০৭:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একুশের ছায়ায় দাঁড়িয়ে

  • প্রকাশিত ১১:৪৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৪৩ বার দেখা হয়েছে

দাদা,
অমর একুশ উপলক্ষ‍্যে আপনার পত্রিকায় ছাপানোর জন‍্য একটি স্বরচিত কবিতা পাঠালাম । ভালো লাগলে ২১-০২-২০২৫ তারিখে ছাপানোর অনুরোধ থাকলো ।

শিরোনামঃ একুশের ছায়ায় দাঁড়িয়ে
সৃজনেঃ সান্তনু দাস (সাদা ভাই)

ফেব্রুয়ারির রক্তিম ভোর,
আজও গায়ে মেখে আছে সেই
প্রতিজ্ঞার লাল রং,
যে রঙে একদিন রাঙানো হয়েছিল রাজপথ,
যে রঙে একদিন জেগেছিল বাংলা।

সেই ভাষা, সেই উচ্চারণ,
আজও কি সত্যি বেঁচে আছে?
নাকি শব্দেরা হারিয়ে গেছে
কোলাহলের অলিগলিতে,
সাইনবোর্ডের ভুল বানানে,
পরীক্ষার খাতার বিকৃত বাক্যে?

আমরা কি সত্যিই আগলে রেখেছি
সেই চেতনার উত্তপ্ত শিখা,
নাকি কেবল ফুল দিয়ে সাজাই শহীদ মিনার,
কিছু গান গেয়ে, কবিতা পড়ে,
তারপর ফিরে যাই নির্বিকার জীবনে,
ভুলে যাই ভাষার দায়?

আজও কেউ কাঁদে ভাষার জন্য,
কিন্তু সে কান্না অন্যরকম—
প্রবাসের ভিড়ে, ভিনদেশি অফিসের করিডোরে,
সন্তানকে মাতৃভাষায় কথা শেখাতে গিয়ে
হতাশ বাবার দীর্ঘশ্বাসে।

ভাষার জন্য যারা রক্ত দিল,
তারা কি ভেবেছিল একদিন
এই বাংলার আকাশে উড়বে
অপরিচিত শব্দের ঝাঁক?
আমাদের হৃদয়ে ঢুকে পড়বে
কিছু অচেনা উচ্চারণের ভয়?

তবু, একুশ আসে,
আসে শহীদের আত্মদানে গড়া আত্মপরিচয় নিয়ে,
আমরা মাথা নিচু করে ফুল দেই,
তারপর আবার ভুলে যাই,
কিভাবে মরতে হয় ভাষার জন্য,
কিভাবে বাঁচতে হয় ভাষার জন্য।

এজন‍্যই বোধ হয়,
আমাদের শিশুরা বাংলা বোঝে না,
শুধু শেখে মুখস্থ করা শব্দ,
শুধু দেখে বইয়ের পাতায় আঁকা শহীদ মিনার,
কিন্তু বোঝে না তার গভীরতা।

আমাদের রাজপথে শোভাযাত্রা হয়,
কিন্তু ভাষার সংকট চাপা পড়ে
শিক্ষার অভিজাত দরজায়,
পুঁথির পাতায়, বিজ্ঞাপনের ফাঁকে,
প্রযুক্তির নীল-সাদা পর্দায়।

আমরা কি আসলেই রক্ষা করতে পেরেছি
আমাদের একুশ?
নাকি একুশ এখন শুধুই
একটি স্মৃতিফ্রেমে বন্দি দিন,
একটি আনুষ্ঠানিক শোক,
একটি একদিনের প্রতিজ্ঞা,
যে প্রতিজ্ঞা ভেঙে যায়
পরের সকালেই?

Tag :
জনপ্রিয়

ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক হলে করণীয়

একুশের ছায়ায় দাঁড়িয়ে

প্রকাশিত ১১:৪৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দাদা,
অমর একুশ উপলক্ষ‍্যে আপনার পত্রিকায় ছাপানোর জন‍্য একটি স্বরচিত কবিতা পাঠালাম । ভালো লাগলে ২১-০২-২০২৫ তারিখে ছাপানোর অনুরোধ থাকলো ।

শিরোনামঃ একুশের ছায়ায় দাঁড়িয়ে
সৃজনেঃ সান্তনু দাস (সাদা ভাই)

ফেব্রুয়ারির রক্তিম ভোর,
আজও গায়ে মেখে আছে সেই
প্রতিজ্ঞার লাল রং,
যে রঙে একদিন রাঙানো হয়েছিল রাজপথ,
যে রঙে একদিন জেগেছিল বাংলা।

সেই ভাষা, সেই উচ্চারণ,
আজও কি সত্যি বেঁচে আছে?
নাকি শব্দেরা হারিয়ে গেছে
কোলাহলের অলিগলিতে,
সাইনবোর্ডের ভুল বানানে,
পরীক্ষার খাতার বিকৃত বাক্যে?

আমরা কি সত্যিই আগলে রেখেছি
সেই চেতনার উত্তপ্ত শিখা,
নাকি কেবল ফুল দিয়ে সাজাই শহীদ মিনার,
কিছু গান গেয়ে, কবিতা পড়ে,
তারপর ফিরে যাই নির্বিকার জীবনে,
ভুলে যাই ভাষার দায়?

আজও কেউ কাঁদে ভাষার জন্য,
কিন্তু সে কান্না অন্যরকম—
প্রবাসের ভিড়ে, ভিনদেশি অফিসের করিডোরে,
সন্তানকে মাতৃভাষায় কথা শেখাতে গিয়ে
হতাশ বাবার দীর্ঘশ্বাসে।

ভাষার জন্য যারা রক্ত দিল,
তারা কি ভেবেছিল একদিন
এই বাংলার আকাশে উড়বে
অপরিচিত শব্দের ঝাঁক?
আমাদের হৃদয়ে ঢুকে পড়বে
কিছু অচেনা উচ্চারণের ভয়?

তবু, একুশ আসে,
আসে শহীদের আত্মদানে গড়া আত্মপরিচয় নিয়ে,
আমরা মাথা নিচু করে ফুল দেই,
তারপর আবার ভুলে যাই,
কিভাবে মরতে হয় ভাষার জন্য,
কিভাবে বাঁচতে হয় ভাষার জন্য।

এজন‍্যই বোধ হয়,
আমাদের শিশুরা বাংলা বোঝে না,
শুধু শেখে মুখস্থ করা শব্দ,
শুধু দেখে বইয়ের পাতায় আঁকা শহীদ মিনার,
কিন্তু বোঝে না তার গভীরতা।

আমাদের রাজপথে শোভাযাত্রা হয়,
কিন্তু ভাষার সংকট চাপা পড়ে
শিক্ষার অভিজাত দরজায়,
পুঁথির পাতায়, বিজ্ঞাপনের ফাঁকে,
প্রযুক্তির নীল-সাদা পর্দায়।

আমরা কি আসলেই রক্ষা করতে পেরেছি
আমাদের একুশ?
নাকি একুশ এখন শুধুই
একটি স্মৃতিফ্রেমে বন্দি দিন,
একটি আনুষ্ঠানিক শোক,
একটি একদিনের প্রতিজ্ঞা,
যে প্রতিজ্ঞা ভেঙে যায়
পরের সকালেই?