০৪:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্যাপি সাহা :

একটু ভাবতে হবে

  • প্রকাশিত ০৫:৪৮:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
  • ২৩ বার দেখা হয়েছে

বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ৯ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে এই বর্ধিত গুপ্তকার্যকর করা হবে। যদি লেখাটি ছাপা হয় তখন থেকে কার্যকর হয় ট্রাম্প সাহেবের শুদ্ধ নীতি। তার আগেই দিকে দিকে শেয়ার বাজারে বড় ধরণের ধস নেমেছে। সোমবার সকালেও এশিয়ার বাজার বুকেছে। নতুন পতন ঘটেছে শেয়ারের দামে। মজার ব্যাপার হল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন খোদ আমেরিকানরাই। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের শুন্ধনীতি নিয়ে যখন সমালোচনায় মুখর গোটা বিশ্ব মার্কিন প্রেসিডেন্ট খুব একটা পাড়া দিতে চাইছেন না। তিনি বলেছেন, “ওষুবে কাজ দিচ্ছে।” শেয়ার বাজারের বেসমাল দশার দায় নিতে চান না ট্রাম্প। রবিবার এই সংংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, শেয়ার বাজারে কি হবে, আমি সেটা বলতে পারব না। কিন্তু আমাদের দেশ অনেক বেশী শক্তিশালী।” শেয়ার বাজারকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন না এবং করতে চান না, জানিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, “আমি চাই না কোনও বাজারে ধস নামুক। কোথাও কোনও ক্ষতি হোক। কিন্তু কখনও কখনও কিছু জিনিস সঠিক করার জন্য ওষুধ দিতে হয়। আমি সেটাই করেছি।” এই প্রসঙ্গে আরও একবার জো বাইডেন সরকারের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন ট্রাম্প। বলেছেন “এক বছর ধরে অন্যান্য দেশ আমাদের সঙ্গে ভীষণ খারাপ আচরণ করে এসেছে। কারণ আমাদের মুখ নেতৃত্ব তাদের সেই আচরণ করতে দিয়েছে। তিনি আবার আমেরিকাকে মহান” করে তুলতে চান, জানিয়েছেন ট্রাম্প। গত ২ এফিল ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। তারপর থেকে গত কয়েকদিন শেয়ার বাজারে কয়েক লক্ষ কোটি টাকার পতন হয়েছে। মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের। মার্কিন অর্থনৈতিক সংস্থা জেপি মর্গ্যান আমেরিকা তথা গোটা বিশ্বে মন্দার ভবিষ্যৎদ্বাণী করেছে। তারা জানিয়েছে চলতি বছরেই মন্দার মুখোমুখি হতে পারে আমেরিকার অর্থনীতি। সারা বিশ্বে মন্দার সম্ভবনা অন্তত ২০ শতাংশ। ট্রাম্পের বন্ধনীতির ফলে ধাক্কা গাচ্ছে বিশ্ববাণিজ্য। চীন ইতিমধ্যে মার্কিন পণ্যে পাল্টা গুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছে। রাশ টেনেছেন আমেরিকায় পণ্য রফতানিতে। এ ছাড়া শি জিন পিং চীনে ১১টি মার্কিন সংস্থার বানিজ্য বন্ধ করে দিয়েছেন। দুই দেশের বাণিজ্যে ইতিমধ্যে প্রভাব পড়েছে। বিশ্বের দুই বৃষত্তম অর্থনীতি পরস্পরের প্রতি শুদ্ধ আরোপ করায় অন্যদেশের বানিজ্যও বাক্কা খাচ্ছে বলে মত বিশেজ্ঞদের। আমেরিকার বাণিজ্যিক ঘাটতি না মিটলে চীনের সঙ্গে সমঝোতা করবে না, জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। শুন্ধনীতি ঘোষণার পর ট্রাম্প সমঝোতার বার্তাও দিয়ে রেখেছেন। জানিয়েছেন আমেরিকার জন্য কোনও দেশ যদি অভূতপূর্ণ কিছু করে দেখায় তবে শুদ্ধ ছাড় মিলতে পারে। ভারতের উপর ট্রাম্পের প্রযুক্ত শুল্ক ২৬শয়াংশ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ভারতসহ একাধিক দেশ ট্রাম্পের সঙ্গে শুন্ধ নিয়ে দরকষাকষি শুরু করে দিয়েছে। ট্রাম্পও তাতে খুব একটা রাখঢাক করছেন না। তিনি জানিয়েছেন শুল্ক আরোপের পর অনেকদেশ আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি এবং সমাঝোতা করতে আগ্রহী। আমেরিকা যা বলবে তা-ই তারা করতে প্রস্তুত। ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশী পণ্যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভারত পাকিস্তনে এই শুল্ক কম বসেছে, যথাক্রমে ২৬ ও ২৯ শতাংশ। তবে আরেক প্রতিযোগী ভিয়েতনামেও ৪৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট। চীনে পাল্টা শুদ্ধসহ মোট শুল্ক হার দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশ। শুদ্ধ হার নির্ধারণে মার্কিন প্রশাসন একটি সূত্র প্রয়োগ করেছে। সেটি হচ্ছে নির্দিষ্ট দেশের বাণিজ্য ঘাটতিকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির পরিমাণ দিয়ে ভাগ করে যা পাওয়া যায়, তার শতাংশ ধরে শুদ্ধ হিসাব করা হয়েছে। তাতে যে ফল পাওয়া গেছে, তার অর্ধেক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এই সূত্র অনুযায়ী বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুদ্ধ হার দাঁড়ায় ৭৪ শতাংশ। তবে তার অর্ধেক বা ৩৭ শতাংশ। শুল্ক আরোপ করা হয়েছে বাংলাদেশের পণ্যে। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিদির দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই হিসাব বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৬১৫ কোটি ডলার। আমাদের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। একদায় বলা যেতে পারে যে, আমাদের অর্থনীতির চালিকা শক্তি তৈরি পোশাকখাত। সেই পোশাকখাতের একক বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া তৈতি পোশাকের গন্তব্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের এই ঘোষণা পর থেকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের রপ্তানিকারকেরা ভীষণ উদ্বেগের মধ্যে আছে। কিছু কিছু তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের পোশাকের ক্রয়াদেশ-এর উপর স্থগিতাদেশ হচ্ছে। এই অতিরিক্ত শুল্ক কে পরিশোধ করবে এই নিয়ে ইতিমধ্যে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে শীতল যুদ্ধ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় উইকিটেক্স বিডিনামে একটি বায়িং হাউসের তিনলাখ ডলারের এন্যাদেশ গত রবিবার স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। যদিও সে একাদেশের পণ্য উৎপাদনের জন্য ইতিমধ্যে কাপড়ও আমদানি করে ফেলেছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও দেড়লাখ টাকার আরেকটি ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। ইতিমধ্যে নিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে আগামী জুনের ক্রয়াদেশও স্থগিত করেছে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। জুলাই থেকে থেকে পণ্য পাঠাতে হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই আচরণের মাধ্যমে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটি কিন্তু ভয়াবহ রুপ নিতে পারে দেশের অর্থনীতিতে। ভারত ইতিমধ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কিন্তু আমরা কতটুকু প্রস্তুত সেট কিন্তু এখন ভাবতে হবে। ভারত আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে চায়। দরকষাকষি শুরু করে দিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চায় ভারত। আলোচনার কোন বিকল্প পথ খোলা নেই এই সময়ে। পোশাক শিল্পের বাজার ধরার জন্য অনেক দেশ বসে আছে। যদি কোন ভাবে এই বাজার হাত ছাড়া হয়ে যায় আমাদের অর্থনীতির কি অবস্থা হবে সেটি কিন্তু ভাবতে হবে। সময় এসেছে ভাবার। প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি নিয়ে নিজেই কাজ করছেন সেজন্য সাধুবাদ জানাই। কালক্ষেপন করার কোন সুযোগ নেই। রাজনীতির মূল লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে মানুষের মঙ্গলসাধন করা। সেই মঙ্গল সাধন করা যদি সম্ভব না হয় তাহলে কার জন্য রাজনীতি। দেশের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তৈরি পোশাক এর কাজ যদি ভারত, পাকিস্তান ও চীনের হাতে চলে যায় তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

বাংলাদেশ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে কতটুকু উদ্যোগী হবে সেটি এখন ভাবার বিষয়। অর্থনীতির ঢাকা এবং সাধারাণ মানুষের জীবনযাত্রাকে সচল রাখাটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের দেশের একটি সাধারণ জনগনের বড় অংশ পোশাকশিল্পের উপর নির্ভরশীল। একটি কারখানার সাথে জড়িত থাকে অনেক মানুষ তাদের কথা ভাবতে হবে। আমি অর্থশাস্ত্র তেমন বুঝি না কিন্তু এটা বুঝি দিন শেষে অর্থ না হলে জীবন চলে না। আবারও বলছি সমঝোতার জন্য চেষ্টা চলছে। কোন ভাবে সমাঝোতা হয়ে গেলে এই শিল্প বেহাত হবার সম্মননা শতভাগ। এই লেখাটি যখন শেষ পর্যায়ে তখন টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রধান গ্রোস সচিব জানিয়েছেন ইতিমধ্যে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে তিনমাসের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের শুদ্ধআরোপের বিষয়টি স্থগিত রাখার জন্য। প্রধান উপদেষ্টা পত্র দিয়েছেন এখন শুধু অপেক্ষার পালা। সরকার ও পোশাক শিল্প মালিক পক্ষকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে সকল ক্রয়াদেশ দেওয়া আছে সেগুলি যেন বাতিল না যায়। সবচেয়ে আশার বাণী প্রধান উপদেষ্টা নিজে উদ্যোগী হয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার পরের একটি ইতিবাচক উত্তর যেন আসে।

সবশেষে একটি কথা বলব একটু ভাবতে হবে সকলকে নিয়ে।

 

Tag :
জনপ্রিয়

সিটিসি মো. গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি-লুটপাট আর নারী কেলেংকারীর অভিযোগ, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া জরুরী

ব্যাপি সাহা :

একটু ভাবতে হবে

প্রকাশিত ০৫:৪৮:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ৯ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে এই বর্ধিত গুপ্তকার্যকর করা হবে। যদি লেখাটি ছাপা হয় তখন থেকে কার্যকর হয় ট্রাম্প সাহেবের শুদ্ধ নীতি। তার আগেই দিকে দিকে শেয়ার বাজারে বড় ধরণের ধস নেমেছে। সোমবার সকালেও এশিয়ার বাজার বুকেছে। নতুন পতন ঘটেছে শেয়ারের দামে। মজার ব্যাপার হল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন খোদ আমেরিকানরাই। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের শুন্ধনীতি নিয়ে যখন সমালোচনায় মুখর গোটা বিশ্ব মার্কিন প্রেসিডেন্ট খুব একটা পাড়া দিতে চাইছেন না। তিনি বলেছেন, “ওষুবে কাজ দিচ্ছে।” শেয়ার বাজারের বেসমাল দশার দায় নিতে চান না ট্রাম্প। রবিবার এই সংংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, শেয়ার বাজারে কি হবে, আমি সেটা বলতে পারব না। কিন্তু আমাদের দেশ অনেক বেশী শক্তিশালী।” শেয়ার বাজারকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন না এবং করতে চান না, জানিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, “আমি চাই না কোনও বাজারে ধস নামুক। কোথাও কোনও ক্ষতি হোক। কিন্তু কখনও কখনও কিছু জিনিস সঠিক করার জন্য ওষুধ দিতে হয়। আমি সেটাই করেছি।” এই প্রসঙ্গে আরও একবার জো বাইডেন সরকারের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন ট্রাম্প। বলেছেন “এক বছর ধরে অন্যান্য দেশ আমাদের সঙ্গে ভীষণ খারাপ আচরণ করে এসেছে। কারণ আমাদের মুখ নেতৃত্ব তাদের সেই আচরণ করতে দিয়েছে। তিনি আবার আমেরিকাকে মহান” করে তুলতে চান, জানিয়েছেন ট্রাম্প। গত ২ এফিল ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। তারপর থেকে গত কয়েকদিন শেয়ার বাজারে কয়েক লক্ষ কোটি টাকার পতন হয়েছে। মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের। মার্কিন অর্থনৈতিক সংস্থা জেপি মর্গ্যান আমেরিকা তথা গোটা বিশ্বে মন্দার ভবিষ্যৎদ্বাণী করেছে। তারা জানিয়েছে চলতি বছরেই মন্দার মুখোমুখি হতে পারে আমেরিকার অর্থনীতি। সারা বিশ্বে মন্দার সম্ভবনা অন্তত ২০ শতাংশ। ট্রাম্পের বন্ধনীতির ফলে ধাক্কা গাচ্ছে বিশ্ববাণিজ্য। চীন ইতিমধ্যে মার্কিন পণ্যে পাল্টা গুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছে। রাশ টেনেছেন আমেরিকায় পণ্য রফতানিতে। এ ছাড়া শি জিন পিং চীনে ১১টি মার্কিন সংস্থার বানিজ্য বন্ধ করে দিয়েছেন। দুই দেশের বাণিজ্যে ইতিমধ্যে প্রভাব পড়েছে। বিশ্বের দুই বৃষত্তম অর্থনীতি পরস্পরের প্রতি শুদ্ধ আরোপ করায় অন্যদেশের বানিজ্যও বাক্কা খাচ্ছে বলে মত বিশেজ্ঞদের। আমেরিকার বাণিজ্যিক ঘাটতি না মিটলে চীনের সঙ্গে সমঝোতা করবে না, জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। শুন্ধনীতি ঘোষণার পর ট্রাম্প সমঝোতার বার্তাও দিয়ে রেখেছেন। জানিয়েছেন আমেরিকার জন্য কোনও দেশ যদি অভূতপূর্ণ কিছু করে দেখায় তবে শুদ্ধ ছাড় মিলতে পারে। ভারতের উপর ট্রাম্পের প্রযুক্ত শুল্ক ২৬শয়াংশ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ভারতসহ একাধিক দেশ ট্রাম্পের সঙ্গে শুন্ধ নিয়ে দরকষাকষি শুরু করে দিয়েছে। ট্রাম্পও তাতে খুব একটা রাখঢাক করছেন না। তিনি জানিয়েছেন শুল্ক আরোপের পর অনেকদেশ আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি এবং সমাঝোতা করতে আগ্রহী। আমেরিকা যা বলবে তা-ই তারা করতে প্রস্তুত। ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশী পণ্যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভারত পাকিস্তনে এই শুল্ক কম বসেছে, যথাক্রমে ২৬ ও ২৯ শতাংশ। তবে আরেক প্রতিযোগী ভিয়েতনামেও ৪৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট। চীনে পাল্টা শুদ্ধসহ মোট শুল্ক হার দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশ। শুদ্ধ হার নির্ধারণে মার্কিন প্রশাসন একটি সূত্র প্রয়োগ করেছে। সেটি হচ্ছে নির্দিষ্ট দেশের বাণিজ্য ঘাটতিকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির পরিমাণ দিয়ে ভাগ করে যা পাওয়া যায়, তার শতাংশ ধরে শুদ্ধ হিসাব করা হয়েছে। তাতে যে ফল পাওয়া গেছে, তার অর্ধেক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এই সূত্র অনুযায়ী বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুদ্ধ হার দাঁড়ায় ৭৪ শতাংশ। তবে তার অর্ধেক বা ৩৭ শতাংশ। শুল্ক আরোপ করা হয়েছে বাংলাদেশের পণ্যে। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিদির দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই হিসাব বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৬১৫ কোটি ডলার। আমাদের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। একদায় বলা যেতে পারে যে, আমাদের অর্থনীতির চালিকা শক্তি তৈরি পোশাকখাত। সেই পোশাকখাতের একক বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া তৈতি পোশাকের গন্তব্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের এই ঘোষণা পর থেকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের রপ্তানিকারকেরা ভীষণ উদ্বেগের মধ্যে আছে। কিছু কিছু তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের পোশাকের ক্রয়াদেশ-এর উপর স্থগিতাদেশ হচ্ছে। এই অতিরিক্ত শুল্ক কে পরিশোধ করবে এই নিয়ে ইতিমধ্যে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে শীতল যুদ্ধ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় উইকিটেক্স বিডিনামে একটি বায়িং হাউসের তিনলাখ ডলারের এন্যাদেশ গত রবিবার স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। যদিও সে একাদেশের পণ্য উৎপাদনের জন্য ইতিমধ্যে কাপড়ও আমদানি করে ফেলেছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও দেড়লাখ টাকার আরেকটি ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। ইতিমধ্যে নিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে আগামী জুনের ক্রয়াদেশও স্থগিত করেছে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। জুলাই থেকে থেকে পণ্য পাঠাতে হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই আচরণের মাধ্যমে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটি কিন্তু ভয়াবহ রুপ নিতে পারে দেশের অর্থনীতিতে। ভারত ইতিমধ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কিন্তু আমরা কতটুকু প্রস্তুত সেট কিন্তু এখন ভাবতে হবে। ভারত আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে চায়। দরকষাকষি শুরু করে দিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চায় ভারত। আলোচনার কোন বিকল্প পথ খোলা নেই এই সময়ে। পোশাক শিল্পের বাজার ধরার জন্য অনেক দেশ বসে আছে। যদি কোন ভাবে এই বাজার হাত ছাড়া হয়ে যায় আমাদের অর্থনীতির কি অবস্থা হবে সেটি কিন্তু ভাবতে হবে। সময় এসেছে ভাবার। প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি নিয়ে নিজেই কাজ করছেন সেজন্য সাধুবাদ জানাই। কালক্ষেপন করার কোন সুযোগ নেই। রাজনীতির মূল লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে মানুষের মঙ্গলসাধন করা। সেই মঙ্গল সাধন করা যদি সম্ভব না হয় তাহলে কার জন্য রাজনীতি। দেশের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তৈরি পোশাক এর কাজ যদি ভারত, পাকিস্তান ও চীনের হাতে চলে যায় তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

বাংলাদেশ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে কতটুকু উদ্যোগী হবে সেটি এখন ভাবার বিষয়। অর্থনীতির ঢাকা এবং সাধারাণ মানুষের জীবনযাত্রাকে সচল রাখাটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের দেশের একটি সাধারণ জনগনের বড় অংশ পোশাকশিল্পের উপর নির্ভরশীল। একটি কারখানার সাথে জড়িত থাকে অনেক মানুষ তাদের কথা ভাবতে হবে। আমি অর্থশাস্ত্র তেমন বুঝি না কিন্তু এটা বুঝি দিন শেষে অর্থ না হলে জীবন চলে না। আবারও বলছি সমঝোতার জন্য চেষ্টা চলছে। কোন ভাবে সমাঝোতা হয়ে গেলে এই শিল্প বেহাত হবার সম্মননা শতভাগ। এই লেখাটি যখন শেষ পর্যায়ে তখন টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রধান গ্রোস সচিব জানিয়েছেন ইতিমধ্যে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে তিনমাসের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের শুদ্ধআরোপের বিষয়টি স্থগিত রাখার জন্য। প্রধান উপদেষ্টা পত্র দিয়েছেন এখন শুধু অপেক্ষার পালা। সরকার ও পোশাক শিল্প মালিক পক্ষকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে সকল ক্রয়াদেশ দেওয়া আছে সেগুলি যেন বাতিল না যায়। সবচেয়ে আশার বাণী প্রধান উপদেষ্টা নিজে উদ্যোগী হয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার পরের একটি ইতিবাচক উত্তর যেন আসে।

সবশেষে একটি কথা বলব একটু ভাবতে হবে সকলকে নিয়ে।