাকি ও বাদকরা আসেন এখানে । তারপর রাজা নিজে সবার বাজনা শুনে বেছে নেন সেরা দলটিকে। সেই থেকেই প্রচলন এই ঢাকের হাটের। ঢাকের বাজনা ছাড়া দুর্গাপূজা অসম্পূর্ণ। মহাষষ্ঠী থেকে বিসর্জন সবক্ষেত্রেই চাই ঢাকের আওয়াজ। তাই পূজার সময় ঢাকঢোলের কদর বাড়ে। এ সময় মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, সিলেট, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকিরা আসেন এই হাটে। তাদেরকে নিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পূজার আয়োজকরা আসেন এই হাটে। সোমবার সকালে এ হাটে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকি ও পূজা আয়োজকদের ভিড়ে জমে উঠেছে ঢাকের হাট। এবার হাটে একটি ঢাক ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা, ঢোল ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা, ব্যান্ডপার্টি প্রকারভেদে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় পর্যন্ত বায়না হচ্ছে। কথা হয় বিক্রমপুর থেকে আসা যাদব চন্দ্র দাস, স্বপন চন্দ্র দাস, দিলীপ চন্দ্র দাস, অনুপ কমল চন্দ্র দাস, নীল চন্দ্র দাস কয়েকজন ঢাকির সাথে। তারা জানান, এবার পূজার আয়োজন বেশি। এ কারণে ভালো বায়না প্রত্যাশা করছেন তারা। তবে হাটে আসা বাদকদের থাকা-খাওয়া, রাত্রিযাপন ব্যবস্থা অপ্রতুল বলেও জানান তারা। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, কটিয়াদী উপজেলা শাখার সভাপতি ও ঢাকের হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য বেণী মাধব ঘোষ বলেন, এ হাটের ইতিহাস শত শত বছরের পুরানো। এখানে আসা ঢাকি ও যারা বায়না করতে আসে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে থাকি। কটিয়াদী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব বাবু ধ্রুব রঞ্জন দাস বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই ঢাকের হাটটি এলাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ ঢাকের হাটটি এই এলাকায় সকল প্রকার মানুষের মধ্যে উৎসবে পরিণত হয়। ঢাকিদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।