এম.এইচ আকাশ মাহমুদ মোল্লা :
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইসরায়েল ও ইরানের সাম্প্রতিক যুদ্ধ। দীর্ঘদিনের লুকোচুরি সংঘর্ষকে পেছনে ফেলে এবার সরাসরি সামরিক হামলায় জড়িয়ে পড়েছে এই দুটি শক্তিধর দেশ। একদিকে ইরান দাবি করছে সে ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশ্বের পক্ষে লড়ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে তারা আত্মরক্ষার্থে বাধ্য হয়েছে প্রতিরোধে। এই সংঘর্ষ কেবল দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এর প্রতিক্রিয়া পড়ছে পুরো মুসলিম বিশ্বজুড়ে।বিশ্বজুড়ে মুসলিম দেশগুলো এই যুদ্ধকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই সংঘর্ষ দীর্ঘস্থায়ী হলে তা মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিতে পারে। এদিকে, মুসলিম বিশ্বের একাংশ ইরানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও, বেশ কয়েকটি আরব দেশ কৌশলগত কারণে এখনো নিরব ভূমিকা পালন করছে, কেউ কেউ আবার পরোক্ষভাবে ইসরায়েলপন্থী অবস্থানও নিচ্ছে। এর ফলে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আন্তর্জাতিক মহলে।অন্যদিকে এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বের জ্বালানি বাজারে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
হরমুজ প্রণালীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে তেল ও গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হবে, যার প্রভাব সরাসরি অর্থনৈতিকভাবে পড়বে মুসলিমপ্রধান উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর। যুদ্ধের আশঙ্কায় বিনিয়োগ কমছে, শেয়ারবাজারে ধস দেখা দিয়েছে, এবং খাদ্য ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। এই অবস্থায় গরিব ও সংকটাপন্ন মুসলিম দেশগুলো পড়েছে গভীর বিপদে।তবে এই সংকট শুধু রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নয়, এটি আদতে মুসলিম জাতির আত্মপরিচয়েরও সংকট। যুগের পর যুগ মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যের ডাক দেওয়া হলেও বাস্তবতায় তা আজও অধরাই রয়ে গেছে।
ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ সেই দুর্বলতাকেই আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এখন সময় এসেছে মুসলিম নেতারা পারস্পরিক বিরোধ ভুলে একটি যৌথ কণ্ঠে কথা বলার। সংঘাত নয়, দরকার শান্তি ও সহাবস্থানের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী কূটনৈতিক অবস্থান তৈরি করা।বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যুদ্ধ থেকে মুসলিম দেশগুলোর শিক্ষা নেওয়া উচিত—কীভাবে তারা নিজেদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় প্রস্তুত হতে পারে। শুধু আবেগ নয়, প্রয়োজন দূরদর্শী নেতৃত্ব, বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ, ও আন্তর্জাতিক নীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ। ইসলাম শান্তির ধর্ম, আর মুসলিম বিশ্বের দায়িত্ব হলো সেই শান্তিকে টিকিয়ে রাখা—সহিংসতা বাড়িয়ে নয়, বরং বন্ধ করে।
শেষমেশ, প্রশ্ন একটাই এই যুদ্ধের পর মুসলিম বিশ্ব কোন পথে হাঁটবে? তারা কি বিভাজনের পথে আগাবে, নাকি নতুন করে ঐক্যের আলোর সন্ধান করবে? সময়ই তার জবাব দেবে।