০৬:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাজু আলীম :

ইউসিবিকে আধুনিক, টেকসই ও গ্রাহককেন্দ্রিক ব্যাংকে রূপান্তর করতে চাই: শরীফ জহীর, চেয়ারম্যান, ইউসিবি পিএলসি . ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অনন্ত গ্রুপ

  • প্রকাশিত ০৬:২৩:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
  • ৬৪ বার দেখা হয়েছে

কথায় বলে, বাস্তবতা কল্পনার চেয়েও অদ্ভুত। জীবনের উত্থান পতন আর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে মানুষ এমন স্থানে দাঁড়ায় যা হয়তো সংকল্পের চেয়েও অধিক। বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন হুমায়ুন জহীর। ছিলেন অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ১৯৯৩ সালে ঢাকায় নিজ বাড়ির সামনে হত্যা করা হুমায়ুন জহীরকে। ঋণ খেলাপীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবার জন্য এই করুণ পরিনতি বরণ বরতে হয় তাঁকে।
ছেলে শরীফ জহীরের বয়স তখস ১৬ বছর। মা কামরুন নাহার ব্যবসার হাল ধরেন। এলিফ্যান্ট রোডের নিজস্ব ভবনে অনন্ত অ্যাপারেলসের ব্যবসাটি রেখে অন্য ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেন। দেশের বাইরে পড়াশোনা করেন হুমায়ুন জহীরের পুত্র শরীফ জহীর। দেশের বাইরে পড়াশোনা শেষে ব্যবসায়ে দীর্ঘ পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ে শরীফ জহীর উঠে আসেন বাংলাদেশের অর্থনীতির সর্বোচ্চ অবস্থানে।
৫ আগস্ট দেশে গণঅভ্যুত্থানের পর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রথম চেয়ারম্যান হুমায়ুন জহীরকে হত্যার নেপথ্যে থাকা ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এবং তারই পুত্র সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবারের কর্তৃত্বের অবসান হলে বেসরকারি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হন শেয়ারধারী পরিচালক শরীফ জহীর। একই সাথে তিনি তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
পুরো ঘটনাটি গল্পের মতো শোনালেও এটি নিছক কোন গল্প নয়। বাবা মারা যাবার পর জীবনের এই পুরো অধ্যায়টি সম্পর্কে ইউসিবি ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান তরুন কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব শরীফ জহীর বলেন, আমাদের ভাইবোনদের সবার সফলতার কারণ মা। আমি বাইরে থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে এসেই ব্যবসায় নামি। আমরা প্রতিদিন ১৩-১৪ ঘণ্টা করেও কাজ করেছি।
দেশে ফিরে এসে বাংলাদেশের অর্থনীতি, ইউসিবি ব্যাংকের বর্মান পরিস্থিতি। বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি কথা বলেন গণমাধ্যমে।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর ইউসিবির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাবার পর বাংলাদেশের ডায়নামিক এই উদ্যোক্তা ব্যাংকটির অবস্থা সম্পর্কে বলেন, ইউসিবি ব্যাংক, অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে ৪২ বছরে পা দিয়েছে। এ পথচলায় ভালো-খারাপ উভয় রকম অভিজ্ঞতাই রয়েছে। তবে ইতিবাচক অভিজ্ঞতাগুলোকেই আমরা স্মরণ করতে চাইব। নানা ঝড়-ঝঞ্ঝার পরও ইউসিবি এখনো দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোর একটি। এর পেছনে রয়েছে গ্রাহকদের অবিচল আস্থা। আমি মনে করি, আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো বিস্তৃত শাখা নেটওয়ার্ক ও নিবেদিত কর্মী বাহিনী। আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সব ধরনের সেবা দেয়ার সক্ষমতাও আমাদের একটি বড় অর্জন।
দেশে ফিরে এসে দেখেছি, ইউসিবির অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয়নি। গভর্ন্যান্স ও রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তবে আমি এটাও লক্ষ করেছি, এ ব্যাংকে অসংখ্য প্রতিশ্রুতিশীল, পরিশ্রমী কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন; যাদের নিয়ে আমরা আগামীর পথচলা আরো শক্তিশালী করতে পারি। তবে অতীতের বিষয় নিয়ে পড়ে না থেকে আমরা ভবিষ্যতের দিকে দৃঢ়ভাবে মনোনিবেশ করছি। সুশাসন বজায় রাখতে, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং অবিচল ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০১৫ সাল-পরবর্তী সময় থেকে এ ব্যাংকে নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে অনেক প্রতিবেদন বের হয়েছে। আপনাদের পত্রিকায়ও হয়েছে। এ নিয়ে আমার স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে—ব্যাংক খাতে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না। বিগত সময়ে যেসব অনিয়ম হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় প্রতিটি অনিয়ম তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। ব্যক্তিবিশেষের দিকে মনোযোগ না দিয়ে ব্যাংকের উন্নতির ওপর মনোযোগ দিচ্ছি। এটাই অডিটর এবং নিয়ন্ত্রকদের কাজ। ইউসিবিকে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও টেকসই প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে আমি ও আমার টিম দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
বর্তমানে ইউসিবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংকটিতে সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমেই আমরা করপোরেট গভর্ন্যান্স কাঠামো পুনর্গঠন করেছি। পরিচালনা পর্ষদকে করেছি আরো কার্যকর ও স্বচ্ছ। আমাদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামোকে আমরা নতুন করে সাজিয়েছি। ক্রেডিট ঝুঁকি দ্রুত চিহ্নিতের জন্য চালু করেছি উন্নত বিশ্লেষণ ব্যবস্থা। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ এবং অডিট ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছি। আমরা মেধাভিত্তিক নিয়োগ ও পদোন্নতির সংস্কৃতি চালু করেছি, যাতে পেশাদারত্ব ও দক্ষতার মূল্যায়ন হয়। ডিজিটাল রূপান্তরও আমাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে।
দেশের ব্যাংকিং খাতে সার্বিক সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কেও কথা বলেন শরীফ জহীর। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে সংস্কার এখন সময়ের দাবি। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও প্রযুক্তিনির্ভরতা—এ তিনটি বিষয়ের ওপর জোর না দিলে খাতটি এগোবে না। আমি এ সংস্কার প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাই এবং মনে করি, এটি ব্যাংক খাতকে আরো মজবুত, স্থিতিশীল ও জনভিত্তিক করে তুলবে। তবে সংস্কার যেন বাস্তবসম্মত হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকেও নজর দেয়া উচিত।
ইউসিবির খেলাপি ঋণ, মুনাফা এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ব্যাংকটির তরুণ চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংকিং শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইউসিবির অবস্থান শক্তিশালী রয়েছে। আমরা একটি সুনির্দিষ্ট কৌশল নিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি—ক্রেডিট ঝুঁকি কমানো, পুরনো খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন এবং ডেটা-চালিত টুলের মাধ্যমে ঋণ প্রদান বৃদ্ধি করা। একই সঙ্গে মানসম্পন্ন আমানত বৃদ্ধি করছি, তহবিল বহুমুখী করছি এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়াচ্ছি। সাম্প্রতিক আমানত বৃদ্ধি এবং নতুন অ্যাকাউন্টগুলো আমাদের প্রতি আস্থারই প্রতিফলন। আমি নিশ্চিত যে আমরা সঠিক পথে আছি এবং স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি আমাদের হাতের নাগালের মধ্যেই রয়েছে।
এ ছাড়াও ইউসিবিকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়েও নিজের মতামত গণমাধ্যমে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমার লক্ষ্য ইউসিবিকে একটি আধুনিক, টেকসই ও গ্রাহককেন্দ্রিক ব্যাংকে রূপান্তর করা। আমরা প্রযুক্তিনির্ভর সেবা বিস্তারে কাজ করছি—বিশেষ করে ডিজিটাল ব্যাংকিং, এআই-ভিত্তিক সলিউশন ও সাইবার সিকিউরিটির দিকে নজর দিচ্ছি। সম্প্রতি আমরা বাংলাদেশের প্রথম মাইক্রোসার্ভিসভিত্তিক ওপেন এপিআই ব্যাংকিং প্লাটফর্ম চালু করেছি, যা এফসিইউবিএস ১৪.৭-এর সর্বশেষ সংস্করণ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা বিশ্বের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠান। এ মাইলফলক ডিজিটাল পণ্য এবং পরিষেবার একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেবে, যা ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎকে সমৃদ্ধ করবে। এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে অংশ নেয়া এবং পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং সেবা চালুও আমাদের লক্ষ্য। আমি চাই ইউসিবি শুধু একটি ব্যাংক নয়, বরং একটি আস্থার প্রতীক হয়ে উঠুক; যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবিচ্ছেদ্য অংশীদার হবে।

রাজু আলীম
কবি, সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

Tag :
জনপ্রিয়

আপাতত তেহরানের বিজয় স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে ইসরাইলিরা

রাজু আলীম :

ইউসিবিকে আধুনিক, টেকসই ও গ্রাহককেন্দ্রিক ব্যাংকে রূপান্তর করতে চাই: শরীফ জহীর, চেয়ারম্যান, ইউসিবি পিএলসি . ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অনন্ত গ্রুপ

প্রকাশিত ০৬:২৩:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

কথায় বলে, বাস্তবতা কল্পনার চেয়েও অদ্ভুত। জীবনের উত্থান পতন আর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে মানুষ এমন স্থানে দাঁড়ায় যা হয়তো সংকল্পের চেয়েও অধিক। বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন হুমায়ুন জহীর। ছিলেন অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ১৯৯৩ সালে ঢাকায় নিজ বাড়ির সামনে হত্যা করা হুমায়ুন জহীরকে। ঋণ খেলাপীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবার জন্য এই করুণ পরিনতি বরণ বরতে হয় তাঁকে।
ছেলে শরীফ জহীরের বয়স তখস ১৬ বছর। মা কামরুন নাহার ব্যবসার হাল ধরেন। এলিফ্যান্ট রোডের নিজস্ব ভবনে অনন্ত অ্যাপারেলসের ব্যবসাটি রেখে অন্য ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেন। দেশের বাইরে পড়াশোনা করেন হুমায়ুন জহীরের পুত্র শরীফ জহীর। দেশের বাইরে পড়াশোনা শেষে ব্যবসায়ে দীর্ঘ পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ে শরীফ জহীর উঠে আসেন বাংলাদেশের অর্থনীতির সর্বোচ্চ অবস্থানে।
৫ আগস্ট দেশে গণঅভ্যুত্থানের পর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রথম চেয়ারম্যান হুমায়ুন জহীরকে হত্যার নেপথ্যে থাকা ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এবং তারই পুত্র সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবারের কর্তৃত্বের অবসান হলে বেসরকারি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হন শেয়ারধারী পরিচালক শরীফ জহীর। একই সাথে তিনি তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
পুরো ঘটনাটি গল্পের মতো শোনালেও এটি নিছক কোন গল্প নয়। বাবা মারা যাবার পর জীবনের এই পুরো অধ্যায়টি সম্পর্কে ইউসিবি ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান তরুন কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব শরীফ জহীর বলেন, আমাদের ভাইবোনদের সবার সফলতার কারণ মা। আমি বাইরে থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে এসেই ব্যবসায় নামি। আমরা প্রতিদিন ১৩-১৪ ঘণ্টা করেও কাজ করেছি।
দেশে ফিরে এসে বাংলাদেশের অর্থনীতি, ইউসিবি ব্যাংকের বর্মান পরিস্থিতি। বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি কথা বলেন গণমাধ্যমে।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর ইউসিবির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাবার পর বাংলাদেশের ডায়নামিক এই উদ্যোক্তা ব্যাংকটির অবস্থা সম্পর্কে বলেন, ইউসিবি ব্যাংক, অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে ৪২ বছরে পা দিয়েছে। এ পথচলায় ভালো-খারাপ উভয় রকম অভিজ্ঞতাই রয়েছে। তবে ইতিবাচক অভিজ্ঞতাগুলোকেই আমরা স্মরণ করতে চাইব। নানা ঝড়-ঝঞ্ঝার পরও ইউসিবি এখনো দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোর একটি। এর পেছনে রয়েছে গ্রাহকদের অবিচল আস্থা। আমি মনে করি, আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো বিস্তৃত শাখা নেটওয়ার্ক ও নিবেদিত কর্মী বাহিনী। আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সব ধরনের সেবা দেয়ার সক্ষমতাও আমাদের একটি বড় অর্জন।
দেশে ফিরে এসে দেখেছি, ইউসিবির অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয়নি। গভর্ন্যান্স ও রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তবে আমি এটাও লক্ষ করেছি, এ ব্যাংকে অসংখ্য প্রতিশ্রুতিশীল, পরিশ্রমী কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন; যাদের নিয়ে আমরা আগামীর পথচলা আরো শক্তিশালী করতে পারি। তবে অতীতের বিষয় নিয়ে পড়ে না থেকে আমরা ভবিষ্যতের দিকে দৃঢ়ভাবে মনোনিবেশ করছি। সুশাসন বজায় রাখতে, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং অবিচল ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০১৫ সাল-পরবর্তী সময় থেকে এ ব্যাংকে নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে অনেক প্রতিবেদন বের হয়েছে। আপনাদের পত্রিকায়ও হয়েছে। এ নিয়ে আমার স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে—ব্যাংক খাতে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না। বিগত সময়ে যেসব অনিয়ম হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় প্রতিটি অনিয়ম তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। ব্যক্তিবিশেষের দিকে মনোযোগ না দিয়ে ব্যাংকের উন্নতির ওপর মনোযোগ দিচ্ছি। এটাই অডিটর এবং নিয়ন্ত্রকদের কাজ। ইউসিবিকে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও টেকসই প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে আমি ও আমার টিম দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
বর্তমানে ইউসিবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংকটিতে সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমেই আমরা করপোরেট গভর্ন্যান্স কাঠামো পুনর্গঠন করেছি। পরিচালনা পর্ষদকে করেছি আরো কার্যকর ও স্বচ্ছ। আমাদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামোকে আমরা নতুন করে সাজিয়েছি। ক্রেডিট ঝুঁকি দ্রুত চিহ্নিতের জন্য চালু করেছি উন্নত বিশ্লেষণ ব্যবস্থা। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ এবং অডিট ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছি। আমরা মেধাভিত্তিক নিয়োগ ও পদোন্নতির সংস্কৃতি চালু করেছি, যাতে পেশাদারত্ব ও দক্ষতার মূল্যায়ন হয়। ডিজিটাল রূপান্তরও আমাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে।
দেশের ব্যাংকিং খাতে সার্বিক সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কেও কথা বলেন শরীফ জহীর। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে সংস্কার এখন সময়ের দাবি। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও প্রযুক্তিনির্ভরতা—এ তিনটি বিষয়ের ওপর জোর না দিলে খাতটি এগোবে না। আমি এ সংস্কার প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাই এবং মনে করি, এটি ব্যাংক খাতকে আরো মজবুত, স্থিতিশীল ও জনভিত্তিক করে তুলবে। তবে সংস্কার যেন বাস্তবসম্মত হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকেও নজর দেয়া উচিত।
ইউসিবির খেলাপি ঋণ, মুনাফা এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ব্যাংকটির তরুণ চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংকিং শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইউসিবির অবস্থান শক্তিশালী রয়েছে। আমরা একটি সুনির্দিষ্ট কৌশল নিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি—ক্রেডিট ঝুঁকি কমানো, পুরনো খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন এবং ডেটা-চালিত টুলের মাধ্যমে ঋণ প্রদান বৃদ্ধি করা। একই সঙ্গে মানসম্পন্ন আমানত বৃদ্ধি করছি, তহবিল বহুমুখী করছি এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়াচ্ছি। সাম্প্রতিক আমানত বৃদ্ধি এবং নতুন অ্যাকাউন্টগুলো আমাদের প্রতি আস্থারই প্রতিফলন। আমি নিশ্চিত যে আমরা সঠিক পথে আছি এবং স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি আমাদের হাতের নাগালের মধ্যেই রয়েছে।
এ ছাড়াও ইউসিবিকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়েও নিজের মতামত গণমাধ্যমে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমার লক্ষ্য ইউসিবিকে একটি আধুনিক, টেকসই ও গ্রাহককেন্দ্রিক ব্যাংকে রূপান্তর করা। আমরা প্রযুক্তিনির্ভর সেবা বিস্তারে কাজ করছি—বিশেষ করে ডিজিটাল ব্যাংকিং, এআই-ভিত্তিক সলিউশন ও সাইবার সিকিউরিটির দিকে নজর দিচ্ছি। সম্প্রতি আমরা বাংলাদেশের প্রথম মাইক্রোসার্ভিসভিত্তিক ওপেন এপিআই ব্যাংকিং প্লাটফর্ম চালু করেছি, যা এফসিইউবিএস ১৪.৭-এর সর্বশেষ সংস্করণ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা বিশ্বের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠান। এ মাইলফলক ডিজিটাল পণ্য এবং পরিষেবার একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেবে, যা ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎকে সমৃদ্ধ করবে। এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে অংশ নেয়া এবং পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং সেবা চালুও আমাদের লক্ষ্য। আমি চাই ইউসিবি শুধু একটি ব্যাংক নয়, বরং একটি আস্থার প্রতীক হয়ে উঠুক; যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবিচ্ছেদ্য অংশীদার হবে।

রাজু আলীম
কবি, সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব