১০:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাজু আলীম

এনআরবি ব্যাংকে ইকবাল আহমেদের প্রত্যাবর্তন: নতুন ধারায় এনআরবি ব্যাংক ইকবাল আহমেদ চেয়ারম্যান, এনআরবি ব্যাংক চেয়ারম্যান, সীমার্ক গ্রুপ অব কোম্পানিজ চেয়ারম্যান, আইবিসিও ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড

  • প্রকাশিত ১০:০৪:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫
  • ৪ বার দেখা হয়েছে

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অনন্য ব্যক্তিত্ব, প্রবাসী ব্যবসায়ী ও সম্মানিত শিল্পোদ্যোক্তা ইকবাল আহমেদ আবারও এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ১২ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে ভেঙে দেওয়া পূর্ববর্তী পরিচালনা পর্ষদের স্থলে গঠিত নতুন পর্ষদের সর্বসম্মতিক্রমে তিনি এ পদে নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যাংকটির নেতৃত্ব দেন তিনি। প্রায় এক দশক পর তাঁর এই প্রত্যাবর্তন কেবল একটি দায়িত্ব নয়, বরং একটি বিশ্বাসযোগ্য ও স্থিতিশীল ব্যাংকিং কাঠামো গঠনের প্রতিশ্রুতি।
ইকবাল আহমেদ কেবল একজন ব্যাংকার নন, তিনি একজন বৈশ্বিক উদ্যোক্তা, যিনি সিলেট থেকে শুরু করে লন্ডন পর্যন্ত বিস্তৃত করেছেন তাঁর ব্যবসায়িক পরিসর। সীমার্ক গ্রুপ অব কোম্পানিজ এবং আইবিসিও ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে এই প্রতিষ্ঠানগুলো আজ বিশ্বজুড়ে হিমায়িত খাদ্যপণ্য সরবরাহের নির্ভরযোগ্য নাম। সীমার্ক গ্রুপ বর্তমানে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপজুড়ে ব্ল্যাক টাইগার চিংড়ি, সামুদ্রিক খাদ্য এবং হিমায়িত পণ্যের অন্যতম বড় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এই সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০১ সালে ব্রিটেনের রাজপরিবারের পক্ষ থেকে তিনি অর্জন করেন ওবিই (অফিসার অব দ্য মোস্ট এক্সিলেন্ট অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার)। এর পাশাপাশি ২০০২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময়জুড়ে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক হিসেবে সিআইপি মর্যাদা লাভ করে আসছেন।
ব্যাংকিং খাতে তাঁর প্রত্যাবর্তন এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন এনআরবি ব্যাংক নানা বিতর্ক আর অনিয়মের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। ব্যাংকটির আগের চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমান ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পর্ষদ একসময় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মাহতাবুর রহমান তাঁর পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজনদের নিয়ে ব্যাংকের নীতিনির্ধারণ থেকে পরিচালন, সব ক্ষেত্রেই একটি অর্থনৈতিক অনিয়মের ধারা তৈরি করেছিলেন। এ সময় ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদকে পরিচালনা পর্ষদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে এই রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ অবসান হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন উদ্যোগে গঠিত পরিচালনা পর্ষদে ইকবাল আহমেদের অন্তর্ভুক্তি এবং পরবর্তীতে সর্বসম্মত নির্বাচনে তাঁর চেয়ারম্যান হওয়া ব্যাংকটি এবং এর গ্রাহকদের জন্য নতুন করে আস্থার পুনর্গঠন বলে দৃশ্যমান।
ইকবাল আহমেদ একজন প্রথিতযশা, অভিজ্ঞ এবং সৎ ব্যবসায়ী যিনি বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন নিষ্ঠা ও সুনামের সঙ্গে। তাঁর এই গুণাবলি ব্যাংকের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ মহল মনে করছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এনআরবি ব্যাংকের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আস্থা পুনরুদ্ধার এবং নিয়ন্ত্রণের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। ব্যাংকটির আর্থিক কাঠামো ও সেবাদান ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজন দূরদর্শী নেতৃত্ব ও দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা—যা ইকবাল আহমেদের অতীত কর্মযজ্ঞেই প্রমাণিত। তাঁর নেতৃত্বে ব্যাংকটি কি আগের গৌরব ফিরে পাবে, নাকি এই পরিবর্তন হবে শুধুই একটি সাংগঠনিক পদক্ষেপ—তা সময়ই বলে দেবে। তবে কর্পোরেট ও আর্থিক মহলে এই প্রত্যাবর্তন ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে নিঃসন্দেহে।
বিশ্বজুড়ে তার সুদূরপ্রসারী ব্যবসায়িক সাফল্য এবং নীতিগত দৃঢ়তায় ইকবাল আহমেদ নিজেকে প্রমাণ করেছেন এমন একজন নেতা হিসেবে, যিনি কেবল প্রতিষ্ঠানের মুখ নয়, বরং তার ভিত নির্মাণে সক্রিয়। এমন নেতৃত্বই বর্তমান আর্থিক খাতে নতুন আস্থা, নৈতিকতা ও কর্পোরেট গভর্ন্যান্সের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। তাঁর পুনঃনির্বাচন এনআরবি ব্যাংকের জন্য কেবল একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং একটি প্রাতিষ্ঠানিক পুণর্জাগরণের সম্ভাবনাও বয়ে আনছে।
এনআরবি ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা নিয়ে তাঁর সাথে কথা বলেছেন কবি, সাংবাদিক রাজু আলীম। এবার থাকছে সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ।
রাজু আলীম: এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে বর্তমান পরিস্থিতিকে কিভাবে দেখছেন? বিগত সরকারের কারণে সৃষ্টি হওয়া দুর্নীতির অভিঘাত এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকে আপনারা কিভাবে সমন্বয় করছেন?
ইকবাল আহমেদ: এনআরবি ব্যাংক স্থাপন করার প্রথম উদ্দেশ্য ছিল যে এনআরবিদেরকে কিভাবে ইনওয়ার্ড ইনভেস্টমেন্টে আনা যায় এবং সেই কাজটাই আমি প্রথম করেছি। আমি এটার উদ্যোক্তা প্রায় ৪৬ জন হাইলি সাকসেসফুল অন্ট্রপ্রেনার বাংলাদেশি লিভিং অল ওভার দা ওয়ার্ল্ড। জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইতালি, ইউরোপ, মিডিল ইস্ট, ক্যানাডা, আমেরিকা সব জায়গা থেকে আমি নিয়ে আসছি এবং এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ এটাই আমাদের নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশী ব্যাংক। এটার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই উই ট্রিট আওয়ারসেলফ এজ এনআরবি ফরেন ব্যাংক এবং আমাদের সার্ভিসটা ওরকম। আমাদের শেয়ারহোল্ডাররাও কিন্তু ফরেনারদের মত এস্টাবলিশ অল ওভার ওয়ার্ল্ড। বিগত ১৫-১৬ বছরে ব্যাংকিং সেক্টরে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা বলা বাহুল্য। আমার বলার কিছু নাই। আমরাও ভুক্তভোগী আমি বলব আমাদেরও অনেক টাকা ক্লাসিফাইড হয়েছে। আপনাদের মাধ্যমে আমি বলব আমাদের এখানে যাদের ক্লাসিফাইড হয়েছে তাদেরকে অনুরোধ করব যে আমরা অত্যন্ত নিরীহ, পরিশ্রমী, ট্যাক্স পেইড মানি। এটা বাংলাদেশ সরকার কিন্তু এটা প্রপারলি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমাদেরকে লাইসেন্স দিয়েছেন। তো আমাদের এই টাকাটা পরিশোধ করেন। আমাদেরকে নিজের পায়ে আবার দাঁড়াতে দেন। আমরা আপনাদের ভাই এবং ছেলে সন্তানের মত। আমরা সাকসেসফুল হলে প্রবাসী এনআরবি বাংলাদেশীরা সাকসেসফুল হবে। আরো আসবে এবং তারা না আসলে কিন্তু ফরেন ইনভেস্টমেন্ট এ দেশে আসবে না।
রাজু আলীম: ব্যাংকের উদ্যোক্তারা যেইভাবে বাংলাদেশকে নিঃশ্ব করে গেল এবং একটি সরকার চেঞ্চ দেখল কিংবা তারাও সহযোগী ছিল। একই সাথে বলব বিএবির যে কার্যক্রম নজরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বে যেগুলো ঘটেছিল, আপনি একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে এই প্রসঙ্গে কী বলবেন?
ইকবাল আহমেদ: দেখেন আমি তো প্রথমে অলমোস্ট তিন তিন বছর ছিলাম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। তারপরে তো আমি ছিলাম না। জটিল কতগুলা কাজ ব্যাংকিং সেক্টরে গত পাঁচ সাত বছরের মধ্যে হয়েছে। টাকা রিটার্নের ব্যাপারে আপনি বলবেন ডিপার্ট্রিয়েশন। আমি জানি সরকার এবং সেন্ট্রাল ব্যাংক ঠিক ওই রাস্তায় যাচ্ছে এই টাকাটা আনার জন্য। কতটুকু সাকসেসফুল হবে জানিনা। ইংল্যান্ড অথবা আমেরিকা অথবা ক্যানাডা অথবা মিডিল ইস্ট, টাকা কিন্তু একবার ওই দেশগুলোতে গেলে ওটা সহজে ওরা আর দিতে চায় না। এটা তো আমরা জানি। সুতরাং আমি আশা করব যে এটা বিভিন্ন সরকার বিদেশী সরকারের সংস্থা যেগুলা কাজ করছে তারা এটা সাকসেসফুল হবেন এবং কিছু না কিছু টাকাতে ফেরত আসবে এবং আসছে শুনছি। তবে আমাদের ব্যাপারে আমাদের এনআরবিদের এনআরবি ব্যাংকের ওরকম কোন ঘটনা ঘটে নাই আমরা কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের এরকম কোন দুর্ঘটনা ঘটে নাই এবং আমাদের ব্যাংকও এত খারাপ অবস্থায় নাই। আমরদের যে ক্লাসিফাইড হয়েছে সেটা আমরা রিকভারিং করছি। এবং আমরা প্রফিটে চলে গেছি। এই জুন মাসে আমরা প্রফিটে চলে গেছি। আগামীতে আমরা এই বছরের শেষের দিকে ভালো একটা মুনাফা দিতে পারব। জানিনা কতটুকু আমরা ডিভিডেন্ড শেয়ারোল্ডারকে দিতে পারব। বাট আমাদের ব্যাংক মুনাফার মধ্যে থাকবে। আমদের বিষয়টা এত সিরিয়াস না। আমাদের পলিসি কিন্তু ভিন্ন। আমাদের ব্যাংকের নতুন যে প্রযুক্তি যেটা সেটা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন। আমরা চাচ্ছি যে আমাদের ব্যাংকটা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন হোক। আমরা ডিজিটালি ব্যাংকিং করি দেশে এবং দেশের বাইরে। সুতরাং আমাদের এই উদ্যোগটা এবং আমাদের যে ট্রেনিং যে আমাদের প্রোগ্রামগুলা হচ্ছে, আমি অত্যন্ত আশাবাদী যে উইথন থ্রি ইয়ারস আমাদের ব্যাংক ১০০% ডিজিটাল হয়ে যাবে।
রাজু আলীম: ইসলামী ব্যাংকিং গুলো একসাথে হয়ে যাচ্ছে। মার্জারিং হচ্ছে। অনেক বন্দোবস্ত নতুন করে হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনি অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী নেতা এবং প্রবাসী বিজনেসম্যান হিসেবে এবং ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে বলবেন।

ইকবাল আহমেদ: যারা মার্জ হচ্ছে তারা তো তাদের লস্ট ক্যাপিটাল। মেজর ক্যাপিটাল দে হ্যাভ লস্ট। সুতরাং তাদের মার্জ না হওয়া ছাড়া কোন রাস্তা নাই। আমাদের ও পরিস্থিতি এখনো আসে নাই বা মার্জ হওয়ার পরিস্থিতি আসে নাই। আমাদের এখানে যারা আমাদের উপদেষ্টা মন্ডলী আছেন, আমাদের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডাইরেক্টর যারা আছেন এরা অত্যন্ত দক্ষ, জ্ঞানী এবং অত্যন্ত সিরিয়াস। সুতরাং আমি আশাবাদী যে আমাদের ব্যাংক উইল টার্ন আরাউন্ড। আমাদের ব্যাংক এনআরবি ব্যাংক মাস্ট থানা রাউন্ড। এখানে কোন আর বিকল্প নাই। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। আমাদের ম্যানেজমেন্টও আমাদেরকে খুব সাপোর্ট করছে এবং আমরাও ম্যানেজমেন্টকে এরকম টেলিং দিচ্ছি। আমরা বিশেষ করে স্মল এন্ড মিডিয়ামের উপর ফোকাস দিচ্ছি। কয়েকটা কারণ স্মল এন্ড মিডিয়াম কে ফোকাস দেওয়া মানে হলো ক্রিয়েটিং এ বিজনেস লিডার ইন আওয়ার কমিউনিটি। আমরা কিন্তু ওই ব্লুচিপ কোম্পানিকে সাপোর্ট দেওয়ার মত এত ক্যাপিটালও নাই। এ বিষয়ে আমরা উৎসাহিত না। সুতরাং আমরা স্মল এন্ড মিডিয়ামের মধ্যে থাকব। আর মিডিয়াম সাইজ কোম্পানিকে আমরা লয়েল কাস্টমার বানায়ে আমরা ওদেরকে কমিউনিটিতে একটা বিজনেস লিডার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ওইভাবেই আমরা চিন্তাভাবনা করছি।

রাজু আলীম
কবি, সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

Tag :
জনপ্রিয়

কর্মীসভা কালিয়াকৈর পৌর বিএনপি’র ৮ নং ওয়ার্ড মাজুখান,

রাজু আলীম

এনআরবি ব্যাংকে ইকবাল আহমেদের প্রত্যাবর্তন: নতুন ধারায় এনআরবি ব্যাংক ইকবাল আহমেদ চেয়ারম্যান, এনআরবি ব্যাংক চেয়ারম্যান, সীমার্ক গ্রুপ অব কোম্পানিজ চেয়ারম্যান, আইবিসিও ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড

প্রকাশিত ১০:০৪:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অনন্য ব্যক্তিত্ব, প্রবাসী ব্যবসায়ী ও সম্মানিত শিল্পোদ্যোক্তা ইকবাল আহমেদ আবারও এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ১২ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে ভেঙে দেওয়া পূর্ববর্তী পরিচালনা পর্ষদের স্থলে গঠিত নতুন পর্ষদের সর্বসম্মতিক্রমে তিনি এ পদে নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যাংকটির নেতৃত্ব দেন তিনি। প্রায় এক দশক পর তাঁর এই প্রত্যাবর্তন কেবল একটি দায়িত্ব নয়, বরং একটি বিশ্বাসযোগ্য ও স্থিতিশীল ব্যাংকিং কাঠামো গঠনের প্রতিশ্রুতি।
ইকবাল আহমেদ কেবল একজন ব্যাংকার নন, তিনি একজন বৈশ্বিক উদ্যোক্তা, যিনি সিলেট থেকে শুরু করে লন্ডন পর্যন্ত বিস্তৃত করেছেন তাঁর ব্যবসায়িক পরিসর। সীমার্ক গ্রুপ অব কোম্পানিজ এবং আইবিসিও ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে এই প্রতিষ্ঠানগুলো আজ বিশ্বজুড়ে হিমায়িত খাদ্যপণ্য সরবরাহের নির্ভরযোগ্য নাম। সীমার্ক গ্রুপ বর্তমানে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপজুড়ে ব্ল্যাক টাইগার চিংড়ি, সামুদ্রিক খাদ্য এবং হিমায়িত পণ্যের অন্যতম বড় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এই সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০১ সালে ব্রিটেনের রাজপরিবারের পক্ষ থেকে তিনি অর্জন করেন ওবিই (অফিসার অব দ্য মোস্ট এক্সিলেন্ট অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার)। এর পাশাপাশি ২০০২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময়জুড়ে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক হিসেবে সিআইপি মর্যাদা লাভ করে আসছেন।
ব্যাংকিং খাতে তাঁর প্রত্যাবর্তন এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন এনআরবি ব্যাংক নানা বিতর্ক আর অনিয়মের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। ব্যাংকটির আগের চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমান ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পর্ষদ একসময় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মাহতাবুর রহমান তাঁর পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজনদের নিয়ে ব্যাংকের নীতিনির্ধারণ থেকে পরিচালন, সব ক্ষেত্রেই একটি অর্থনৈতিক অনিয়মের ধারা তৈরি করেছিলেন। এ সময় ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদকে পরিচালনা পর্ষদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে এই রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ অবসান হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন উদ্যোগে গঠিত পরিচালনা পর্ষদে ইকবাল আহমেদের অন্তর্ভুক্তি এবং পরবর্তীতে সর্বসম্মত নির্বাচনে তাঁর চেয়ারম্যান হওয়া ব্যাংকটি এবং এর গ্রাহকদের জন্য নতুন করে আস্থার পুনর্গঠন বলে দৃশ্যমান।
ইকবাল আহমেদ একজন প্রথিতযশা, অভিজ্ঞ এবং সৎ ব্যবসায়ী যিনি বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন নিষ্ঠা ও সুনামের সঙ্গে। তাঁর এই গুণাবলি ব্যাংকের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ মহল মনে করছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এনআরবি ব্যাংকের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আস্থা পুনরুদ্ধার এবং নিয়ন্ত্রণের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। ব্যাংকটির আর্থিক কাঠামো ও সেবাদান ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজন দূরদর্শী নেতৃত্ব ও দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা—যা ইকবাল আহমেদের অতীত কর্মযজ্ঞেই প্রমাণিত। তাঁর নেতৃত্বে ব্যাংকটি কি আগের গৌরব ফিরে পাবে, নাকি এই পরিবর্তন হবে শুধুই একটি সাংগঠনিক পদক্ষেপ—তা সময়ই বলে দেবে। তবে কর্পোরেট ও আর্থিক মহলে এই প্রত্যাবর্তন ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে নিঃসন্দেহে।
বিশ্বজুড়ে তার সুদূরপ্রসারী ব্যবসায়িক সাফল্য এবং নীতিগত দৃঢ়তায় ইকবাল আহমেদ নিজেকে প্রমাণ করেছেন এমন একজন নেতা হিসেবে, যিনি কেবল প্রতিষ্ঠানের মুখ নয়, বরং তার ভিত নির্মাণে সক্রিয়। এমন নেতৃত্বই বর্তমান আর্থিক খাতে নতুন আস্থা, নৈতিকতা ও কর্পোরেট গভর্ন্যান্সের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। তাঁর পুনঃনির্বাচন এনআরবি ব্যাংকের জন্য কেবল একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং একটি প্রাতিষ্ঠানিক পুণর্জাগরণের সম্ভাবনাও বয়ে আনছে।
এনআরবি ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা নিয়ে তাঁর সাথে কথা বলেছেন কবি, সাংবাদিক রাজু আলীম। এবার থাকছে সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ।
রাজু আলীম: এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে বর্তমান পরিস্থিতিকে কিভাবে দেখছেন? বিগত সরকারের কারণে সৃষ্টি হওয়া দুর্নীতির অভিঘাত এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকে আপনারা কিভাবে সমন্বয় করছেন?
ইকবাল আহমেদ: এনআরবি ব্যাংক স্থাপন করার প্রথম উদ্দেশ্য ছিল যে এনআরবিদেরকে কিভাবে ইনওয়ার্ড ইনভেস্টমেন্টে আনা যায় এবং সেই কাজটাই আমি প্রথম করেছি। আমি এটার উদ্যোক্তা প্রায় ৪৬ জন হাইলি সাকসেসফুল অন্ট্রপ্রেনার বাংলাদেশি লিভিং অল ওভার দা ওয়ার্ল্ড। জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইতালি, ইউরোপ, মিডিল ইস্ট, ক্যানাডা, আমেরিকা সব জায়গা থেকে আমি নিয়ে আসছি এবং এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ এটাই আমাদের নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশী ব্যাংক। এটার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই উই ট্রিট আওয়ারসেলফ এজ এনআরবি ফরেন ব্যাংক এবং আমাদের সার্ভিসটা ওরকম। আমাদের শেয়ারহোল্ডাররাও কিন্তু ফরেনারদের মত এস্টাবলিশ অল ওভার ওয়ার্ল্ড। বিগত ১৫-১৬ বছরে ব্যাংকিং সেক্টরে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা বলা বাহুল্য। আমার বলার কিছু নাই। আমরাও ভুক্তভোগী আমি বলব আমাদেরও অনেক টাকা ক্লাসিফাইড হয়েছে। আপনাদের মাধ্যমে আমি বলব আমাদের এখানে যাদের ক্লাসিফাইড হয়েছে তাদেরকে অনুরোধ করব যে আমরা অত্যন্ত নিরীহ, পরিশ্রমী, ট্যাক্স পেইড মানি। এটা বাংলাদেশ সরকার কিন্তু এটা প্রপারলি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমাদেরকে লাইসেন্স দিয়েছেন। তো আমাদের এই টাকাটা পরিশোধ করেন। আমাদেরকে নিজের পায়ে আবার দাঁড়াতে দেন। আমরা আপনাদের ভাই এবং ছেলে সন্তানের মত। আমরা সাকসেসফুল হলে প্রবাসী এনআরবি বাংলাদেশীরা সাকসেসফুল হবে। আরো আসবে এবং তারা না আসলে কিন্তু ফরেন ইনভেস্টমেন্ট এ দেশে আসবে না।
রাজু আলীম: ব্যাংকের উদ্যোক্তারা যেইভাবে বাংলাদেশকে নিঃশ্ব করে গেল এবং একটি সরকার চেঞ্চ দেখল কিংবা তারাও সহযোগী ছিল। একই সাথে বলব বিএবির যে কার্যক্রম নজরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বে যেগুলো ঘটেছিল, আপনি একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে এই প্রসঙ্গে কী বলবেন?
ইকবাল আহমেদ: দেখেন আমি তো প্রথমে অলমোস্ট তিন তিন বছর ছিলাম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। তারপরে তো আমি ছিলাম না। জটিল কতগুলা কাজ ব্যাংকিং সেক্টরে গত পাঁচ সাত বছরের মধ্যে হয়েছে। টাকা রিটার্নের ব্যাপারে আপনি বলবেন ডিপার্ট্রিয়েশন। আমি জানি সরকার এবং সেন্ট্রাল ব্যাংক ঠিক ওই রাস্তায় যাচ্ছে এই টাকাটা আনার জন্য। কতটুকু সাকসেসফুল হবে জানিনা। ইংল্যান্ড অথবা আমেরিকা অথবা ক্যানাডা অথবা মিডিল ইস্ট, টাকা কিন্তু একবার ওই দেশগুলোতে গেলে ওটা সহজে ওরা আর দিতে চায় না। এটা তো আমরা জানি। সুতরাং আমি আশা করব যে এটা বিভিন্ন সরকার বিদেশী সরকারের সংস্থা যেগুলা কাজ করছে তারা এটা সাকসেসফুল হবেন এবং কিছু না কিছু টাকাতে ফেরত আসবে এবং আসছে শুনছি। তবে আমাদের ব্যাপারে আমাদের এনআরবিদের এনআরবি ব্যাংকের ওরকম কোন ঘটনা ঘটে নাই আমরা কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের এরকম কোন দুর্ঘটনা ঘটে নাই এবং আমাদের ব্যাংকও এত খারাপ অবস্থায় নাই। আমরদের যে ক্লাসিফাইড হয়েছে সেটা আমরা রিকভারিং করছি। এবং আমরা প্রফিটে চলে গেছি। এই জুন মাসে আমরা প্রফিটে চলে গেছি। আগামীতে আমরা এই বছরের শেষের দিকে ভালো একটা মুনাফা দিতে পারব। জানিনা কতটুকু আমরা ডিভিডেন্ড শেয়ারোল্ডারকে দিতে পারব। বাট আমাদের ব্যাংক মুনাফার মধ্যে থাকবে। আমদের বিষয়টা এত সিরিয়াস না। আমাদের পলিসি কিন্তু ভিন্ন। আমাদের ব্যাংকের নতুন যে প্রযুক্তি যেটা সেটা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন। আমরা চাচ্ছি যে আমাদের ব্যাংকটা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন হোক। আমরা ডিজিটালি ব্যাংকিং করি দেশে এবং দেশের বাইরে। সুতরাং আমাদের এই উদ্যোগটা এবং আমাদের যে ট্রেনিং যে আমাদের প্রোগ্রামগুলা হচ্ছে, আমি অত্যন্ত আশাবাদী যে উইথন থ্রি ইয়ারস আমাদের ব্যাংক ১০০% ডিজিটাল হয়ে যাবে।
রাজু আলীম: ইসলামী ব্যাংকিং গুলো একসাথে হয়ে যাচ্ছে। মার্জারিং হচ্ছে। অনেক বন্দোবস্ত নতুন করে হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনি অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী নেতা এবং প্রবাসী বিজনেসম্যান হিসেবে এবং ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে বলবেন।

ইকবাল আহমেদ: যারা মার্জ হচ্ছে তারা তো তাদের লস্ট ক্যাপিটাল। মেজর ক্যাপিটাল দে হ্যাভ লস্ট। সুতরাং তাদের মার্জ না হওয়া ছাড়া কোন রাস্তা নাই। আমাদের ও পরিস্থিতি এখনো আসে নাই বা মার্জ হওয়ার পরিস্থিতি আসে নাই। আমাদের এখানে যারা আমাদের উপদেষ্টা মন্ডলী আছেন, আমাদের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডাইরেক্টর যারা আছেন এরা অত্যন্ত দক্ষ, জ্ঞানী এবং অত্যন্ত সিরিয়াস। সুতরাং আমি আশাবাদী যে আমাদের ব্যাংক উইল টার্ন আরাউন্ড। আমাদের ব্যাংক এনআরবি ব্যাংক মাস্ট থানা রাউন্ড। এখানে কোন আর বিকল্প নাই। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। আমাদের ম্যানেজমেন্টও আমাদেরকে খুব সাপোর্ট করছে এবং আমরাও ম্যানেজমেন্টকে এরকম টেলিং দিচ্ছি। আমরা বিশেষ করে স্মল এন্ড মিডিয়ামের উপর ফোকাস দিচ্ছি। কয়েকটা কারণ স্মল এন্ড মিডিয়াম কে ফোকাস দেওয়া মানে হলো ক্রিয়েটিং এ বিজনেস লিডার ইন আওয়ার কমিউনিটি। আমরা কিন্তু ওই ব্লুচিপ কোম্পানিকে সাপোর্ট দেওয়ার মত এত ক্যাপিটালও নাই। এ বিষয়ে আমরা উৎসাহিত না। সুতরাং আমরা স্মল এন্ড মিডিয়ামের মধ্যে থাকব। আর মিডিয়াম সাইজ কোম্পানিকে আমরা লয়েল কাস্টমার বানায়ে আমরা ওদেরকে কমিউনিটিতে একটা বিজনেস লিডার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ওইভাবেই আমরা চিন্তাভাবনা করছি।

রাজু আলীম
কবি, সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব