চয়ন পাল : ফেনীর বালীগাও ইউনিয়ন এর স্হায়ী বাসিন্দা আনোয়ার মিঞা ৫৩ বছর বয়সে পত্রিকা বিক্রি করছে ৩০বছর যাবৎ।ফেনী শহরের ট্রাঙ্ক রোডের ফুটপাতে দাড়িয়ে প্রতিদিনের মত ২০ ই জুলাই২০২৫ রবিবার প্রত্রিকা বিক্রি করছিলেন।সামনে গিয়ে দাড়ালাম কিছুক্ষণ পর তার পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। কাকা কেমন আছেন? মুচকি হেসে বলল ভালো আছি বাবা। পাশের দোকান থেকে দুই কাপ চা নিলাম। আমি আমার নিজের পরিচয় দিলাম।কাকা একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। জিজ্ঞেস করলাম এতো অবাক হওয়ার কি আছে কাকা? কাকা বলল প্রায় ৩০ বছর পত্রিকা বিক্রি করি কিন্তু কোন সংবাদপত্রের লোক আমারে এভাবে পরিচয় দেয় নাই।আমিও একটু অবাক হলাম। একটু মৃদুস্বরে কাকাকে বললাম আমি ক্ষুদ্র সংবাদ কর্মী এখনো শিখছি। আপনাকে দেখে মনে হলো আপনি অনেক আগে থেকেই পত্রিকা বিক্রি করেন।তাই কৌতুহলী হয়ে আপনার অভিজ্ঞতা জানার জন্য আপনার কাছে আসা। একপর্যায়ে শুরু হলো দুইজনের মাঝে প্রশ্ন উত্তর পর্ব নাম, বয়স,ঠিকানা তো জানলাম।প্রশ্ন: কাকা এবার বলেন তো পত্রিকা বিক্রি করার পেশায় কিভাবে আসলেন বা কবে থেকে শুরু করলেন? উত্তর : বড় ভাই এই কাজে নিয়ে এসেছে ১৯৯৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এ কাজ করে যাচ্ছি।প্রশ্ন: পত্রিকা কেমন বিক্রি হয় প্রতিদিন?উত্তর :গত ৫ই আগস্ট ২০২৪ এর পর রাজনীতি প্রেক্ষাপট পরিবর্তন এর ফলে মোটামুটি ভালই বিক্রি হচ্ছে। তবে পত্রিকা বিক্রি করে এখন আর সংসার চলে না।একটা সময় আমাদের কিছু নিয়মিত কাস্টমার ছিলো।
যাদেরকে সবসময় পত্রিকা দিয়ে আসতাম।ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতাম পত্রিকার রিসিভ করতাম এরপর বাড়ীতে, অফিসে,দোকানে সব জায়গায় পত্রিকা দিয়ে আসতাম অনেকের সকালের ঘুম ভাঙতো আমার দেয়া পত্রিকা হাতে পাওয়ার পর।ঐ সময় পত্রিকা যেমন কম ছিল তেমনি গ্রাহক চাহিদা ও ছিল বেশি। এখন তো মোবাইলে মোবাইলে সবাই নিউজ নিয়ে নেয় অনলাইন নিউজ হওয়ার পর থেকে আমাদের পত্রিকা বিক্রি অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে।আমি খানিকটা বুঝতে পারলাম উনি অনেক কষ্ট থেকে কথাগুলো বলেছে।বরাবরের মত আমার প্রশ্ন:তাহলে পত্রিকা বিক্রি করেন কেন?উত্তর : ভালোবাসা থেকে এ এক অন্যরকম ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা অনেকবার চেষ্টা করেছি ছেড়ে দিতে কারন যে কাজ করে টিকমত সংসারই চলে না তার উপর দুইজন ছেলের পড়াশোনা খরচ চালাইতে হিমসিম খেয়ে যাই। তবে আমি এর পাশাপাশি কৃষি কাজও করি বলে হয়তো চলে যায় গরীবের সংসার।সবকিছুর পরও এ কাজে না আসলে আমার দিনই ভালো কাটে না।প্রশ্ন:যে দৈনিক জাতীয় পত্রিকা গুলো বিক্রি করেন তাদের সম্পাদক বা স্হানীয় কোন সংগঠন থেকে কি কোন সহযোগিতা পান?উত্তর : তেমন কিছু পাই না বছরে একবার ঈদের সময় ফেনী প্রেসক্লাব থেকে সামান্য কিছু পাই।আসলে আমরা যারা পত্রিকা বিক্রি করি তাদের কথা কেউ ভাবে না।বুঝতে পারলাম কাকার মনে কষ্ট জমে থাকার কারন।
আর কাকার কাছ থেকে পেলাম সুন্দর একটি অভিজ্ঞতা। আমরা যে যার প্রতিষ্ঠানে কাজ করি না কেন শুধু অর্থের বিনিময়ে কিংবা স্বার্থ উদ্ধারে নিজেকে বিক্রি করে ফেলাতে সব সুখ নয়।এমন কিছু কাজ করে যেতে হয় ভালোবাসা থেকে যে কর্মই আমাদেরকে মানুষ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিবে মানুষের মাঝে। সত্যি বলতে একদিন হারিয়ে যাবে আনোয়ার মিঞার মত অসংখ্য পত্রিকা বিক্রেতা।তবে এখনো যে পত্রিকা গুলো ভালো বিক্রি হয় তাদের সম্পাদকদের পক্ষ থেকে কিংবা স্হানীয় সংবাদমাধ্যম গুলোর যে সংগঠন গুলো আছে তাদের একটু সহযোগিতা হাসি ফুটাতে পারে আনোয়ার মিঞার মত অসংখ্য পত্রিকা বিক্রেতাদের মুখে।